বাদামতল মোড় থেকে বারেক বিল্ডিং

সড়ক সংস্কারের নামে ভাঙা হচ্ছে ফুটপাত, বাড়ছে দুর্ঘটনা

ওমর ফারুক চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক আগ্রাবাদ বাদামতল মোড় থেকে বারেক বিল্ডিং মোড়। সড়ক সম্প্রসারণের নামে রাস্তার দুই পাশের পুরো ফুটপাত ভেঙে দেয়া হয়েছে। এখন পথচারীদের হাঁটতে হয় মূল সড়কে। গাড়ি আর মানুষ একই সড়কে হাঁটার ফলে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। নগরীর বাকি সড়কগুলোয় সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের নামে যেখানে-সেখানে ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরির অভিযোগ রয়েছে সদ্যবিদায়ী মেয়র নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, দিন দিন চট্টগ্রাম শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। উন্নয়নের নামেই শহরটিকে অকেজো করে তোলা হচ্ছে। নগরীর আগ্রাবাদ থেকে বাদামতল মোড় পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ফুটপাত না থাকলে মানুষ হাঁটবে কীভাবে? তাছাড়া নগরীর সড়কগুলোর ফুটপাত কিংবা ডিভাইডারে কয়েকটি ফুলের চারা লাগিয়ে ফুটপাতে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের কৌশলটা নগরীর ৬০ লাখ মানুষকে বোকা বানানোর মতোই।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের অর্ধশত সড়কের ফুটপাত এবং মোড়ে সবুজায়ন সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নির্মাণ করা হয়েছে দোকান। ফলে সংকুচিত হয়েছে পথচারী হাঁটার পথ। অনেক সময় বাধ্য হয়ে পথচারীকে সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হয়। অনেক ফুটপাতে ছাউনি নির্মাণ করা হলেও সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে বাণিজ্যিক দোকান। সৌন্দর্যবর্ধন সবুজায়নের বিষয়টি প্রশংসনীয় হলেও ফুটপাত দখল করে দোকান বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করায় পুরো উদ্যোগটিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

তবে চসিকের নবনিযুক্ত প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ফুটপাতে যত্রতত্র নির্মাণ করা অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, চসিকের সদ্য মেয়াদপূর্ণ হওয়া সাবেক কাউন্সিলরদের যোগসাজশে গড়ে তোলা হয় এসব স্থাপনা। ২০১৬ সালে চসিক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পরই বিলবোর্ড উচ্ছেদ পরিচ্ছন্নতায় চমক দিয়ে দায়িত্ব শুরু করেছিলেন নাছির উদ্দিন। কিন্তু সদ্যবিদায়ী মেয়রের আমলে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সড়ক, ফুটপাত সড়ক বিভাজককে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া দোকান-বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়।

এদিকে নগরীর ফুটপাত, সড়ক সড়ক বিভাজকে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য চসিকের আইন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন নবনিযুক্ত চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এছাড়া চসিকের ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একযোগে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।

বদলি আদেশে বলা হয়, রাজস্ব প্রশাসনের গতিশীলতা শৃঙ্খলা আনতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে।

চসিক প্রশাসক সুজন বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে অনেক ফুটপাতে বা যত্রতত্র দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে বিধি অনুসরণ করা হয়েছে কিনা, এতে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়েছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছি। এসব জায়গার মালিক স্টেট ডিপার্টমেন্ট। তাদের কাছে -সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আইন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। কোনো অনিয়ম প্রশ্রয় দেয়া হবে না। ফুটপাতের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হবে।

সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে গণশৌচাগার, খাবারের দোকান নার্সারির দোকান দেয়া হয়েছে। কথা ছিল নগরীর আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে সাধারণ মানুষের হাঁটার জন্য অত্যাধুনিক ওয়াকওয়ে করা হবে। থাকবে দ্রুত, ধীরে দৃষ্টপ্রতিবন্ধীদের হাঁটার উপযোগী ফুটপাত। কিন্তু সেখানে এখন বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান করা হয়েছে। বসার স্থানগুলোও দখলে নিয়েছে খাবারের দোকানদাররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, জামালখান মোড়ের দোকানগুলোর বিনিময়ে বড় অংকের টাকা পরিশোধ করেছেন লিজ গ্রহীতারা। কিন্তু সেই টাকার খুব অল্পই সিটি করপোরেশনের ফান্ডে গেছে। বাকি টাকা ঢুকেছে তত্কালীন কাউন্সিলর করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যক্তিদের পকেটে।

এছাড়া জামালখান মোড়ের পশ্চিম পাশে নালা ফুটপাতের ওপর স্লাব বসিয়ে তার ওপর অ্যাকুয়ারিয়াম দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। চসিকের ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলরের যোগসাজশে নালার ওপর দোকানগুলো চুক্তিভিত্তিক লিজ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

নগরীর প্রবর্তক মোড় থেকে পাঁচলাইশ মোড় যেতে সড়কে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে চসিকের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ নিয়ে ফুটপাতে দোকান নির্মাণ করেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। রাস্তাঘেঁষে নির্মাণ করা দোকান দুটির একটি হচ্ছে ফ্রেশ ফুড রেস্টুরেন্ট, অন্যটি ওষুধের দোকান শ্রেষ্ঠা মেডিসিন দুই দোকানের জন্য ব্যস্ততম ওই সড়কে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। চসিক থেকে চুক্তিতে জমি লিজ নিয়ে ফুটপাতের ওপর দোকান নির্মাণ করেছে গ্রিড ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। চসিকের এক প্রকৌশলীই বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন