প্রেসিডেন্টকে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদানে শ্রীলংকার সংসদে বিতর্কিত বিল

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রেসিডেন্টকে অভূতপূর্ব ক্ষমতা প্রদানে সংবিধানে একটি সংশোধনী আনার বিল এনেছে শ্রীলংকার ক্ষমতাসীন দল। মঙ্গলবার তারা শ্রীলংকার সংসদে সংশোধনী বিলটি এনেছে। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার লক্ষ্যে সংশোধনী আনা হয়েছে অভিযোগে সংসদেই বিক্ষোভ করেছে বিরোধী আইনপ্রণেতারা। খবর এএফপি।

শ্রীলংকার সংসদে উত্থাপিত বিলটিতে মানবাধিকার সরকারি ব্যয়সংক্রান্ত ইস্যুতে আইনি সংসদীয় জবাবদিহিতার আওতা থেকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। এমনকি রাষ্ট্রপ্রধানকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ দেয়ারও এখতিয়ার দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়।

পাঁচ বছর মেয়াদি সংসদ এক বছর পূরণ করার পরই তা বাতিল করার ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে রাজাপাকশেকে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগ, পুলিশ, সিভিল সার্ভিস নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন স্বতন্ত্র রাখার বিধানেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এক দশকের মেয়াদে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন গোতাবায়া। গত নভেম্বরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় ভাইকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন।

২০০৯ সালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কঠোর হস্তে দমন কয়েক দশক ধরে চলা রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের অবসান করার জন্য শ্রীলংকার সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী জনগোষ্ঠীর কাছে দুই ভাইয়ের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। গৃহযুদ্ধের শেষের দিকে তারা যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। ২০০৯ সালে তামিলদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ওই অভিযানে ৪০ হাজার বেসামরিক তামিল নিহত হয়েছে। সেখানে শত শত যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে দাবি বিভিন্ন সংগঠনের।

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্টকে অভূতপূর্ব ক্ষমতার প্রস্তাব নিয়ে আনা বিলটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি গোতাবায়া কিংবা মাহিন্দা রাজাপাকশে। তবে দুই সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, পূর্ববর্তী প্রশাসনের আনা সংস্কারগুলো সরিয়ে দেবেন। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে রাজাপাকশে ভাইদের দলের। এজন্য বিলটি পাস করা সহজ হবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা বলেন, এমনটা হলে শ্রীলংকা একটি নির্বাচিত স্বৈরশাসনামলে প্রবেশ করবে।

সংসদে তিনি আরো বলেন, বিলটি পাস হলে সংসদ প্রেসিডেন্টের হাতের পুতুল হয়ে পড়বে। আজকের দিনটি আমাদের দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কালো দিন। সংসদের বিরোধী এমপিরা সময় কালো আর্মব্যান্ড পরা ছিলেন।

২০০৫ সালের পর থেকে শ্রীলংকার রাজনীতিতে সবচেয়ে ক্ষমতাবান পরিবার হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজাপাকশে পরিবার। জাতীয় উড়োজাহাজ সংস্থা, বিভিন্ন করপোরেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে বড় প্রভাবক হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা।

দেশটির মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস নিয়ে সবসময়ই সোচ্চার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মিশেল বাখলেট বলেন, শ্রীলংকার সাংবাদিক, আইনজীবী মানবাধিকার কর্মীদের ওপর ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় আমাদের নতুন করে মনোযোগ দিতে হবে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া বলছেন, কলম্বোর বিরুদ্ধে বারবার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হলে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসবে শ্রীলংকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন