সত্য হলো কোনো কিছুই ‘স্বাভাবিক’ হচ্ছে না

দেবী শ্রীধর

আপনি যা শুনে স্বস্তি পেতে চান তা বলার চেয়ে আমি আপনাদের কিছু অপ্রিয় সত্যি কথা বলতে চাই। গত নয় মাসে গোটা বিশ্ব মৌলিকভাবে বদলে গেছে নিউমোনিয়ার ছোট একটি ক্লাস্টারকে কেন্দ্র করে। যা কিনা চীনের উহানে রিপোর্ট করা হয়েছিল সবার আগে। ফলে বাস্তবতার সাধারণ যে আখ্যান তা গোটা দুনিয়া থেকে একরকম মুছে গেছে। এমনকি রাজনীতিবিদ কিংবা প্রতারণাকারী ছদ্ম বিজ্ঞানীরা যতই ভিন্ন কিছু দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন। যদি আপনি মানিয়ে নিতে সংগ্রাম করেন তবে জেনে রাখুন যে বছরে বাকি সময়ে যে বিষয়টি নিশ্চিত তা হলো অনিশ্চয়তা। যুক্তরাজ্যে আমরা যা দেখছি বিধিনিষেধগুলো দ্রুত বদলে যাচ্ছে, সরকার চেষ্টা করছে সেরা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তৃতিকে নিচে রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সামাজিক ক্ষতিকে প্রশমিত করতে। বিশ্বব্যাপী প্রতিটি দেশ কিছু বিধিনিষেধ প্রয়োগ করেছে। হ্যাঁ, এমনকি সুইডেনেও। কিন্তু লকডাউন এবং রিলিজের আখ্যানটি এখন আর উপকারী নয়, যখন আমরা বিধিনিষেধের বৈচিত্র্যময় ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

একজন বিজ্ঞানী হিসেবে আমি প্রায়ই জিজ্ঞেস করি কী করতে হবে এবং কী কী করা যাবে না। সে সঙ্গে অনিশ্চিত পৃথিবীতে কীভাবে মানিয়ে নিতে হবে তাও। একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে কীভাবে জীবনকে উপভোগ করা যাবে এবং কতটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে, সে বিষয়ে আমার পরামর্শ এখানে আছে।

আমার প্রধান পরামর্শ হচ্ছে ইনডোরে একসঙ্গে অনেক মানুষ দেখলে বাইরে বেরিয়ে যান, গবেষণা বলছে সুপারস্প্রেডিং ইভেন্টের ৯৭ শতাংশ ঘটেছে ইনডোরে এবং আউটডোর সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। যদি ইনডোর সেটিংস দুর্বলভাবে ভ্যান্টিলেটেড হয়, ভিড়পূর্ণ এবং কেউ মাস্ক না পরে থাকে, সেটা এড়িয়ে যাওয়াই হচ্ছে উত্তম। বিষয় হচ্ছে মাস্ক পরে দোকান, আউটডোর আথিতেয়তা এবং গণপরিবহন ব্যবহার করা তুলনামূলক নিরাপদ। এছাড়া বর্তমান সময়টা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে গিয়ে কাছাকাছি পার্কে ঘুরতে যাওয়ার।

এটা না বললেও চলে যে ভাইরাস, যা কিনা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় সেখানে আপনি যত বেশি সংস্পর্শে আসবেন, তত বেশি আপনার আইসোলেশনে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। কারণ এদের একজন হয়তো টেস্টে পজিটিভ এসেছে। কতজন মানুষের সঙ্গে সপ্তাহে আপনি নৈকট্যে এসেছেন? এর অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (১০ মিনিটের বেশি) যাদের সঙ্গে শারীরিকভাবে আপনি নৈকট্যে এসেছেন। সেখানে যোগাযোগের পরিমাণের তুলনায় এর গুণগত মানকে অনুসরণ করা ভালো।

যারা তরুণ তাদের জন্য কভিড-১৯ ততটা ভয়ানক নয়, কিন্তু সার্স-কোভ- খুব বাজে ভাইরাস, আপনি নিশ্চয়ই তাতে আক্রান্ত হতে চাইবেন না। এখন পুনঃসংক্রমণের বিষয়েও শোনা যাচ্ছে। যা কিনা কখনো কখনো উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গসম্পন্ন। অথবা ন্যূনতম একটি কেসে মারাত্মক আকার ধারণ করে যার ফলে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়। আপনি একবার সংক্রমিত হয়েছেন, এর অর্থ আপনি সারা জীবনের জন্য ইমিউন এমন নয়। এমনকি ৩০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী কেউ কেউ কয়েক মাস ধরে ভুগতে পারে। যেখানে ভয়াবহ অবসন্নতা, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং কার্ডিয়াক সমস্যও দেখা যেতে পারে। কভিড-১৯-এর আসল গল্পটি কেবল হারিয়ে যাওয়া জীবন নয়, বরং এটি যুক্ত থাকছে তরুণ এবং কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষের অক্ষমতার সঙ্গেও। যা অর্থনীতি স্বাস্থ্যসেবার ওপর নিদারুণ বোঝা হিসেবে দেখা দেয়। তাহলে কয়েক মাসের অসুবিধা মেনে না নিয়ে কয়েক দশকের অসুস্থতার ঝুঁকি নেয়া কেন?

দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন