নগদ অর্থের সংকটে ব্যবসায় অংশীদার খুঁজছেন উদ্যোক্তারা

বদরুল আলম

ব্যবসায়িক অংশীদারের খোঁজে ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয় একটি বিজ্ঞাপন। এতে লেখা ছিল—‘একটি প্রতিষ্ঠিত রিয়েল এস্টেট কোম্পানির হাউজিং এবং রিয়েল এস্টেট প্রজেক্টে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ প্রাপ্তির সুবিধায় সচ্ছল ব্যবসায়িক পার্টনার/বিনিয়োগকারী আবশ্যক।

বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত নম্বরে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি বণিক বার্তাকে জানান, কভিড-১৯-এর প্রভাবে গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংকট আবাসন খাতে প্রকট। উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে নগদ অর্থের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। প্রকল্প হাতে নিলেও মাঝপথে থেমে গেছে তারল্যের ঘাটতিতে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আর্থিকভাবে সচ্ছল অংশীদার বা বিনিয়োগকারী খুুঁজছেন তারা।

শুধু আবাসন খাত নয়, একই সংকটে ভুগছে দেশে বিভিন্ন খাতের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে এদের কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। অনেকেই আবার শেয়ার বিক্রি বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ সংস্থান করে ব্যবসায় টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই আর্থিক সংকটে ভুগছিল দেশে ব্যাটারি শিল্পের শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করে লোকসানে পড়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। আর্থিক সংকট কাটাতে এরই মধ্যে নিজেদের সুপার শপ ব্যবসা বিক্রি করে দিয়েছে তারা। কভিড প্রেক্ষাপটে সমস্যাটা আরো প্রকট হয়েছে। ভবিষ্যৎ টেকসই করতে প্রতিষ্ঠানটি এখন বিনিয়োগকারী খুঁজছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বণিক বার্তাকে বলেন, করোনা প্রেক্ষাপট এবং পরিবেশগত কারণে ব্যাটারির চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। আমাদের আর্থিক সমস্যাও আছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। চীন এখন ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিচ্ছে। সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়িক অবস্থান আরো সুদৃঢ় করতে আমরা নিজেরা যেহেতু পারছি না, তাই সঠিক মানসিকতার বিনিয়োগকারী খুঁজছি। যদি পাই আমরা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ইকুইটি ছেড়ে দেব। এখান থেকে যে অর্থপ্রবাহ আসবে সেটা আমরা ব্যাটারি ব্যবসাটাকে গুছিয়ে নিতে কাজে লাগাব। যেমন তেমন বিনিয়োগকারী না, আমাদের দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকবে এমন বিনিয়োগকারীকে আমরা স্বাগত জানাব।

অংশীদার বা বিনিয়োগকারীদের সন্ধানে আছেন এমন ব্যবসায়ী খোঁজ করতে দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্টরা জানান, নগদ অর্থপ্রবাহ খাতভেদে ভিন্ন। তবে বর্তমান সময় অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আলাদা। তাই ব্যবসায় নগদ অর্থের সংকট এখন প্রকট। আর প্রেক্ষাপটে অনেক উদ্যোক্তাই আছেন যারা ব্যবসার অংশীদার বা বিনিয়োগকারী খুঁজছেন।

ব্যবসায়িক সংগঠন প্রতিনিধিরা বলছেন, ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসার উদ্যোক্তারা স্থানীয় পর্যায়ে অংশীদারিত্বে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। আর ব্যবসার আকার বড় এমন উদ্যোক্তারা বিদেশী বিনিয়োগকারীর সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসাকে টেকসই করতে উদ্যোগী হয়েছেন। এক্ষেত্রে বস্ত্র খাতের অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন। আবার ব্যবসার কলেবর বৃদ্ধিসহ বিদ্যমান নগদ অর্থ সংকট মোচনে চীনা অংশীদার খুঁজছেন অনেক উদ্যোক্তা।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, এখনই কোনো পদক্ষেপ না নিলে সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ আর্থিক সংকট এগিয়ে আসছে। টেক্সটাইল খাতে ক্রেতার পক্ষ থেকে মূল্যহ্রাস অর্থ পরিশোধ বিলম্বিত হয়ে অর্থ সংকট আরো তীব্র হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অনেক খাতের ব্যবসা এখন কনসোলিডেট হবে। অনেক ক্ষেত্রে ছোট ছোট কোম্পানি এক হয়ে যাবে। ছোট বড় প্রতিষ্ঠানভেদে পরিস্থিতিও ভিন্ন দেখা যাবে। পরিস্থিতির মধ্যেও ব্যাপক সম্ভাবনা উন্মোচন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বাংলদেশের ব্যবসায়ীদের। কারণ চীন শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এতে চীনের বাজারের জন্য বাংলাদেশে অনেক নতুন বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আর ব্যাপক হারে যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে অনেক ব্যবসায়ীর অংশীদার খোঁজা অস্বাভাবিক কিছু না।

বস্ত্র পোশাক খাতের বড় উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনেকের ক্রয়াদেশের বিপরীতে ক্রেতার পক্ষ থেকে অর্থ পরিশোধ সময় বিলম্বিত হয়েছে। ফলে নগদ অর্থের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আবার পোশাক খাতের ছোট উদ্যোক্তাদের ইউনিটগুলো বড়রা ব্যবহার করতে শুরু করেছেন অংশীদারিত্ব চুক্তিতে।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সহসভাপতি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আমার জানামতে একটি ওয়াশিং কারখানা আছে যারা কারখানা বেচে দিতে চাইছে। এক্ষেত্রে তারা বিনিয়োগকারী খুঁজছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নগদ অর্থ সংকটসহ সার্বিক নাজুক পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে উদ্যোক্তা অংশীদার বা বিনিয়োগকারী একটা বিকল্প হিসেবে ব্যবসায়ীরা ভাবতেই পারেন।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিক্রি বন্ধ থাকায় নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে দেশের ইস্পাত খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানও। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু বছরের মার্চ এপ্রিল মাসেই বাংলাদেশের স্টিল শিল্পে সম্ভাব্য লোকসানের পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খাতেও কিছু প্রতিষ্ঠান যৌথ বিনিয়োগকারীর খোঁজ করছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা সব সময়ই অংশীদারিত্বের প্রতি আগ্রহী থাকেন, বিশেষ করে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের আগ্রহ থাকে। এখনো অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা বিনিয়োগকারী খোঁজ করছেন। আমাদের খাতে এমন হচ্ছে কিনা সেটা বলতে পারছি না। আমার জানা মতে, টেক্সটাইলের অনেক চীনা বিনিয়োগকারী খুঁজছেন। চীনাদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন