অর্থনৈতিক সংকটকালে ইয়েমেনে মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে গাধা

বণিক বার্তা ডেস্ক

বহু বছর ধরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন। তার ওপর বর্তমানে চলছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সব মিলিয়ে দারুণ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। অবস্থায় বন্দরনগরী আদেনে বিক্রির জন্য নিজের গাধাগুলো নিয়ে এসেছেন আবু মোহাম্মদ। সত্যি বলতে, চলমান আর্থিক সংকটকালে ইয়েমেনে গাধা এখন অত্যাবশ্যকীয় বাহনে পরিণত হয়েছে। কারণ দেশটিতে পানি অন্য পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রাণীটির ব্যবহার চাহিদা উভয়ই বেড়েছে। আর এর মূলে রয়েছে গাড়ি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি ক্রয়ের অক্ষমতা। আবু মোহাম্মদ বলেন, বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম নাগালের বাইরে। জীবনযাপনের ব্যয়ও আকাশছোঁয়া। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই গাধার চাহিদা বেড়েছে।

বর্তমানে ইয়েমেনে এমন কোনো এলাকা নেই, যা সংঘাত এড়াতে পারছে। এর মধ্যে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের হাত থেকে উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে আদেন রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তর্বর্তীকালীন কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে। ফলে অঞ্চলের ভবিষ্যৎও এখন অনিশ্চিত। সার্বিকভাবে অস্থিতিশীল দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে খুবই শোচনীয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির কোটি ৯০ লাখ মানুষের তিন-চতুর্থাংশই এখন বেঁচে থাকার জন্য সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘের মতে, এটি হলো পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বিপর্যয়কর মানবিক সংকট।

জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশটিতেই এখন এক লিটার পেট্রলের দাম শূন্য দশমিক ৫০ ডলার। দাম যে কত বেশি, তা দেশটির একজন শিক্ষকের বেতনের সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যায়। ইয়েমেনে একজন শিক্ষকের আয় মাসে ২৫ ডলারেরও কম। অবস্থায় ব্যয়বহুল পেট্রলচালিত মোটরযানের পরিবর্তে খুব স্বাভাবিকভাবেই পণ্যদ্রব্য পরিবহনের কাজে দেশটিতে গাধার চাহিদা বেড়েছে, পরিণত হয়েছে মূল্যবান সম্পদে।

বহু আগে থেকেই আদেনে গাধার পরিবহনে ব্যবহার প্রচলিত ছিল। কিন্তু আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার সূচনায় প্রাণীটির ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কমে যায়। কিন্তু সম্প্রতি নতুন করে এই একুশ শতকে অঞ্চলটিতে গাধাকে ভারী পণ্য পরিবহন করতে দেখা যাচ্ছে। আবু বলেন, অনেক সময়েই আমরা গ্যাসোলিন পাই না। কখনো কখনো আমাদের দুই সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ফলে মানুষ বাধ্য হয়েই বেশি করে গাধা ব্যবহারে ঝুঁকছে। তাছাড়া গাধার মাধ্যমে পণ্য পরিবহন অনেকটাই সহজ।

মূলত ৩৮ বছর বয়সী নয় সন্তানের জনক আবু দুই বছর আগে তার চাকরি হারানোর পর গাধা কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হন। সত্যি বলতে, তার ব্যবসা এখন রমরমা। তিনি আবিয়ান প্রদেশ থেকে তুলনামূলক কম দামে প্রাণীগুলো কিনে আনেন। তারপর সেগুলো আদেনে এনে বিক্রি করে দেন। তিনি বলেন, আমরা সাধারণত প্রতিদিন থেকে হাজার রিয়াল মুনাফা করতে পারি। তাছাড়া গাধার খাদ্যের পেছনে তেমন কোনো খরচ হয় না বললেই চলে। বর্তমানে এখানে জীবনযাপনের ব্যয় অনেক বেশি। অবস্থায় আমি অন্য কোনো চাকরি খুঁজলেও পাব না। আর উপার্জন না থাকলে আমার সন্তানদের মুখে খাবার জুটবে না। তবে ভাগ্য ভালো যে আমার এখন উপার্জনের পথ রয়েছে। এজন্য আমি প্রথমে সৃষ্টিকর্তাকে এবং পরে গাধাকে ধন্যবাদ জানাই। শুধু আবুই নন, তার মতো আরো অনেকেই এখন ইয়েমেনে গাধার ব্যবসা করছেন।

তিন সন্তানের পিতা মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, আমরা এমন এলাকায় থাকি, যেখানে পানির সংস্থান নেই। ফলে তাকে গাধার মাধ্যমে অন্য স্থান থেকে পানি পরিবহন করতে হয়। আনোয়ার বলেন, আমার গাধা নেই মানে হলো পানিও নেই। কিন্তু সমস্যা হলো, দিন দিন যেমন পেট্রলের সংকট বাড়ছে, তেমনি একই সঙ্গে বাড়ছে গাধার চাহিদা। ফলে প্রাণীটির দামও এখন ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে একটি গাধা ইয়েমেনে বিক্রি হচ্ছে ৭০ হাজার থেকে লাখ রিয়েলের মধ্যে। আর অনেক দরিদ্র পরিবারের পক্ষেই এত দাম দিয়ে গাধা কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন