মহামারীকালে পারিবারিক সম্পদের বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রে বৈষম্যের স্পষ্ট লক্ষণ

বণিক বার্তা ডেস্ক

মার্চে মহামারীর কারণে পতনের পর খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মার্কিন পুঁজিবাজার, যার পরিপ্রেক্ষিতে গত প্রান্তিকে মার্কিন পারিবারিক সম্পদের প্রতিক্ষেপ হয়েছে রেকর্ড মাত্রায়। তবে অর্থনীতি সম্পদের আপাত চাঙ্গা ভাব সচ্ছল পরিবারগুলোকে লাভবান করলেও দেশটির লাখো মানুষ এখনো বেকারত্বে ভুগছে। সংকুচিত হয়েছে তাদের উপার্জন। খবর এপি।

দ্য ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) জানিয়েছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক নিট সম্পদের পরিমাণ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১৯ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে সম্পদ কমে দাঁড়িয়েছিল ১১১ দশমিক ট্রিলিয়ন ডলারে। বর্তমানে যখন মার্কিন অর্থনীতি মহামারীজনিত মন্দার কারণে হারানো চাকরির মাত্র অর্ধেক ফিরিয়ে আনতে পেরেছে, তখন পারিবারিক সম্পদের পূর্ণ পুনরুদ্ধার দেশটিতে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকেই নির্দেশ করছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। গবেষণাগোষ্ঠী অপরচুনিটি ইনসাইটসের সংগৃহীত উপাত্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ বেতন দেয়া হয় এমন এক-তৃতীয়াংশ চাকরি প্রায় সম্পূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছে। অন্যদিকে এর বিপরীতে সর্বনিম্ন মজুরির এক-তৃতীয়াংশ চাকরির পুনরুদ্ধার এখনো প্রাক-মহামারী স্তরের ১৬ শতাংশ নিচে রয়েছে।

অপরচুনিটি ইনসাইটসের সহপরিচালক ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ জন ফ্রাইডম্যান বলেন, ্পারিবারিক সম্পদের উপাত্ত মার্কিন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার বৈষম্যকে চিহ্নিত করছে। কারণ দেখা গেছে উচ্চ বেতনভোগী কর্মীরা শুধু যে তাদের চাকরি ফিরে পেয়েছেন তা নয়, একই সঙ্গে তাদের সঞ্চয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে মার্চের শেষ নাগাদ ফেডের উপাত্ত বলছে, আমেরিকার মোট জাতীয় সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশির মালিক দেশটির এক-দশমাংশ ধনী মানুষ। এর মধ্যে শীর্ষ শতাংশের আয়ত্তে রয়েছে ৩১ শতাংশ সম্পদ।

এছাড়া অধিকাংশ পরিবারের জন্য স্বল্প পরিমাণে আর্থিক সহায়তা বহু ভোক্তাকে আগামী মাসগুলোয় ব্যয়সংকোচনে বাধ্য করবে। তাছাড়া এরই মধ্যে সরকারের বেকারত্ব সুবিধার মতো আর্থিক সহায়তা প্রকল্প শেষ হতে চলেছে। ফলে অবস্থায় ভোক্তাদের ব্যয়সংকোচন প্রকৃতপক্ষে দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করবে।

মূলত আমেরিকানদের পারিবারিক সম্পদ বলতে বোঝায় মর্টগেজ ঋণ, গাড়িঋণ, ক্রেডিট ডেবিট কার্ড এবং অন্য ঋণ বাদে তাদের বাড়ির মূল্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পুঁজি, বন্ড এবং অন্য সম্পদের পরিমাণ। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশটিতে পারিবারিক পুঁজির পোর্টফোলিও বৃদ্ধি পেয়েছে দশমিক ট্রিলিয়ন ডলার। এছাড়া সময় বাড়ির দাম বেড়েছে ৫০ হাজার কোটি ডলার।

আমেরকািনরা গত প্রান্তিকে তাদের সঞ্চয়ও বৃদ্ধি করেছে। এর মূলে রয়েছে ভবিষ্যতে ভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে ধনীদের শঙ্কা। সময় তারা বহুলাংশে তাদের ব্যয়সংকোচন করেছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তার হাজার ২০০ ডলারের চেক এবং সাপ্তাহিক ৬০০ ডলারের বেকারত্ব ভাতার ওপর ভর করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোও কিছুটা সঞ্চয়ের সুযোগ পেয়েছে। তবে সরকারের সহায়তা কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চাকরিহীন নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো।

ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোমি পাওয়েল বারবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। গত সপ্তাহে তিনি বৈষম্য আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে জানান। এক সংবাদ সম্মেলনে পাওয়েল বলেন, বৈষম্যই আমাদের অর্থনীতিকে সামনে এগোতে দিচ্ছে না। যদি আমরা আমাদের অর্থনীতির সম্ভাব্য সর্বোচ্চ বিকাশ চাই, তাহলে আমাদের আর্থিক উন্নতির সুফল সর্বস্তরে বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।

পাওয়েলসহ আরো অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন, আরেকটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। একই সঙ্গে কমিয়ে আনবে বৈষম্যের মাত্রা। কিন্তু বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থানীয় সময় সোমবার প্রকাশিত ফেডের উপাত্ত বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ বণ্টনে জাতিগত বৈষ্যমও প্রকট। দেখা গেছে, মার্চের শেষ পর্যন্ত আমেরিকার মোট সম্পদের প্রায় ৮৫ শতাংশই শ্বেতাঙ্গ পরিবারের দখলে। অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গ হিস্পানিক আমেরিকানদের দখলে রয়েছে যথাক্রমে সম্পদের দশমিক দশমিক শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন