বৃহৎ কোম্পানির বঞ্চনা, থাইল্যান্ডের অভিবাসী শ্রমিকদের আইনি লড়াই

বণিক বার্তা ডেস্ক

স্টারবাকস ওয়াল্ট ডিজনির মতো বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের জন্য পণ্য তৈরিতে অবৈধভাবে কম মজুরি পাওয়ার কারণে থাইল্যান্ডে আইনের আশ্রয় চেয়েছেন একদল অভিবাসী শ্রমিক। এছাড়া গত বছর হঠাৎ করে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের জন্য তারা ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন। খবর রয়টার্স।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের একটি অনুসন্ধানে দেখা যায়, থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলীয় মাই সত এলাকায় বঞ্চিত হচ্ছেন অভিবাসী শ্রমিকরা। প্রধানত মিয়ানমার থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিকগুলো ৩১০ থাই বাথেরও কম মজুরি পাচ্ছেন। রাজধানী ব্যাংকক থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাই সত পশ্চিম থাইল্যান্ডের প্রধান প্রবেশদ্বার। সেখানে ৪৩০টির মতো কারখানা রয়েছে, যেখানে অন্তত ৪৪ হাজার ৫০০ শ্রমিক কাজ করছেন। যাদের বড় অংশই অভিবাসী শ্রমিক। রয়টার্সের ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর কর্তৃপক্ষ সেখানকার দুটি পোশাক কারখানায় অভিযান চালায়। সেখানে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে মালিকদের বাধ্য করে কর্তৃপক্ষ। একটি কারখানা মালিককে তার প্রায় ৬০০ শ্রমিককে কোটি ৮০ লাখ বাথ ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই কারখানার মালিক প্রতিষ্ঠান কর্টিনা আইগার জানায়, তারা শ্রমিকদের সেই ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। মাই সতের শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কানলায়ানি রুয়েনগ্রিত নামে আরেক কারখানা মালিক শ্রমিকদের প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ দেসনি। গত বছরের অভিযানের পর কারখানা বন্ধের কারণে চাকরি হারানো ২৬ কর্মীকে ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ছিল। স্থানীয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কাছে ওই শ্রমিকরা জানান, তাদের সাবেক প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েকটি বড় ব্র্যান্ডের জন্য পণ্য তৈরি করে যাচ্ছে। কারখানা মালিক যে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের জন্য পণ্য তৈরি করছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইউনিভার্সাল স্টুডিওস ব্রিটেনের বৃহত্তম সুপারমার্কেট টেসকো। ডিজনি, স্টারবাকস টেসকো বলছে, কানলায়ানি কারখানার শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান সহায়তায় স্থানীয় প্রতিনিধি সুশীল সমাজের সঙ্গে তারা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু গত মাসে দায়ের করা একটি দেওয়ানি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই ২৬ কর্মী এখনো তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি।

অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এইচআরডিএফ) সঙ্গে কাজ করা এমএপি ফাউন্ডেশনের শ্রমিক অধিকার সমন্বয়ক সুচার্ট ট্রাকুনহুতিপ বলেন, মাই সতের কারখানা মালিকরা কীভাবে সস্তা অভিবাসী শ্রমিকের ফায়দা তুলছেন, ঘটনাটি তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ।

কারখানা মালিক কানলায়ানি জানান, তিনি শ্রমিকদের লাখ বাথ ক্ষতিপূরণ দিতে সক্ষম। যে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছিল, তার এক-চতুর্থাংশ মাত্র। যা ঘটেছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে কানলায়ানি আরো বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে শ্রমিকদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করিনি। নৈতিকভাবে আমি সৎ আছি, তবে আইনগত দিক থেকে আমি ভুল স্বীকার করছি।

তিনি আরো বলেন, মাই সতের বেশির ভাগ কারখানারই একই পরিস্থিতি। শুধু বড় কোম্পানিগুলোই কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি দিতে সক্ষম।

কানলায়ানি কারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, গত বছর সরকারি অভিযানের পর কালো তালিকাভুক্ত করে কিছু কারখানার বাইরে তাদের ছবি বিস্তারিত টানিয়ে দেয়া হয়। এতে তারা অন্য কারখানায় কাজের সুযোগ থেকে বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন।

ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন (সিসিসি) নামে একটি বৈশ্বিক প্রেসার গ্রুপের সমন্বয়ক ইলোনা কেলি বলেন, কালো তালিকার মতো ভয়াবহ পদক্ষেপের মাধ্যমে পোশাক শিল্পের কর্মীদের হাতে কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের বার্তা তারা দিচ্ছেন, তোমরা যদি মুখ খোলো তাহলে সাজা পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন