টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে স্বপ্নসহ ৩ প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাশ্রয়ী মূল্যে মধ্যবিত্তের হাতে পেঁয়াজ তুলে দিতে নিত্যপণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান স্বপ্নসহ তিন প্রতিষ্ঠান দেশের অনলাইন প্লাটফর্মে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আজ আরো দুটি প্রতিষ্ঠানকে পেঁয়াজ বিক্রির অনুমোদন দেয়া হবে।

টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রিতে অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো স্বপ্ন, চালডাল সবজিবাজার ডটকম। এছাড়া সিন্দাবাদ ডটকম, বিডিসোল ডটকম নামের আরো দুটি প্রতিষ্ঠান গতকাল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠান আজ বিক্রির অনুমোদন পেতে পারে।

টিসিবির আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাজধানী ঢাকা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দারা তিন অনলাইন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টিসিবির সাশ্রয়ী মূল্যের পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। তবে একজন ক্রেতা সপ্তাহে একবারই সর্বোচ্চ তিন কেজি পেঁয়াজের অর্ডার দিতে পারবেন, প্রতিটি অর্ডারের ডেলিভারি মূল্য ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। সে হিসেবে তিন কেজি পেঁয়াজ বাসা পর্যন্ত আসতে ক্রেতার খরচ দাঁড়াবে ১৩৮ টাকা। গতকাল বিকাল থেকে স্বপ্ন, চালডাল, সবজিবাজারের ওয়েবসাইটে অর্ডার নেয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া উইন্ডি নামে নারী উদ্যোক্তাদের একটি কমন প্লাটফর্ম থেকেও টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি হবে। চাহিদা জোগানের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরো বাড়বে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আপাতত দিনে আধা টন করে পেঁয়াজ পাবে তিনদিন পরপর টিসিবি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে পারবে।

অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। প্রতিষ্ঠানগুলোর গুদামঘর, ডেলিভারি ক্যাপাসিটি, -কমার্স ওয়েবসাইট -ক্যাবের সুপারিশ বিবেচনায় টিসিবির ডিলারশিপ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পুরো প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, টিসিবি -ক্যাব একটি অভিন্ন বিধিমালা বা এসওপি প্রণয়ন করেছে, যা মেনে চলতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বাধ্য থাকবে।

ব্যাপারে -ক্যাবের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার বলেন, আজ আমরা মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য সরকারের সহযোগিতায় অনলাইনে পেঁয়াজ নিয়ে এসেছি। যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করবে, তারা প্রত্যেকে আমাদের বলেছে তারা নিয়ম মেনে চলবে। যে বিধিমালা দেয়া হয়েছে, তা অনুসরণ করবে এবং ব্যবসার চেয়ে মানুষের সেবাকে গুরুত্ব দেবে।

সুপারশপ স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, সংকটময় অবস্থায় সরকার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সবার উচিত সরকারের পাশে দাঁড়ানো। টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি। যেহেতু করোনা মহামারী এখনো বিদায় নেইনি, সেহেতু আমাদের সবার উচিত সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সেবা প্রদান করা। এছাড়া স্বপ্ন নভেল করোনাভাইরাস আগমনের শুরুর দিক থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করে আসছে।

চালডালের ডিরেক্টর ইশরাত নাবিলা বলেন, সরকার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে ত্বরিত সাড়া সেবা দিচ্ছে তার কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত না থাকলে জানতে পারতাম না। আমাদের সরকারি অনেক ব্যবস্থা ক্রমেই উদার হচ্ছে টিসিবি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর প্রমাণ।

গতকাল এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ঘরে বসে স্বস্তির পেঁয়াজ নামে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রির কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এতে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য সচিব . মো. জাফর উদ্দীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমি ক্রেতাসাধারণকে অনুরোধ করব, আপনারা আতঙ্কিত না হয়ে অনলাইনে নির্ধারিত পরিমাণ পেঁয়াজ কিনুন। একটি পরিবারের জন্য এক সপ্তাহে কত কেজি পেঁয়াজ লাগে, সেভাবে সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আপনারা সীমা মেনে চলুন। কোথাও কোনো অনিয়ম দেখা দিলে -ক্যাব বা এখানে যে সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে তাদের জানান। তারা দ্রুত সমাধান করবে।

বিশেষ অতিথি ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের সহযোগিতার ভিত্তিতে কল্যাণের একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে এটি। এর আগেও আমরা এসব উদ্যোগে সফলতা পেয়েছি। সরকারের একটি কল্যাণমূলক সেবা টিসিবির পণ্য। এটা আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য -ক্যাবের সঙ্গে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান বলেন, টিসিবি সাধারণ ট্রাকসেলের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষদের নিত্যপণ্য সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু অনলাইন শপগুলো থেকে পেঁয়াজ বিক্রির মাধ্যমে যেসব ক্রেতা হয়তো লাইন ধরে পণ্য ক্রয় করেন না, তাদের জন্য সুযোগ তৈরি হলো। সরকারের সেবা অনলাইনে বিস্তৃতির মাধ্যমে আরো বেশি মানুষকে সংযুক্ত করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন