কারিগরি শিক্ষকদের মান নিয়ে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা

পাঠদানে দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণে অধিক জোর দিতে হবে

সরকার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোগত দুর্বলতা মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাবে পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। একটি গবেষণার বরাত দিয়ে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারিগরি শিক্ষকদের মান নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী। শিক্ষার গুণগত মান অনেকাংশেই নির্ভর করে শিক্ষকের যোগ্যতার ওপর। যদিও শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে নিয়োগে অনিয়ম নিয়মিত প্রশিক্ষণের অভাবে তাদের সে যোগ্যতা দক্ষতা হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ অত্যন্ত অপ্রতুল। ১৯৬৬ সালে অল্প কয়েকটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তির আসন সংখ্যা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ জনই আছে। ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অস্তিত্ব এখন আর নেই বলে মনে হয়। অথচ জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে জোরেশোরে মাঠে নামলেই বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের প্রয়োজন হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলার জন্য শিক্ষকরাই যদি তৈরি হতে না পারেন, তাহলে তারা কীভাবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলবেন। এশিয়ার প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশ জায়ান্ট চীন সিঙ্গাপুর নিজেদের কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষার চমত্কার অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি ধরনের কাজের সামাজিক স্বীকৃতিরও ব্যবস্থা করতে পেরেছে। সেজন্য অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি সমাজে কারিগরি কাজের কর্মীদের মূল্যায়নের বিষয়টির ওপরও জোর দিতে হবে। 

কারিগরি শিক্ষার জন্য পৃথক শিক্ষা বোর্ড গঠন হলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রের স্বল্পতা, শিক্ষকদের অদক্ষতাসহ নানা কারণে মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। প্রযুক্তিগত শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও অপ্রতুল। ফলে তরুণরা উচ্চশিক্ষার সনদ অর্জনে সফল হলেও কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষা, দক্ষতা কর্মসংস্থান নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। জাতির কর্মদক্ষতা আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে হলে গুণগত মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। বৈশ্বিক স্থানীয় মানদণ্ডে একটি স্কিল ম্যাপ তৈরি করতে হবে এবং চাহিদা অনুসারে দক্ষতার ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করতে হবে। নতুন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বিদ্যমান মুখস্থনির্ভর শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন আনতে হবে এবং এর পরিবর্তে দক্ষতানির্ভর ব্যবহারিক কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা স্তরে দক্ষতানির্ভর কোর্স চালু করতে হবে এবং শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য  ছিল দক্ষ জনবল তৈরি। এখন দেখা যাচ্ছে, সাধারণ কোর্স করা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কারিগরি কোর্স করা শিক্ষার্থীদের দক্ষতার মাত্রাই আলাদা করা যাচ্ছে না। মূলত মানসম্মত শিক্ষকের অনুপস্থিতি পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে কারিগরি শিক্ষার সুফল মিলছে না। শিক্ষকের জ্ঞানগত দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরাও দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে পারছেন না।

বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে খণ্ডকালীনভাবে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আমরা জনশক্তি রফতানিতে এখনো যেমন অদক্ষ ক্যাটাগরিতে রয়েছি, তেমনি দেশে দক্ষ জনবলের অভাবে বিদেশ থেকে লোক আনছি। এজন্য জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কারিগরি শিক্ষার মডেল আমাদের অনুসরণ করতে হবে। জার্মানিতে কারিগরি শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ। দেশে শিক্ষার হার অন্তত ৬০ শতাংশে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর উন্নতির মূলে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা। দেশকে সত্যিকার অর্থে এগিয়ে যেতে হলে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন