গার্ডিয়ানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিবন্ধ

জলবায়ু ও মহামারী সঙ্কট পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনেছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে নিবন্ধ লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিবন্ধে তিনি জলবায়ু ও মহামারী সঙ্কট  যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরো বেশি জরুরি করে তুলেছে সেটিই উল্লেখ করেছেন। আজ মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) গার্ডিয়ানের ওপিনিয়ন পাতায় প্রধানমন্ত্রীর নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়েছে। ইংরেজী নিবন্ধটির চুম্বক অংশ বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা হলো:

গতমাসে আমার দেশের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে গিয়েছিল। ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত; দশ হাজার হেক্টর ধানের জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ অধিবাসীর এ বছর খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন পড়বে। 

এ বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পান দ্বারা সৃষ্ট ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পরে আসা বন্যা করোনাভাইরাস মোকাবেলাকে আরো কঠিন করে তুলেছে।

কভিড ঝুঁকি সত্ত্বেও ঝড়ের ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে রক্ষা করতে ২ দশমিক ৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। কভিডে এখনও সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটছে, তাছাড়া একটি সম্পূর্ণ সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত না করা অবধি উদ্বেগগুলো রয়েই যায়।

অর্থনৈতিক লকডাউনে দেশের পোশাক শিল্প ও রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রবাসে কর্মরত হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই এখন কর্মহীন।

আমি সাহায্যের জন্য হাত পাতছি না, বরং সতর্ক করছি। 

বিশ্বজুড়ে অন্যান্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মতো, বাংলাদেশও তার বাসিন্দাদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি করছে, আর্থিক পতন এড়ানোর পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের জন্য অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবেলায় সহযোগিতা করছে। 

সৌভাগ্যবান রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আমার আহ্বান, বাংলাদেশ কীভাবে লড়াই করছে তার দিকে মনোযোগ দিন এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। 

জলবায়ু সঙ্কট এবং কভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী হুমকি। এগুলো আগে থেকেই অনুমেয় এবং ঝুঁকি হ্রাস করতে আমাদের উচিত ছিল আরো অনেক বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমাদের ওপর দায়িত্ব এসে পড়েছে, প্রতিক্রিয়া জানানোর সর্বোত্তম উপায় হলো সম্মিলিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ। 

২০১৫ প্যারিস চুক্তির বাস্তাবায়ন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ এবং এর সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব প্রশমনে এখনো আমাদের জন্য সবচেয়ে সর্বোত্তম সুযোগ। সর্বশেষ, অধিক উচ্চাভিলাসী লক্ষ্য প্রস্তাব করেছে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম ( সিভিএফ)- যার প্রধান আমি নিজেই। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে অসমানুপাতিক হারে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৮টি দেশের একটি গ্রুপ এটি, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। সিভিএফভুক্ত দেশগুলো জলবায়ু অভিযোজন, জলবায়ু পরিবর্তন, ঘূর্ণিঝড়সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষায় শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র ও প্যারাবনের পুনরুজ্জীবনের মতো উদ্যোগগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সামনের সারিতে আছে। তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি প্রদানের অংশ হিসেবে দ্য গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে এসব সর্বোত্তম চর্চার সম্প্রসারণে চলতি মাসে ঢাকায় একটি অফিস খুলবে। 

একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধ্বংসাত্মক প্রভাবে ধনী দেশগুলোও পর্যুদস্ত। সুতরাং সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।  

জলবায়ু পরিবর্তন, চলমান কভিড-১৯ মহামারী এবং এর অর্থনৈতিক অভিঘাত বিশ্ব নেতৃত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা ভীষণভাবে সামনে আনছে। 

পরবর্তী জাতিসংঘ ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজে দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) বাড়ানোর অঙ্গীকার করতে হবে এবং চূড়ান্তভাবে অন্য সব সমস্যা উত্তরণেও আশা জোগাতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন