মাতারবাড়ী প্রকল্পের সড়ক নির্মাণ

কাজ শুরুতে বিলম্ব, ব্যয় বাড়ছে ৩০০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। প্রকল্প এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে ১০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ, ৩৩ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন রক্ষণাবেক্ষণ এবং দশমিক ৩৫ কিলোমিটার নতুন বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণ করছে সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। পাশাপাশি কুহেলিয়া নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ৬৮০ মিটার দীর্ঘ সেতু। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ার কারণ দেখিয়ে এসব অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয় ২৯৯ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে সওজ অধিদপ্তর। একইভাবে ৩৬ মাস সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।

ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের যুক্তি, নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় প্রকল্পটি শেষ করতে বিলম্ব হবে। এজন্য নকশা তৈরি, পরামর্শক সেবা, এনজিও প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে। পরামর্শক ব্যয়ের পাশাপাশি প্রকল্পটিতে প্যানেল অব এক্সপার্ট ব্যয়ও যুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে ট্রেনিং, সেমিনার ভ্রমণ খাতে নতুন করে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত বাঁধ কাম সড়কের উচ্চতা রক্ষাপদ কাজের পরিমাণ বেড়েছে। বাঁধটি নির্মাণ হলে মত্স্য লবণ চাষীদের যেন লোনা পানির সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য তিনটি ওয়াটার ইনলেট প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় বৃষ্টিপাত, নিষ্কাশন ব্যবস্থার কথা চিন্তা করে পূর্ত কাজে নতুন করে কালভার্ট, স্লুইসগেট, রিজিড পেভমেন্ট রিটেইনিং ওয়াল যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত কুহেলিয়া সেতুর নকশা পরিবর্তন করা হচ্ছে। প্রকল্পে অতিরিক্ত চারটি ছোট সেতু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা।

জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য মাতারবাড়ী কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি (সওজ অংশ) অনুমোদিত হয়। আর প্রকল্পের ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে ২০১৬ সালের এপ্রিলে। কাজ শুরুর আগেই চলে যায় নয় মাস। পরে সার্ভে, জিজাইন ভেটিংয়ের কাজে বাড়তি সময় লাগে। প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ করতে সময় লাগে আড়াই বছর। এখনো অধিগ্রহণ করা জমির বিপরীতে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কাজ চলমান আছে।

প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে তিন বছর অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়েছে। কারণে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

কাজ শুরু করতে বিলম্বের পাশাপাশি প্রস্তাবিত কুহেলিয়া সেতুর নকশা নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা। সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স নিয়ে আপত্তি তুলেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বিদ্যমান উচ্চতার বদলে সেতু ১২ দশমিক মিটার ভার্টিক্যাল করার পরামর্শ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এর পরিপ্রেক্ষিতে কুহেলিয়া সেতুর নকশা নতুন করে তৈরি সে অনুযায়ী সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সওজ অধিদপ্তর। কারণে সেতু নির্মাণে খরচ বাড়বে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা। সব মিলিয়ে মাতারবাড়ী প্রকল্পের যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে ২৯৯ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সময় প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৬০২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে কোটি ৮০ লাখ টাকায় সওজ অধিদপ্তরের কক্সবাজার অফিস ভবন এরই মধ্যে নির্মাণ শেষ হয়েছে।

মূল ডিপিপিতে দশমিক ১২ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ, দশমিক ১৮ কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন ৬৮০ মিটার দীর্ঘ কুহেলিয়া সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। লক্ষ্যে এসব অবকাঠামো নির্মাণে হাল্লা-মীর আখতার জয়েন্ট ভেঞ্চারের সঙ্গে ২৬৭ কোটি টাকার চুক্তি করে সওজ অধিদপ্তর।

আর ৩২০ কোটি টাকায় দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণের জন্য চুক্তি করা হয়।

পরবর্তী সময়ে সড়ক অবকাঠামোর পরিমাণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়। ১০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ, ৩৩ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয় ৫৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। তখনো প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্তই ছিল।

তবে নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শুরু না হওয়া, ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে এবার প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ২৯৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৯৫৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এরই মধ্যে ব্যয় মেয়াদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটি, যার সভাপতি সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের সচিব। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিটির চতুর্থ সভায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডিপিপি সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন