এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

সিডিএকে ছয় শর্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের

রাশেদ এইচ চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) ছয়টি সুনির্দিষ্ট শর্ত দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব শর্তে প্রকল্পের অধীন নির্দিষ্ট একটি এলাকায় কাজ শুরুর আগে সেখানকার কর্মপরিকল্পনা চাওয়ার পাশাপাশি বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার যানজট নিরসনে ইউলুপ তৈরির কথাও।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে এখন পর্যন্ত গৃহীত সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মূলত শহর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াতের দূরত্ব কমাতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সিডিএ। এর মধ্যে নগরের বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত অংশে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিগুলোর অবস্থান হওয়ায় প্রকল্পটির সঙ্গে এখন চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িয়ে গিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নে সিডিএকে ছয়টি সুনির্দিষ্ট শর্ত দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের দেয়া শর্তগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে, নগরীর বারিক বিল্ডিং এলাকা থেকে সল্টগোলা অংশে নির্মাণকাজের আগে থেকেই বন্দরকে সময়ে সময়ে ওয়ার্ক প্ল্যান দিতে হবে। ওয়ার্কপ্ল্যানের বাইরে কোনোভাবেই কাজ করা যাবে না। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কারণে বন্দরের নিরাপত্তা আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্যই শর্ত দেয়া হয়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে। শর্তে আরো বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় যানজট যাতে সহনীয় অবস্থার বাইরে না যায়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বন্দরসংলগ্ন এলাকার কাজ দ্রুত শেষ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

দ্বিতীয় শর্তে, যানজট নিরসনে একটি ইউলুপ তৈরি করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ হলো চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে প্রতিদিন ছয়-সাত হাজার ভারী যানবাহন আসা-যাওয়া করে। নগরীর কাঠগড় এলাকা থেকে আসা পণ্যবাহী যানবাহনগুলো ডানদিকে নিউমুরিং যাওয়ার পথে বড় যানজট তৈরি করে। শর্তে যানজট নিরসনে সিডিএকে একটি ইউলুপ তৈরির উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তৃতীয় শর্তে বলা হয়েছে, বন্দর এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের যে সাড়ে ছয় একর জায়গা পড়েছে তার মূল্য বিধি অনুযায়ী (তিন গুণ) পরিশোধ করতে হবে।

বাকি তিন শর্তে বলা হয়েছে, পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নগরীর বড়পোল থেকে আনন্দবাজার পর্যন্ত চার লেনবিশিষ্ট ৬০ ফুট রাস্তা করে দিতে হবে সিডিএকে। সড়কটি সরাসরি লিংক রোডে গিয়ে উঠবে। এছাড়া বন্দরের লিজভুক্ত যে জমি আছে তার কাঠামোগত ক্ষতিপূরণের দায় বন্দর কর্তৃপক্ষ নেবে না। এটা সরাসরি দরকষাকষি করে সিডিএকে নিজেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বশেষ শর্ত হলো, বন্দর এলাকার বেসরকারি মালিকানাধীন প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গার আর্থিক বিষয় নিষ্পন্ন করার বিষয়েও সিডিএ কর্তৃপক্ষকে নিজে থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাব অনুযায়ী, নগরীর বারিক বিল্ডিং এলাকা থেকে পোর্ট কানেক্টিং রোড পর্যন্ত বেসরকারি মালিকানাধীন সাততলাবিশিষ্ট ভবন পড়েছে চারটি। পাঁচতলাবিশিষ্ট ভবন রয়েছে একটি, এছাড়া নয়টি চারতলা ভবন, ছয়টি তিনতলা, আটটি দুইতলা সাতটি একতলা ভবন রয়েছে। অংশে উড়াল সড়ক নির্মাণ করতে হলে এসব ভবন ভাঙতে হবে। এসব ভবন যেহেতু অধিগ্রহণ না করে ক্রয় করতে হবে, সেক্ষেত্রে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে এসব বেসরকারি স্থাপনার একাধিক শরিক থাকলে সেখানে দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো সামনে চলে আসতে পারে। এক্ষেত্রে আইনগত পদক্ষেপের কারণেও নতুন করে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়ায় আমাদের কোথাও দ্বিমত নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএর বর্তমান চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করছেন। আমরা সিডিএকে বলেছি, কোনোভাবে যাতে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমের ব্যাঘাত না হয়, সে লক্ষ্য ঠিক রাখতে। ইউলুপ তৈরির ব্যাপারে বলা হয়েছে মূলত যানজটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে। বন্দর এলাকায় নির্মাণকাজের ওয়ার্ক প্ল্যান আগেই চাওয়া হয়েছে, যাতে এক্ষেত্রে ত্রুটি বা নিরাপত্তাজনিত কোনো ইস্যু থাকলে আগেই সতর্ক হওয়ার সুযোগ থাকে। বন্দর এলাকায় যে জায়গা পড়েছে তার মূল্য নিয়ম অনুযায়ী বুঝিয়ে দিতে হবে। এর আগে আমাদের সুপারিশেই নকশায় পরিবর্তন এনে প্রকল্পে সংশোধনও এনেছে সিডিএ। প্রকল্পের শুরুতে যদি বন্দরের সঙ্গে তারা সমন্বয় করে নিত, তাহলে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না। আমদানি-রফতানি কার্যক্রম তথা অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় বন্দর এলাকায় যাতে দ্রুত সময়ে কাজ শেষ করা যায়, সে ব্যাপারে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে সিডিএ কর্তৃপক্ষকে।

বন্দরের ছয় শর্ত গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে সিডিএ। সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, সিডিএ থেকে প্রকল্পের শুরুতেই বন্দরের সঙ্গে সমন্বয় না করায় বেশকিছু বিষয় এখন সামনে আসছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সমুদ্র বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম যতটা সম্ভব বাধাগ্রস্ত না করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ এগিয়ে নিতে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিষয়গুলো আমরা প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে লিখিত আকারে পাঠাব। এখানে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের শুরুর আট মাসের মাথায় এসে নিরাপত্তা পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হবে জানিয়ে নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সে সময় প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার তাগিদ দিয়ে সিডিএকে চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর ফলে প্রথম দফায়ই প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধার মুখে পড়ে সিডিএ। নগরীর বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত অংশে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিগুলোর অবস্থান। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের নকশা করা হয় জেটিগুলোর পাশ দিয়েই। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ শুরু থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ঠিকভাবে সমন্বয় না করায় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। কিন্তু জেটির পাশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গেলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কথা জানিয়ে আপত্তি তোলে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আপত্তির মুখে পরে অংশের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। বর্তমান নকশায় মূল সড়কের পরিবর্তে পাশ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন