যাত্রী পরিবহনে বাংলাদেশ-ভারত এয়ার বাবল

আট এয়ারলাইনসের ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তাব

মনজুরুল ইসলাম

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসা চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনে নিয়মিত যাতায়াত করা উভয় দেশের নাগরিকরা। অবস্থায় জরুরি কাজে গমনাগমনে বাংলাদেশ-ভারত এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় আকাশপথে যাত্রী পরিবহন সুবিধা চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনায় নিজেদের পাঁচটি এয়ারলাইনসের অনুমোদন চেয়ে সম্প্রতি প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। একইভাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও তিনটি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ভারতকে।

এয়ার বাবল চুক্তি করা হয় মূলত সুনির্দিষ্ট নিয়ম প্রবিধান মেনে দুই দেশের মধ্যে আকাশপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। এরই মধ্যে আটটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত। গত ১৮ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ সফরে এসে এয়ার বাবল চুক্তির মৌখিক প্রস্তাব দেন। যার ধারাবাহিকতায় দুই দেশের মধ্যে এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় যাত্রী পরিবহন করতে ১৭ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব দেয় ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিজেদের পাঁচটি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে ভারতের চার গন্তব্য থেকে ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এসব এয়ারলাইনস সপ্তাহে ১৭ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম।

এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পক্ষ থেকে ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তাব জানিয়ে ভারতের সিভিল এভিয়েশনের মহাপরিচালককে চিঠি দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতিতেও দুই দেশের মানুষের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় চুক্তির বিষয়ে আগ্রহী তারা। বিশেষ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ঢাকা-দিল্লি-ঢাকা এবং ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা এবং ঢাকা-চেন্নাই-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। এছাড়া নভোএয়ারও ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। চিঠিতে কোন এয়ারলাইনস কোন রুটে কতটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহী সে প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই চেন্নাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। তবে এয়ার বাবল চুক্তিতে টিকিটের মূল্য, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য চার্জ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। টিকিটের মূল্য নির্ধারণ হবে চাহিদা বিবেচনা করে।

জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া প্রস্তাবে এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লি-ঢাকা-দিল্লি রুটে সাপ্তাহিক দুটি ফ্লাইটে ৩৪৬ যাত্রী এবং কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটে সাপ্তাহিক দুটি ফ্লাইটে ৩৪৬ যাত্রী পরিবহন করবে। গোএয়ার দিল্লি-ঢাকা-দিল্লি রুটে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইটে হাজার ৩০২ যাত্রী এবং কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইটে হাজার ৩০২ যাত্রী পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া ইন্ডিগো কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইটে হাজার ৩০২ যাত্রী, দিল্লি-ঢাকা-দিল্লি রুটে সাতটি ফ্লাইটে হাজার ৩০২ যাত্রী এবং চেন্নাই-ঢাকা-চেন্নাই রুটে তিনটি ফ্লাইটে ৫৫৮ যাত্রী পরিবহন করতে চায়। অন্যদিকে বাজেট ক্যারিয়ার স্পাইস জেট কলকাতা-চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে সাতটি ফ্লাইটে ৫৪৬ যাত্রী, কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটে সাতটি ফ্লাইটে ৫৪৬ যাত্রী, দিল্লি-ঢাকা-দিল্লি রুটে তিনটি ফ্লাইটে ৫৫৮ যাত্রী, মুম্বাই-ঢাকা-মুম্বাই রুটে তিনটি ফ্লাইটে ৫৫৮ যাত্রী এবং চেন্নাই-ঢাকা-চেন্নাই রুটে তিনটি ফ্লাইটে ৫৫৮ যাত্রী পরিবহন করতে চায়। এছাড়া ভিস্তারা দিল্লি-ঢাকা-দিল্লি রুটে সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইটে হাজার ৬৩২ যাত্রী, কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটে ১৪টি ফ্লাইটে হাজার ৬৩২ যাত্রী, মুম্বাই-ঢাকা-মুম্বাই রুটে সাতটি ফ্লাইটে হাজার ৩১৬ যাত্রী এবং চেন্নাই-ঢাকা-চেন্নাই রুটে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করে হাজার ৩১৬ যাত্রী পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছে।

প্রসঙ্গে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এয়ার বাবল চুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। উভয় দেশই নিজেদের পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছে। এসব সমন্বয়ের পরই ফ্লাইট চালু হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে এয়ার বাবল চুক্তির মাধ্যমে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, এয়ার বাবল চুক্তির প্রস্তাবে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে কেবল চিকিৎসা ব্যবসার কাজে বৈধ ভিসাধারী কূটনৈতিক ব্যক্তিরা ভ্রমণ করতে পারবেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর সঙ্গে যেতে পারবেন একজন সহায়তাকারী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন