সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার সমর্থনের দাবি আনোয়ার ইব্রাহিমের

বণিক বার্তা ডেস্ক

মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন শেষই হচ্ছে না। দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম দাবি করেছেন, বর্তমানে তিনি নতুন সরকার গঠনের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। কারণ পার্লামেন্টের বেশির ভাগ সদস্যের সমর্থন রয়েছে তার ওপর। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দাবি, তিনি এখনো আইনসংগতভাবে মালয়েশিয়ার সরকারপ্রধান। যতদিন না আনোয়ার তার দাবির অনুকূলে প্রমাণ দিতে পারছেন, ততদিন তার প্রধানমন্ত্রিত্ব অটুট থাকবে। খবর এএফপি।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার ইব্রাহিম দাবি করেন, পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন দলের সদস্য মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের নেতৃত্বে নাখোশ। বেশ কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্য বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আইনপ্রণেতাদের সমর্থন হারানোর মাধ্যমে কার্যত ইয়াসিন প্রশাসনের পতন হয়েছে। অন্যদিকে পার্লামেন্ট সদস্যদের সমর্থন পাওয়ার অর্থ হলো জনগণেরও সমর্থন পাওয়া। অর্থাৎ তিনি যে সরকার গঠন করতে পারবেন, তার প্রতি জনগণের সমর্থন রয়েছে।

অবশ্য আনোয়ার ইব্রাহিম যতটা সরলভাবে নিজেকে সরকারপ্রধানের পদে বসাচ্ছেন, বিষয়টা তত সহজ নয়। কারণ ঠিক কতজন পার্লামেন্ট সদস্য তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, তা উল্লেখ করতে পারেননি তিনি। আর ক্ষমতায় যেতে হলে তাকে অবশ্যই ২২২ জন আইনপ্রণেতার সিংহভাগের সমর্থন পেতে হবে। শুধু সমর্থন থাকলেই চলবে না, মালয়েশিয়ার রাজার কাছে এর সপক্ষে প্রমাণও হাজির করতে হবে। মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা রয়েছে রাজার হাতে।

আনোয়ার ইব্রাহিম শুধু যে তার অনুসারী পার্লামেন্ট সদস্যের সংখ্যা প্রকাশ করতেই ব্যর্থ হয়েছেন, তা নয়। তিনি এখন পর্যন্ত রাজার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে পারেননি। রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ 

করে তার সামনে প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারলে তবেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবি জানাতে পারবেন।

দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা জানান, মঙ্গলবার তার রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল। কিন্তু রাজা কুয়ালালামপুরে জাতীয় হূদরোগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় শেষ মুহূর্তে সাক্ষাৎ বাতিল করা হয়েছে।

যেহেতু রাজার সামনে নিজের সমর্থনের বিষয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি, তাই তার দাবি খুব বেশি চিন্তায় ফেলতে পারছে না ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে। তিনি আনোয়ারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, যান, পারলে সঠিক প্রক্রিয়ায় প্রমাণ করুন যে আপনি প্রধানমন্ত্রী পদের উপযুক্ত দাবিদার। ইয়াসিন বলেন, যতক্ষণ না তার দাবি প্রমাণ হচ্ছে, ততক্ষণ আমার সরকার বহাল তবিয়তে থাকবে। আইনসংগতভাবে আমিই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

আসলে ইয়াসিনপন্থী রাজনৈতিক নেতারা কেউই আনোয়ার ইব্রাহিমের দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না। তাদের কাছে আনোয়ারের তত্পরতা কেবলই সস্তা প্রচারণা ২৬ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সাবাহে নির্বাচন রয়েছে। ইয়াসিন সরকারের জনপ্রিয়তা নিরূপণে নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখেই আনোয়ার বাগাড়ম্বরের তত্পরতা চালাচ্ছেন বলে ইয়াসিন শিবিরের দাবি।

ইয়াসিনের কোয়ালিশনের সমর্থনকারী রাজনৈতিক দলগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তার (ইব্রাহিমের) সর্বশেষ পদক্ষেপের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে তিনি অত্যন্ত লোভী ক্ষমতালিপ্সু একজন ব্যক্তি। দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথাই নেই। এমনকি কভিড-১৯-এর সঙ্গে লড়াইরত মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি চিন্তিত নন।

ইয়াসিন প্রশাসনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শিল্পমন্ত্রী আজমিন আলী আরো কঠোর ভাষায় আনোয়ার ইব্রাহিমকে আক্রমণ করেছেন। তার ভাষায় আনোয়ার হলেন চরম মিথ্যাবাদী রাজনৈতিকভাবে বিকারগ্রস্ত একজন মানুষ।

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের সরকারকে বর্তমানে বেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। কঠোর লকডাউনের কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বাজে সংকোচন প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। অবশ্য কঠোর লকডাউনের সুফল মিলেছে। মালয়েশিয়ায় কভিড-১৯ রোগী শনাক্তের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কমে এসেছে। মহামারী বিস্তার প্রতিরোধে সাফল্যের জন্য জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছে মুহিউদ্দিন ইয়াসিন সরকার। যার ফল মিলেছে গত মাসে পরিচালিত এক জরিপে, যাতে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের জনসমর্থন ছিল ৬৯ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন