জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন

রোহিঙ্গা সংকট ও ভ্যাকসিনে প্রাধান্য দিবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘের ৭৫তম চলমান অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট ও করোনার ভ্যাকসিন ইস্যুতে প্রাধান্য দিবে বাংলাদেশ। চলমান অধিবেশনে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগে থেকে ধারণকৃত প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকট ও করোনার ভ্যাকসিন ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন তিনি, বিশেষ করে করোনার ভ্যাকসিন সাশ্রয়ী মূল্যে কীভাবে বিশ্বব্যাপী সবার জন্য নিশ্চিত করা যায়। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

জাতিসংঘের ৭৫তম চলমান অধিবেশন বাংলাদেশের সরকার প্রধানের ভার্চুয়ালি যোগ দেয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপের কারণে এবারের অধিবেশন পূর্ববর্তী বছরগুলো থেকে একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিধিমালা অনুসরণ করে জাতিসংঘের ইতিহাসে এ প্রথম ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিজ নিজ দেশ থেকে এবারের সভায় অংশগ্রহণ করবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি ওইদিন রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময়) প্রচারিত হবে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শুরু হয়েছে। এ অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ অধিবেশনের মূল বিতর্ক ছাড়াও আরও কয়েকটি শীর্ষ পর্যায়ের সভায়ও ধারণকৃত বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তার মধ্যে মঙ্গলবার ভোর ৪টায় (বাংলাদেশ সময়) প্রথম বক্তব্যটি প্রচারিত হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক বছরের মতো এবারও অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যাটি তুলে ধরবেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আইসিজেতে চলমান মামলা এবং আইসিসিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়ার কারণে এবারের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা পূর্বের বছরগুলোর মতোই গুরুত্বসহকারে আলোচিত হবে।

জাতিসংঘের অধিবেশনে রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের নতুন কোনো প্রস্তাব থাকবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বের দেয়া ৫টি প্রস্তাবের উপরই বাংলাদেশ বলবৎ থাকবে। সে ৫টি প্রস্তাবকেই মূলে রেখে বাংলাদেশ আলোচনা করবে। নতুন করে কোনো প্রস্তাব দেয়া হবে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন। বক্তৃতায় স্বাভাবিকভাবেই কভিড-১৯ দমনে বিশ্ববাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার আবশ্যকতা, ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত ও দুর্দশা দমনে আমাদের গৃহীত কার্যক্রম প্রাধান্য পাবে।’

পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তির আদান প্রদান, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ, লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণ, শিশু স্বাস্থ্য ও তাদের অধিকার, শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ এবং নারীর ক্ষমতায়নের মতো বিষয়গুলো উঠে আসবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, এ বছর সাধারণ বিতর্কের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘দ্যা ফিউচার উই ওয়ান্ট, দ্যা ইউনাইটেড নেশনস উই নিড: রিঅ্যাফার্মিং আওয়ার কালেকটিভ কমিটমেন্ট টু মাল্টিল্যাটারিজম অ্যান্ড কনফ্রন্টিং কভিড-১৯ থ্রু ইফেকটিভ মাল্টিল্যাটারাল অ্যাকশন’। মূলত, ২০২০ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তি ও মহামারী কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবকে উপজীব্য করে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের অধিবেশনটি বেশ কিছু কারণে তাৎপর্যপূর্ণ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বছর জাতিসংঘের ৭৫ বছর পূর্তি। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিতব্য এই অধিবেশন যেমন বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রাসঙ্গিকতাকে সামনে নিয়ে আসবে তেমনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আগামী বছরগুলোতে কী ধরনের জাতিসংঘ দেখতে চান সে বিষয়ে তাদের অভিমত, চিন্তাধারা ও পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। আর কভিড-১৯ মহামারী দমনে রাষ্ট্রসমূহের সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টিও এবারের অন্যতম আলোচিত বিষয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ দমনে রাষ্ট্রসমূহের উদ্যোগ, কভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট অসমতা, স্বল্পোন্নত ও অভিবাসী প্রেরণকারী দেশ সমূহের উপর এর দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাবও অর্থনৈতিক বিপর্যয়সহ নানবিধ সমস্যা মোকাবেলা এবং কভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়সমূহ নিয়ে এবারের অধিবেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, মহামারী প্রতিরোধের উপর গুরুত্বারোপ করার কারণে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট অর্জন প্রচেষ্টা যাতে ব্যহত না হয় এবং টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট অর্জন ও কভিড-১৯ দমন যাতে সমান গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়। সেই সঙ্গে গ্রাজুয়েটিং দেশগুলোর গ্রাজুয়েশন প্রক্রিয়াকে টেকসই করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তার বিষয়সমূহও এবারের অধিবেশনে উঠে আসবে। আর সেই সঙ্গে এ বছর, ১৯৯৫ সালে বেইজিং এ অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন উমেনের ২৫ বছর পূর্তি। এ প্রেক্ষিতে এবারের অধিবেশনে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধের মত বিষয়সমূহ ব্যপকভাবে আলোচিত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন