মহামারীতে বেড়েছে অন্যান্য রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি

সৌম্য রঙ্গরাজন

উদ্দীপনা প্রতিক্রিয়ার মাঝে ফাঁকা জায়গা রয়েছে। প্রতিক্রিয়া বেছে নেয়ার শক্তি আমাদের রয়েছে। আমাদের প্রতিক্রিয়ায়ই বিকাশ মুক্তি নিহিত রয়েছেভিক্টর ফ্রাঙ্কল।

আমাদের একে সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকা শিখতে হবে। দেশব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বিস্তৃতির সঙ্গে এটা এখন মার্কিন সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া। মতামতটি যখন লেখা হচ্ছে তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেসের সংখ্যা ছয় মিলিয়ন পেরিয়ে গেছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে লাখ ৮০ হাজারে।

আমার প্রতিষ্ঠান দ্য ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান এবং আমার স্টেট দুটিই তুলনামূলকভাবে সফল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আমাদের মেডিকেল সেন্টারের ইনসিডেন্ট কমান্ড সেন্টার খুলে দেয়া হয়েছে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে। আমাদের রিজিওনাল ইনফেকশাস কন্টেইনমেন্ট ইউনিট (আরআইসিইউ),  বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে উচ্চমাত্রার সংক্রামক রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করতে। এটি চালু করা হয় ১০ মার্চ রাজ্যে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে। দ্রুত নেয়া পদক্ষেপগুলো অনেক জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে এবং খুব বাজে অবস্থায়ও লড়াই করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। যদিও এটুকু পুরো গল্প বলে না।

জাতীয়ভাবে কভিড-১৯-এর কাছে আমাদের হার মানতে হয়েছে, যেখানে লাখ ৮০ হাজার মা, বাবা, দাদা-দাদি, ভাই বোন, সন্তানাদি এবং বন্ধুকে হারিয়েছি; যা কিনা বেশ বিপর্যয়কর। কেবল যারা ভাইরাসে মারা গেছে তারা এবং তাদের পরিবারই দেশের দুর্বল মহামারী প্রতিক্রিয়ার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েনি। আমরা এখন হাসপাতালে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রাদুর্ভাবের কারণেও মৃত্যু দেখছি। এমন নয় যে কেবল কভিড-১৯-এর কারণেই মারা যাচ্ছে। পরবর্তী ঝড়টি এসেছে বিলম্বিত সেবার কারণে, যার ওপর ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়েছে। সে সঙ্গে আমাদের সমস্যাসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোও আছে।

কভিড-১৯ এখন যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় শীর্ষ মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচিত। এর অর্থ এমন আরো দুটি সমস্যা আছে যাতে মৃত্যু ক্ষতির হার আরো বেশি। সেগুলো হলো যথাক্রমে হূদরোগ ক্যান্সার। গ্রীষ্মে আমি শেষ ধাপে হার্ট ফেইলিউরের কারণে মৃত্যু দেখেছি এবং চিকিৎসার সুযোগের স্বল্পতার কারণে অগ্রসরমান ধাপে বেশকিছু নতুন ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হতে দেখেছি। এবার গ্রীষ্মে সরাসরি কভিডের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন যত রোগী দেখেছি, তা আমার পুরো মেডিকেল ক্যারিয়ারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি তদন্ত দেখাচ্ছে যে পাঁচটি রাজ্যে আরো হাজার ৩০০ রোগী হূদরোগজনিত সমস্যার কারণে মারা গেছে। যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। নিউইয়র্ক সিটি হূদরোগে হাজার ৭০০-এর বেশি অতিরিক্ত মৃত্যু দেখেছে। কভিড-১৯- আক্রান্ত রোগী উপচে পড়ার কারণে হাসপাতালগুলো অন্য রোগীদের সেবা দিতে পারছে না। এখানে হূদরোগজনিত সমস্যা, ক্যান্সারের জটিলতা কিংবা অনির্ণেয় ক্যান্সার রোগী এবং আরো অন্যান্য সমস্যায় আক্রান্তরা অন্তর্ভুক্ত। গোটা শহরের হাসপাতালগুলোয় কোনো বেডই খালি ছিল না।

প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার শনাক্ত করা হয় হাসপাতালেহয় জরুরি বিভাগে কিংবা হসপিটাল ফ্লোরে। যখন হাসপাতালে কোনো বেড খালি ছিল না তখন শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া স্বভাবতই ব্যাহত হয়। সময়টাতেই ক্যান্সারের কোষগুলো অবিচ্ছিন্নভাবে বাড়তে শুরু করে। একইভাবে হূদরোগও প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা না গেলে তা পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কিন্তু কভিড-১৯-এর নজিরবিহীন সময়ে সেই কাজটি বেশ দুরূহ হয়ে উঠেছে।

সায়েন্টিফিক আমেরিকান থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন