ফেস মাস্ক চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি—ভালো নাকি খারাপ?

বণিক বার্তা ডেস্ক

মাস্ক না পরা নিয়ে লজ্জার বিষয়টি কভিড-১৯-এর মহামারীর প্রাথমিক কাল থেকেই শুরু হয়ে যায়। ফেব্রুয়ারিতে চীনের কিছু প্রদেশ এবং পৌরসভা জনসম্মুখে মাস্ক পরাকে বাধ্যতামূলক করে। সংবাদ প্রতিবেদনগুলো অচিরেই অমান্যকারীদের পুলিশ কর্তৃক শাস্তি দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে। ট্রেন্ড এখন বিশ্বব্যাপী দেখা যাচ্ছে।

আকাশ টাকয়ার চীনের সংবাদ শোনার পর, বিষয়গুলো যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল তা নিয়ে বেশ ধাক্কা খেয়েছিলেন। তিনি বিস্মিত হয়ে ভাবছিলেন তার সফটওয়্যার কোম্পানি লিওয়েহার্টজ আরো শান্তিপূর্ণ উপায়ের সন্ধান দিতে পারে। টাকয়ার সার্স-কোভ--এর বিস্তৃতি রোধে মাস্ক পরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে পেরেছিলেন। তবে মানুষ দ্বারা একে অন্যকে পর্যবেক্ষণের বদলে তিনি বিকশিত করতে চান একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা কিনা ছবি বা ভিডিও দেখে শনাক্ত করতে পারবে মানুষ মাস্ক পরেছে কিনা সেটা। তার সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক কোম্পানিটি মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে মাস্ক চিহ্নিত করার কাজটি করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাস্কগুলো প্রচলিত চেহারা শনাক্তকারী সফটওয়্যারগুলোকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু নতুন মেশিন লার্নিং টুলসগুলো অনুমিতভাবেই ব্যক্তিগত কিংবা জনপরিসরে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং অবশ্যই ব্যক্তির হাত থেকে নজরদারির দায়িত্ব সরিয়ে নিতে হবে।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪টি রাজ্য এবং কলম্বিয়ার বিভাগ আউটডোর-ইনডোর উভয় ক্ষেত্রে জনসম্মুখে মাস্ক পরার আদেশ জারি করে। তবে সম্মতি অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। এখানে ব্যক্তিগত রাজনীতি থেকে মাস্ক কেনার জন্য ব্যক্তির অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিষয়টি জড়িত। কিছু রিপোর্টে দেখা গেছে, নেভাদা, লুইজিয়ানা ইন্ডিয়ানায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইনডোরে ব্যক্তিগত ব্যবসার স্থানে মাস্ক না পরা লোকজনকে গ্রেফতার করেছে।

ব্যবসার ক্ষেত্রে কর্মীরা এখন ইনডোর স্থাপনায় ফিরতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে নিয়ম অমান্য করলে কর্মক্ষেত্রে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার দিকে চালিত করতে পারে। সব মিলিয়ে টাকয়ার বলেন, ব্যবসার জন্য বিশাল একটি ক্ষতির কারণ হবে যদি সেখানে উপসর্গহীন কারো মাস্ক না পরার কারণে প্রাদুর্ভাবের সৃষ্টি হয়।

বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডেবোরাহ রাজি বলেন, কিন্তু ফেস ডাটা আঙুলের ছাপের মতোই মূল্যবান। আর মুখ চিহ্নিত হওয়ার বিষয়ে যাদের সংশয় রয়েছে, তারা বিস্মিত যে মাস্ক চিহ্নিত করতে চাওয়া সফটওয়্যারের আসলেই আজকের সমাজে স্থান পাওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে।

কীভাবে একটি ফেস মাস্ক স্ক্যান করতে হবে

মুখ চিহ্নিতকারী সফটওয়্যার ব্যক্তির চোখ, নাক, মুখ কানের আশপাশের বৈশিষ্ট্যগুলো অধ্যয়ন করে সে ব্যক্তির ছবিকে চিহ্নিত করার জন্য, যা এরই মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। যেটি হতে পারে ব্যক্তির নিজের দ্বারা কিংবা ক্রিমিনাল ডাটাবেজ থেকে নেয়া। মাস্ক পরার মাধ্যমে মানুষের চেহারা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি এমন একটি সমস্যা অনেক সিস্টেম এরই মধ্যে যার মুখোমুখি হয়েছে কিংবা অনেকে এটি সমাধানও করেছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপলের ফেস আইডির কথা বলা যায়। চেহারা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের আইফোন আনলক করতে পারে। সম্প্রতি কোনো ব্যক্তি মাস্ক পরলেও তাকে চিহ্নিত করতে পারে এমন একটি সিস্টেম আপডেট প্রকাশিত হয়েছে।   আপডেট দ্রুত ঢেকে থাকা মুখ নাক চিনতে পারে। সে সঙ্গে ব্যবহারকারীদের তাদের মাস্ক খোলার পরিবর্তে পাসকোড দিয়ে প্রবেশের আহ্বান জানায়।

সফটওয়্যার ডেভেলপাররা বলেন, মাস্ক চিহ্নিতকারী সফটওয়্যার তত্ত্বটি গোপনীয়তার বিষয়টিকে এড়িয়ে যায়, কারণ প্রোগ্রামটি সত্যিকার অর্থে মানুষ চিহ্নিত করতে পারে না। ধরনের সফটওয়্যার দুটি সেটের চিত্র সম্পর্কে প্রশিক্ষিত হয়: একটি হচ্ছে মাস্ককে চিনতে অ্যালগরিদম শিক্ষা (মুখ চিহ্নিতকরণ) এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুখের ওপর মাস্ককে চিহ্নিতকরণ (মাস্ক চিহ্নিতকরণ) মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম চেহারাকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে মিলিয়ে চিহ্নিত করতে পারে না।

মাস্ক স্বীকৃতিদানকারী সফটওয়্যারের বিকাশে কাজ করা কোম্পানিগুলো বলছে, তারা শেষ পর্যন্ত যা চায় তা হলো প্রযুক্তি বিস্তৃতভাবে ব্যবহার করা হবে, যাতে এটি মানুষকে নীতিমালা নির্ধারণ কিংবা সচেতনতা বাড়ানোর ক্যাম্পেইনের জন্য ব্যবহার করা হয়।  মাস্ক চিহ্নিতকারী সফটওয়্যার কোম্পানি ট্রায়োল্যাবসের প্রধান টেকনোলজি অফিসার অ্যালান ডেসেকয়েনস বলেন, যদি আমরা সংখ্যাটি গণনা করতে পারি (এমন লোকদের যারা মাস্ক পরার আদেশ মেনে চলে) তবে নীতি নির্ধারণ সহজে করা যাবে এবং এটাও পর্যবেক্ষণ করা যাবে যে মাস্ক পরার জন্য আর কোনো ক্যাম্পেইনের প্রয়োজন আছে কিনা সেটা। কিংবা মানুষ যদি কভিড নিয়ে বিরক্ত বোধ করে এবং মাস্ক পরা বাদ দেয় তখন মানুষকে সচেতন করার জন্য হয়তো প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন হবে।

উদাহরণস্বরূপ লিওয়েহার্টজ অ্যালগরিদম রিয়েল টাইমে ব্যবহূত হতে পারে এবং যুক্ত হতে পারে সিসিটিভি ক্যামেরার সঙ্গে। ভিডিওতে একটি ফ্রেম দিয়ে এটি ছবিকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে এবং তাদের দুটি ক্যাটাগরিতে জড়ো করতে পারে, যারা মাস্ক পরে এবং যারা মাস্ক পরে না। বর্তমানে সফটওয়্যারগুলো যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে গোপনীয়তার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট হোটেলগুলো এটি ব্যবহার করছে কর্মীরা মাস্ক পরার আদেশ পালন করছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য।

প্রাইভেট কোম্পানিগুলো এসব ডাটা এবং এর প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবে। এমনকি কোম্পানিগুলো কর্মক্ষেত্রে মাস্ক না পরলে তাদের কর্মীদের চাকরিচ্যুতও করতে পারে। 

টায়কার অবশ্য মাস্ক চিহ্নিতকরণ সফটওয়্যার ব্যক্তিগত পরিসরে ব্যবহারের শক্তিশালী কারণ দেখেন। তবে জনপরিসরে ব্যবহার করা কিছুটা বিপজ্জনক হতে পারে। তিনি বলেন, আপনি যদি টাইম স্কোয়ারে থাকেন এবং সেখানে যদি কোনো সামাজিক দূরত্ব না থাকে তবে আপনি ডাটা দিয়ে কী করবেন? আপনি কি বিলবোর্ডে তাদের ছবি টাঙিয়ে দেবেন?

বিশেষজ্ঞদের একজন জেমস লুইস দেখেন, কীভাবে মাস্ক চিহ্নিতকরণ মহামারীর সময়ে সম্মতি বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় সেটি। তবে তিনি আরো বেশি উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ কীভাবে সংগৃহীত ডাটাগুলো ব্যবহার করবে তা নিয়ে নিয়মের অভাবের কারণে।

বিষয়টি এমন যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোনো আইন নেই, যা ডাটার গোপনীয়তা পরিচালনা করতে পারে। মাস্ক চিহ্নিতকরণের সমালোচকরা বেশকিছু দিক সামনে এনে এর সমালোচনা করেছেন। এটি আরো কিছু সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে তারা মনে করে। কেউ কেউ বলছেন, নতুন প্রযুক্তি মহামারী শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিপজ্জনক নজির হয়ে সামনে আসতে পারে।

দ্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন