গত বছরের শেষে নভেল করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কাজ চলছে। কয়েকটি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে এবং কয়েক মাসের মধ্যে ফলাফল পাওয়ারও আশা করা হচ্ছে। তবে এ অগ্রগতিতে প্রাপ্তবয়স্করা জড়িত থাকলেও পরীক্ষামূলক কোনো ভ্যাকসিনের ট্রায়ালেই শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল না। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আমেরিকান গণমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার শিশুদের ওপর ভ্যাকসিনের ট্রায়াল নিয়ে শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসন অ্যান্ড জনসনকে জিজ্ঞাসা করেছিল। চারটি সংস্থাই জানিয়েছে, তারা এটা করার পরিকল্পনা করছে। তবে শিশুদের ওপর ভ্যাকসিনগুলো কবে নাগাদ পরীক্ষা করা হতে পারে, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি সংস্থাগুলো।
চারটি সংস্থাই প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর তাদের ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়াল পরিচালনা করছে। মডার্নার প্রধান করপোরেট বিষয়ক কর্মকর্তা রে জর্ডান বিজনেস ইনসাইডারকে বলেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর এ বছরের শেষ নাগাদ শিশুদের ওপর আমাদের ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা করা শুরু হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকায় শিশুদের ওপর পরীক্ষার সময়, প্রটোকল বা অর্থায়ন নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।
জনসন অ্যান্ড জনসনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পল স্টোফেলস বলেছেন, জেঅ্যান্ডজে শিশুদের ওপর ট্রায়াল পরিচালনা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর পরীক্ষায় নিরাপদ প্রমাণিত হওয়ার পর এ বছরের শেষদিকে শিশুদের ওপর ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা করা হবে।
ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকরা কীভাবে ও কখন শিশুদের ওপর নভেল করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে, সে সম্পর্কে তথ্যের অভাবের বিষয়টি কিছু শিশু বিশেষজ্ঞ ও ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার চিলড্রেনস হেলথকেয়ারের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ইভান অ্যান্ডারসন বলেছেন, এখন আমি বেশ চিহ্নিত, কারণ স্কুলগুলোতে আগামী শিক্ষা বছরের শুরুতে শিশুদের জন্য কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না।
বিজনেস ইনসাইডার ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের জিজ্ঞাসা করেছিল যে তারা শিশুদের ওপর ট্রায়াল পরিচালনার জন্য সরকারি তহবিলের প্রত্যাশা করে কিনা। কোনো সংস্থায় সরাসরি এ প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। যদিও অ্যাস্ট্রাজেনেকার একজন মুখপাত্র বলেছেন, মার্কিন সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তির মধ্যে শিশুদের ওপর ট্রায়াল পরিচালনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সাধারণভাবে গবেষকরা সবল জনগোষ্ঠী যেমন তরুণ ও সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর আগে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু করে এবং সেটা নিরাপদ প্রমাণিত হলে পরীক্ষাটি ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী যেমন বয়স্ক ও অন্যান্য রোগে অসুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিস্তৃত করা হয়।
শিশুদের মধ্যে সাধারণত বয়স্কদের মতো কভিড-১৯-এর মারাত্মক প্রভাব দেখা যায় না, যদিও মহামারী মোকাবেলায় শিশুদের জন্য একটি ভ্যাকসিন পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ফাইজারের মুখপাত্র বলেছেন, কভিড-১৯-এ সংক্রমিত শিশুরা লক্ষণহীন, লক্ষণযুক্ত এবং কখনো কখনো গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া শিশুরা ভাইরাসটি ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে।
সায়েন্স অ্যালার্ট
