ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হবে ২৪৬ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ২৪৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে বলে গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বলা হয়েছে। সভায় মোট পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।

গণভবন থেকে সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের অনুমোদনের সময় ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খাঁচায় অন্যান্য মাছ চাষের জন্য প্রশিক্ষণের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কৃষিজমি রক্ষায় নতুন রাস্তার চেয়ে বিদ্যমান রাস্তা সংস্কারে জোর দিতে হবে। সড়ক নির্মাণে কম জমি অধিগ্রহণের দিকে নজর দিতে হবে। দেশে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের বাড়ির কয়েক শতক জমি ছাড়া কিছুই নেই। ফলে তাদের জমি অধিগ্রহণ করলে বিপদে পড়বে।

৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে প্রত্যেক উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল করা। সেজন্য ৪০টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যারা বিদেশ থেকে ফেরত আসছেন তাদেরও প্রশিক্ষণ এবং অর্থ প্রণোদনা দেয়া হবে, যাতে তারা আবারো বিদেশ গিয়ে বেশি আয় করতে পারেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৩৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

ইলিশ আহরণে নিয়োজিত ৩০ হাজার জেলে পরিবারের জন্য সৃষ্টি করা হবে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ। জেলেদের ১০ হাজার বৈধ জাল বিতরণ প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। সারা বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশ থেকেই আহরিত হয়। প্রকল্পের আওতায় ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রমে সুরক্ষা দেয়া হবে। নিম্ন মেঘনা নদী, তেঁতুলিয়া নদী, আন্ধারমানিক নদী, নিম্ন পদ্মা নদীতে নির্দিষ্ট সময়ে মা ইলিশ আহরণ বন্ধ করা হবে। ইলিশ অভয়াশ্রম সংলগ্ন ১৫৪টি ইউনিয়নের জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হাজার ২৩২টি সভা, ৬০টি নানা ধরনের কর্মশালা, অভিযান পরিচালনার জন্য ১৯টি বোট কেনাসহ মা ইলিশ সংরক্ষণে ১৩ হাজার ৪০০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত জেলে পরিবারে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ১৮ হাজার জেলেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জন্য ৭৩টি আধুনিক বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) নির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান ৪৯টি বিওপি পুনর্নির্মাণ নতুন ২৪টি বিওপি নির্মাণসহ মোট ৭৩টি বিওপি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৩ কোটি ৫২ লাখ হাজার টাকা। সংশোধিত প্রকল্প মেয়াদ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। অন্যদিকে ৩৭৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জামালপুর জেলার দিগপাইত-সরিষাবাড়ী-তারাকান্দি সড়ক যথাযথ মান প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি সরকারি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট শান্তি নিবাস স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে।

কৌশলগতভাবে যেসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করা হবে। তবে প্রকল্প পাস হলেও তা অর্থবরাদ্দে অন্ধের মতো দেয়া হবে না বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রকল্প পাস হওয়া মানে টাকা খরচ নয়। আমরা প্রকল্প চলমান সময়েও নজরদারি করছি। সুতরাং কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় বেশি ধরা থাকলেও সেগুলোয় প্রকল্পসংশিষ্টরা বেশি করে ব্যয় করতে পারবেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন