অ্যাপ স্টোর থেকে উইচ্যাট সরানোর নির্দেশ স্থগিত

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে উইচ্যাট নিষিদ্ধে গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এক নির্বাহী আদেশে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত রোববার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর এবং গুগলের প্লে স্টোর থেকে উইচ্যাট ডাউনলোড নিষিদ্ধ করা এবং অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলার কথা ছিল। ওইদিন প্রথম প্রহরে এক মার্কিন বিচারক উইচ্যাট অ্যাপ স্টোর থেকে সরাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এর ফলে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে উইচ্যাটের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না। খবর রয়টার্স।

গত সপ্তাহে প্রকাশ পায় চীনভিত্তিক ইন্টারনেট কোম্পানি টেনসেন্ট হোল্ডিংস নিয়ন্ত্রিত মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক চীনের নাগরিক এবং স্থানীয় ব্যবহারকারীর অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে এক মার্কিন বিচারকের মন্তব্যে এমন ইঙ্গিত মিলেছিল।

গত বৃহস্পতিবার এক শুনানিতে মার্কিন বিচারক লরেল বিলার বলেন, উইচ্যাট ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য অত্যন্ত অস্পষ্ট এবং উইচ্যাটের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিতে প্রাথমিক আদেশ দিতে প্রস্তুত আছেন। অবশ্য সেদিন বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত ইস্যু করেননি তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপ স্টোর থেকে উইচ্যাট সরানোর নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিয়ে বিচারক লরেল বিলার বলেন, উইচ্যাট ব্যবহারকারী যারা সেবাটির কার্যক্রম চালু রাখার পক্ষে, তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। এছাড়া সেবাটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন যেসব যুক্তি আশঙ্কার কথা উপস্থাপন করেছে তা অস্পষ্ট। আমরা বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর সাময়িক সমস্যার কথা বিবেচনায় নিয়ে নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ জারি করেছি।

গত আগস্ট উইচ্যাট নিষিদ্ধে এক নির্বাহী আদেশে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই দিন আরেক চীনভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি বাইটডান্স নিয়ন্ত্রিত শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধে পৃথক একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি উইচ্যাট টিকটক। যে কারণে সেবা দুটির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন উইচ্যাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পরই সেবাটির বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী এর বিরোধিতা করেন এবং সানফ্রান্সিসকোতে জেলা মার্কিন আদালতে একটি প্রস্তাব দায়ের করেছিলেন। যেখানে উইচ্যাটের স্বতন্ত্র ব্যবহারকারী, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন গ্রুপের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম ওরাকলের কাছে বিক্রির লক্ষ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে টিকটকের প্যারেন্ট কোম্পানি বাইটডান্স। চুক্তিতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

উইচ্যাট টিকটক ইস্যুতে এরই মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। যেখানে হুঁশিয়ার করা হয়, চীন তাদের দুই সেবাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো পদক্ষেপ নাকচ করতে সক্ষম। বেইজিংয়ের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় উইচ্যাট টিকটকের স্থানীয় কার্যক্রম নানা অজুহাত অপকৌশলে বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন, যা কোনো পরিস্থিতিতেই মেনে নেয়া হবে না।

চীনের দাবি, বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে প্রতিযোগিতা নয়; একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকা ফার্স্ট নীতি অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত হেনস্তার শিকার হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতি থামাতে একের পর এক অন্যায় অভিযোগ করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেক্কা দিতে সক্ষম সব চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন তথ্য নিরাপত্তার অভিযোগ তুলছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসার দিক থেকে দাবিয়ে রাখতে পরিকল্পিত ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন