ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগবঞ্চিত ৬৩ শতাংশ গ্রামীণ পরিবার

ডিজিটাল লিটারেসি -সেবা প্রসারে অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূর করতে হবেবাংলাদেশে শহর গ্রামের মধ্যে বৈষম্য ক্রমেই নানা মাত্রা লাভ করছে। আয় সম্পদের বৈষম্যের পাশাপাশি প্রযুক্তি সুবিধা প্রদানেও বড় ধরনের পার্থক্য বিদ্যমান। ইন্টারনেট ব্যবহারে দামের ক্ষেত্রে গ্রাম-শহরের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক ফারাক। রাজধানী ঢাকার চেয়ে দেশের অন্যান্য এলাকায় এর দাম চার গুণ বেশি। সম্প্রতি নতুন একটি বৈষম্য যুক্ত হয়েছে। আর তা হলো, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত গ্রামীণ পরিবার। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট সেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ৬৩ শতাংশ গ্রামীণ পরিবার। ইন্টারনেট প্রাপ্যতা দক্ষতার ক্ষেত্রে শহর-গ্রাম, নারী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য বিদ্যমান। এখন গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহারের যে বৈষম্যের কথা বলা হচ্ছে, এটি কভিডের কারণে অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষা খাত থেকে নানা ডিমান্ড আসছে আমাদের কাছে। এখন গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের যে সংকট, সেটির মূল কারণ হচ্ছে অবকাঠামোর অভাব। আসলে গ্রাম পর্যায়ে অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট সেবার মান খুবই খারাপ। আর কেবল নেটওয়ার্কও ইউনিয়ন পর্যায়ে ভালোভাবে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আরেকটি বড় সংকট হচ্ছে ডিভাইসকে কেন্দ্র করে। ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সেবা ডিজিটাল মাধ্যমে দেয়ার ঘোষণা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে সেবা যারা গ্রহণ করবে তাদের কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে, সেটিও ভাবতে হবে। সক্ষমতা না থাকলে -লার্নিং, টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল ব্যাংকিংসহ ধরনের যত উদ্যোগ, তা থেকে গ্রামাঞ্চলের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বঞ্চিত হবে। আমাদের মতে, যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করতে হবে। আর সেটা করতে হলে সে আলোকে নীতিমালা গ্রহণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। যখন চাহিদা বাড়ে তখন জনগণের মাঝে পরিবর্তনের আগ্রহও বৃদ্ধি পায়। -সেবাগুলোর চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি এই চাহিদা ডিজিটাল লিটারেসির (সাক্ষরতা) ক্ষেত্রেও বাড়ছে। বাংলাদেশে ডিজিটাল লিটারেসি অর্জনে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো।

রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, লিঙ্গগত, ধর্মীয়সহ অন্য সব ধরনের বৈষম্যের পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বে ডিজিটাল ডিভাইড বৈষম্যের একটি নতুন মাত্রা হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা বা অর্থবিত্ত বা সামাজিক প্রভাব থাকার ফলে একদল মানুষের ক্ষমতায়ন ঘটে, আর এগুলো না থাকার ফলে অন্য একদল মানুষ ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে। ফলে সৃষ্টি হয় বৈষম্যের। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দক্ষতা থাকা বা না-থাকার ওপর ভিত্তি করেও রকম বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। ডিজিটাল ডিভাইডের দুটি স্তর রয়েছে। প্রথমটি প্রবেশাধিকারসংক্রান্ত এবং দ্বিতীয়টি ব্যবহারসংক্রান্ত। যাদের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (বিশেষত ইন্টারনেট) ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে এবং যাদের সেই সুযোগ নেই, তাদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইড রয়েছে। আবার যাদের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, তাদের মধ্যে যারা প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশি দক্ষ আর যারা তুলনামূলকভাবে কম দক্ষ, তাদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইড রয়েছে।

তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ থাকা তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। প্রথমত, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (যেমন: কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন) থাকতে হবে; দ্বিতীয়ত, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান দক্ষতা থাকতে হবে এবং তৃতীয়ত, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট সময় থাকতে হবে। গ্রামীণ পরিবারগুলো তিনটি সূচকেই পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমান বিশ্ব একটি তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইডের কারণে শহরগুলো এগিয়ে রয়েছে এবং গ্রামগুলো পিছিয়ে। সরকার সব খাতে ডিজিটালাইজেশনে জোর দিয়েছে। করোনার প্রভাবে এটি আরো গতিশীল হয়ে উঠেছে। সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনামূলক উদ্যোগের পেমেন্টও হচ্ছে ডিজিটালি। এমন অবস্থায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ যদি ইন্টারনেট ব্যবহারের বাইরে থাকে তাহলে গ্রামীণ পরিবারগুলো যেমন সেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হবে, তেমনি সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতিমুক্তভাবে সেবা প্রদানও কঠিন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতা না থাকায় গ্রামীণ পরিবারের প্রতারিত হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই সমস্যা চিহ্নিতপূর্বক তা সমাধানে সতর্কতার সঙ্গে নীতিমালা গ্রহণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। শুরু থেকেই শহর গ্রামের মধ্যে নানা বৈষম্য বিদ্যমান।  যদি আমরা জনগণের মাঝে যথাযথ ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো তা ব্যবহারের দক্ষতা তৈরি করতে না পারি তাহলে বৈষম্য আরো প্রকট হবে। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে সব শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি সুবিধা প্রণয়ন অনুশীলন, ইন্টারনেটসংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং লৈঙ্গিক মাত্রার দিকে লক্ষ রেখে এগোতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন