ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থতার কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির ১৭ পরিচালকের পদ শূন্য ঘোষণা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পাশাপাশি এ কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ২ শতাংশ বা এর বেশি শেয়ার রয়েছে এমন যেকোনো শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে বিদ্যমান শূন্য পদ পূরণের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। গতকাল বিএসইসি থেকে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক বাদে অন্য পরিচালকদের প্রত্যেককে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার না থাকে, তাহলে তাদের পদ শূন্য হয়ে যাবে। আর শূন্য পদে পরিচালনা পর্ষদ বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে যাদের ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার রয়েছে, তাদেরকে দিয়ে আইনের পরিপালন করতে হবে। এরই মধ্যে এ বছরের ২ জুলাই চিঠি পাঠিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে যেসব কোম্পানির পরিচালকদের ন্যূনতম ২ শতাংশ করে শেয়ার নেই, তাদেরকে কমিশনের নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়েছিল।
কমিশনের আদেশে আরো বলা হয়েছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে নয় কোম্পানি ১৭ জন পরিচালকের কাছে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার নেই এবং তারা কমিশনের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে এখনো পরিচালকের পদ ধরে রেখেছেন। ফলে কমিশন এ ১৭ পরিচালকের পদ শূণ্য ঘোষণার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদকে ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার রয়েছে এমন যেকোনো শেয়ারহোল্ডারদের দিয়ে এ আদেশ জারির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পর্ষদের শূণ্য পদ পূরণের নির্দেশ দিচ্ছে।
কমিশনের আদেশে যে নয় কোম্পানির ১৭ পরিচালক তাদের পদ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিআইসি) পরিচালক সোহাইল হুমায়ুন, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালক পাইওনিয়ার ড্রেসেস লিমিটেড, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক মো. লোকমান চৌধুরী, ইনটেক লিমিটেডের পরিচালক এটিএম হাবিবুল আলম, সাদিকা মাহবুব ও আনিসুজ্জামান, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক শারমিন নাসির ও দিলরুবা শারমিন, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালক শফিক আহমেদ, আজাদ মোস্তফা, আজিজ মোহাম্মদ এরশাদ উল্লাহ, ফারহানা ইসলাম সোনিয়া ও সাদ কাদির বিন সোলাইমান, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালক হাবিব ই আলম চৌধুরী ও বদলুর রহমান খান, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল এবং ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডের পরিচালক শাহিনুর আলম।
এ বছরের ২ জুলাই তালিকাভুক্ত ২২ কোম্পানির ৬১ জন পরিচালককে ৪৫ দিনের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছিল বিএসইসি। কমিশনের আল্টিমেটাম পাওয়ার পর এরই মধ্যে ২৫ জন পরিচালক ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছেন। অন্যদিকে ১৯ জন পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
উল্লেখ্য, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ও এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়টি নিয়ে ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত নোটিফিকেশন জারির পর থেকেই বিবাদ চলে আসছে। বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা-পরিচালক নোটিফিকেশনটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। তবে আইনি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগের রায় বিএসইসির পক্ষে আসে। এরপর ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়টি পরিপালনের বিএসইসির পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোকে তাগাদা দেয়া হলেও এখনো প্রায় অর্ধশতাধিক কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকের কাছেই ন্যূনতম শেয়ার নেই।
