চীনা প্রেসিডেন্টের সমালোচক রেনের ১৮ বছরের জেল

বণিক বার্তা ডেস্ক

দুর্নীতির অভিযোগে ১৮ বছরের জেল দেয়া হলো সাবেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রিয়েল এস্টেট কর্মকর্তা ও স্পষ্টভাষী রেন ঝিকিয়াংকে। এক নিবন্ধে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর নামোল্লেখ না করে ‘ভাঁড়’ বলে অভিহিত করেছিলেন এই চীনা ধনকুবের। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস বলছে, দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় রেনকে ১৮ বছরের জেল দিয়েছে আদালত। এছাড়া ৪২ লাখ ইউয়ান (প্রায় ৬ লাখ ২০ হাজার ডলার) জরিমানাও গুণতে হবে তাকে। 

এ বছর মার্চে একটি নিবন্ধে প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সমালোচনা করার পর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান রেন। তার বন্ধুরা তখন জানান, তারা রেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং ভীষণ উদ্বিগ্ন। নিবন্ধে রেন সরাসরি প্রেসিডেন্টের নাম না বলেও সবাই বুঝে নিয়েছেন যে এটা শক্তিধর এ শাসকেই ইঙ্গিত করেছেন। 

বেইজিংয়ের দুই নম্বর ইন্টারমিডিয়েট পিপলস কোর্ট বলছে, ১২ লাখ ৫০ হাজার ইউয়ান ঘুষ নেয়া ও ৫ কোটি ইউয়ান আত্মসাত্ করার কথা স্বীকার করেছেন রেন। তিনি ‘স্বেচ্ছায়’ সব অভিযোগের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন এবং সাজার বিরুদ্ধে আপিলও করবেন না বলে জানিয়েছেন। 

বেইজিং হুয়া ইউয়ান প্রোপার্টি কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান শুধুই একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন না। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার এই ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ অনেক নেতারও। কাজেই তার মুখ থেকে প্রেসিডেন্টের সমালোচনা আসলে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি বিরাট এক আঘাত হয়ে এসেছে। 

ডানপন্থীরা অবশ্য ধারাবাহিকভাবে বলে এসেছেন, ভিন্ন মতাবলম্বীদের শায়েস্তা করতে দুর্নীতির অভিযোগ চাপিয়ে দেয়ার কৌশল নিয়েছে চীনা প্রশাসন। 

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবটি ঠিকমতো সামাল দিতে না পারায় প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সমালোচনা করেছিলেন রেন। ঠিক এর আগেই টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছিলেন জিনপিং। 

প্রেসিডেন্টের নাম না বললেও চায়না ডিজিটাল টাইমসের এক প্রতিবেদন মতে, তিনি বলেছেন, ‘আমি খুবই কৌতুহলী এবং বিবেক দিয়ে ভাষণটি বিশ্লেষণ করেছি...আমি যা দেখলাম...একজন সম্রাট তার কাপড়ে আচ্ছাদিত হয়ে নয়, বরং বিবস্ত্র এক ভাড় এবং তিনি একজন সম্রাট হিসেবেই দায়িত্বে বহাল থাকতে চান।’

তার নিবন্ধটি প্রকাশের কিছু সময় পরই ঘোষণা করা হয় ‘গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের সন্দেহে’ রেনকে তদন্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি সেক্রেটারি। ওই নিবন্ধের পর তাকে পার্টির পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়। 

এখানেই শেষ নয়। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সমালোচনা করায় তার মাইক্রোব্লোগিং অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় চীনা প্রশাসন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবোর ব্লগে তিনি লিখেছিলেন, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম জনগনের করের টাকায় চলে, কাজেই সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির নয়, সাধারণ মানুষেরই কথা বলা উচিত। ‘কমিউনিস্ট পার্টি-বিরোধী’ চিন্তার কারণে পরে তার এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।

সূত্র: বিবিসি ও গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন