২০২০-২১ খরিফ মৌসুম

ভারতে কৃষিপণ্যের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিদায়ী ২০১৯-২০ মৌসুমের শেষের দিকের বেশির ভাগ সময় ভারতের কৃষিপ্রধান এলাকাগুলো প্রতিকূল আবহাওয়ার বিরুদ্ধে লড়েছে। অতিবৃষ্টি দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় নাস্তানাবুদ হয়েছেন ভারতীয় কৃষকরা। ব্যাহত হয়েছে কৃষি উৎপাদন সরবরাহ। এর জের ধরে বাজারে চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন শস্য কৃষিপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। তবে ২০২০-২১ মৌসুমে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। পরিবর্তিত আবহাওয়া পরিস্থিতি মৌসুমে ভারতজুড়ে শস্য কৃষিপণ্যের বাম্পার ফলনের কারণ হতে পারে। দেশটির কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এনডিটিভি।

ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে ২০২০-২১ মৌসুমের জন্য শস্য কৃষিপণ্য উৎপাদনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে পূর্বাভাস শুধু খরিফ মৌসুমের জন্য দেয়া হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত জুলাই শুরু হওয়া ২০২০-২১ মৌসুমে (খরিফ) ভারতে ধান, ডাল, তেলবীজসহ সব ধরনের শস্য এবং আখ, তুলা, পাটের মতো কৃষিপণ্যের বাম্পার ফলন হতে পারে। বাড়তে পারে উৎপাদন।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ খরিফ মৌসুমে ভারতে খাদ্যশস্যের সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ১৪ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টনে। দেশটিতে গত পাঁচ মৌসুমে (২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ মৌসুম পর্যন্ত) উৎপাদিত খাদ্যশস্যের গড়ের তুলনায় এবারের খরিফ মৌসুমে উৎপাদন বাড়তে পারে ৯৮ লাখ ৩০ হাজার টন।

চীনের পর ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ। খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দেশটি। ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ খরিফ মৌসুমে দেশটিতে সব মিলিয়ে ১০ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত পাঁচ মৌসুমের গড়ের তুলনায় এবারের খরিফ মৌসুমে ভারতে চাল উৎপাদন বাড়তে পারে ৬৭ লাখ টন। গত পাঁচ খরিফ মৌসুমে দেশটিতে গড়ে কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টন ধান উৎপাদন হয়েছিল।

একই চিত্র দেখা যেতে পারে ডাল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও। ২০২০-২১ খরিফ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে ৯৩ লাখ ১০ হাজার টন ডাল (মুগ, মসুর, ছোলা, অড়হর, মাষকলাইসহ বিভিন্ন জাতের) উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়। গত খরিফ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে ৭৭ লাখ ২০ হাজার টন বিভিন্ন জাতের ডাল উৎপাদন হয়েছিল। সেই হিসাবে এক মৌসুমের ব্যবধানে দেশটিতে ডাল উৎপাদন বাড়তে পারে ১৫ লাখ ৯০ হাজার টন।

এবারের খরিফ মৌসুমে তেলবীজ উৎপাদনেও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ খরিফ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে কোটি ৫৭ লাখ ৩০ হাজার টন তেলবীজ (সরিষা, সয়াবিন, সূর্যমুখীবীজ, পামসহ বিভিন্ন জাতের) উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত খরিফ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টন বিভিন্ন জাতের তেলবীজ উৎপাদন হয়েছিল। সেই হিসাবে এক মৌসুমের ব্যবধানে দেশটিতে তেলবীজ উৎপাদন বাড়তে পারে ৩৪ লাখ ১০ হাজার টন।

শুধু খাদ্যশস্য তেলবীজ নয়, বরং ২০২০-২১ খরিফ মৌসুমে ভারতে আখ, তুলা, পাটের মতো কৃষিপণ্যের উৎপাদন আগের তুলনায় চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। দেশটির কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ খরিফ মৌসুমে দেশটিতে সব মিলিয়ে ৩৯ কোটি ৯৮ লাখ ৩০ হাজার টন আখ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত পাঁচ মৌসুমের গড়ের তুলনায় এবারের খরিফ মৌসুমে ভারতে কৃষিপণ্যটির উৎপাদন বাড়তে পারে কোটি ৯৪ লাখ টন। গত পাঁচ খরিফ মৌসুমে দেশটিতে গড়ে কোটি ৬০ লাখ ৪৩ হাজার টন আখ উৎপাদন হয়েছিল।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী দেশ। পণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। এবারের খরিফ মৌসুমে আখের বাম্পাল ফলন ভারতের চিনি শিল্পকে আরো উৎপাদনমুখী করে তুলতে পারে। এতে একদিকে যেমন আখচাষীদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ চিনি নিয়ে বিপাকে পড়তে পারেন ভারতীয় উৎপাদনকারীরা। ভারতে বাড়তি উৎপাদন আন্তর্জাতিক বাজারেও দীর্ঘমেয়াদে চিনির দাম কমিয়ে দিতে পারে।

দেশটির কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ খরিফ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার বেল (প্রতি বেলে ১৭০ তেজি) তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত খরিফ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার বেল তুলা উৎপাদন হয়েছিল। সেই হিসাবে এক মৌসুমের ব্যবধানে দেশটিতে তুলা উৎপাদন বাড়তে পারে ১৬ লাখ ৩০ হাজার বেল।

চলতি ২০২০-২১ খরিফ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে ৯৬ লাখ ৬০ হাজার বেল পাট (প্রতি বেলে ১৮০ কেজি) উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন