কাঁচা পাট রফতানি নিরুৎসাহিতের উদ্যোগ

আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাঁচা পাট রফতানি নিরুৎসাহিতের উদ্যোগ নিয়েছে ব্যক্তি খাতের পাটকল মালিকরা। আর এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কাঁচা পাট রফতানি বাণিজ্যসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজার যতটুকুই অবশিষ্ট আছে ততটুকুও থাকবে না। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রভাবে দেশে বিপুল পরিমাণ কাঁচা পাট উদ্বৃত্ত থেকে যাবে। বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ) শিপার্স কাউন্সিল অব বাংলাদেশের (এসসিবি) নেতারা গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলছেন, রফতানি ব্যাহত হলে শুধু কাঁচা পাট রফতানিকারকরাই নন, কৃষক শ্রমিকরাও সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

রাজধানীর মতিঝিলের এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজেএর চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী, সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান শিপার্স কাউন্সিল অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সম্প্রতি একটি মহল দেশে কাঁচা পাটের সংকট দেখিয়ে কাঁচা পাট রফতানির ওপর প্রতি টনে ২৫০ মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রতি মণে ৮০০ টাকার উপরে রফতানি শুল্ক আরোপের জন্য বস্ত্র পাট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছেন এবং কাঁচা পাট রফতানি বন্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। অবস্থায় গত ২৭ আগস্ট বস্ত্র পাটমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় পাট খাত সমন্বয় কমিটির ভার্চুয়াল মিটিংয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা এবং কাঁচা পাট রফতানি খাতকে সচল রাখার জন্য রফতানির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ না করার জন্য মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাটের গোড়া কেটে শক্তিশালী হাইড্রোলিক প্রেস মেশিনের মাধ্যমে তা ১৮২ দশমিক ২৫ কেজি বেল ওজনে পরিণত করে বৈদেশিক ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী লট তৈরি করে বিদেশে রফতানি করা হয়। রফতানি কার্যক্রমের প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে অসংখ্য শ্রমিক সম্পৃক্ত এবং ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশে লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাঁচা পাট রফতানি কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত। কাঁচা পাট রফতানি ব্যাহত হলে খাতসংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বেন।

বিজেএ এসসিবি নেতারা জানিয়েছেন, ১৯৮৪ সাল হতে পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চারবার কাঁচা পাট রফতানি বন্ধের কারণে প্রয়োজনীয় কাঁচা পাটের অভাবে বিদেশের অনেক জুট মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আমাদের বৈদেশিক বাজার ২৮-৩০ লাখ বেল হতে - লাখ বেলে সংকুচিত হয়েছে। আর নতুন করে রফতানি শুল্ক আরোপিত হলে আমাদের এখন যতটুকু কাঁচা পাটের আন্তর্জাতিক বাজার আছে, তাও আর থাকবে না। ফলে শতবছরের রফতানি বাণিজ্যে নিয়োজিত কাঁচা পাট রফতানি খাত একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

বিজেএ এসসিবি নেতারা বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি জুট মিলগুলো তাদের মজুদকৃত বিপুল পরিমাণ পুরনো কাঁচা পাট তাদের নিজস্ব সরবরাহকারীদের পাওনা টাকার পরিবর্তে ফেরত দেয়ায় সেই পাটও বাজারে চলে আসছে। আমাদের জানা মতে, সরকারি জুট মিলগুলো বন্ধের আগে দেশের অভ্যন্তরীণ কাঁচা পাটের চাহিদা ছিল প্রায় ৫৫ লাখ বেল। এর মধ্যে সরকারি জুট মিলগুলোর চাহিদা ছিল প্রায় ১৩ লাখ বেল। কিন্তু সরকারি জুট মিলগুলো বন্ধের কারণে তাদের ১৩ লাখ বেল কাঁচা পাটের চাহিদা বছর থাকছে না। তাই চলতি বছর দেশে লাখ লাখ বেল কাঁচা পাট উদ্বৃত্ত থেকে যাবে। উদ্বৃত্ত কাঁচা পাট হতে আমরা বর্তমানে মাত্র আট-নয় লাখ বেল কাঁচা পাট বিদেশে রফতানি করতে পারি। তাই আমাদের রফতানির পরও দেশে বিপুল পরিমাণ কাঁচা পাট উদ্বৃত্ত থাকবে।

রফতানি বাণিজ্যে নিয়োজিত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শতবছরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচা পাট রফতানি খাতকে সচল রাখতে সরকারের কাছে বেশকিছু দাবি জানান বিজেএ এবং এসসিবি নেতারা। তাদের উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে আছে কাঁচা পাট রফতানি বন্ধ না করা, রফতানির ওপর কোনো রকম শুল্ক আরোপ না করা, বারবার রফতানি বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা পাট রফতানিকারকদের ব্যবসায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়া করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত রফতানি খাতগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা সুবিধায় কাঁচা পাট রফতানিকারকদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং কাঁচা পাট রফতানির বিপরীতে সাবসিডি প্রদান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন