বহদ্দারহাট-কালুরঘাট সড়ক সংস্কারে ধীরগতি, মান নিয়েও প্রশ্ন

সুজিত সাহা চট্টগ্রাম ব্যুরো

২০১৬ সালের শুরুতে ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পের পাইপলাইন বসানোর জন্য আরাকান সড়কের (বহদ্দারহাট-কালুরঘাট) একটি লেন বন্ধ ছিল প্রায় চার বছর। এরপর ওয়াসার কাছ থেকে সড়কের বন্ধ অংশ বুঝে নিয়ে সংস্কার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের শুরুতে ৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মাত্র পাঁচ কিলোমিটার সড়কটির সংস্কারকাজ ওই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজের ধীরগতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি চসিক। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করলেও নিম্নমানের কাজ, অনিয়মের কারণে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কারের পুরোপুরি সুফল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে সড়ক সম্প্রসারণ, সংস্কার কালভার্ট নির্মাণের জন্য হাজার ২৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ সংস্কারের মেগা প্রকল্পের অংশ হিসেবে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় চসিক। প্রকল্পের অধীনে বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়কে মিড আইল্যান্ড, রাস্তার উভয় পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ফুটপাত, জনগণের চলাচলের পথসহ সৌন্দর্যবর্ধন আলাদা ডেডিকেট বাস লেন যাত্রীসাধারণের ওঠা-নামার সুযোগ থাকবে। কিন্তু প্রকল্প কাজের সিংহভাগ শেষ হলেও সড়কটি সম্প্রসারণ সংস্কারকাজের অধিকাংশ করা হয়নি। আগে সড়কটি চার লেনের থাকলেও বর্তমানে ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। কিন্তু ছয়লেনে উন্নীত করতে পর্যাপ্ত ভূমির অভাবে কিছু কিছু অংশে চার লেনেই সংস্কার করা হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান থাকলেও সড়কের গুরুত্বপূর্ণ সেতু কালভার্ট চার লেনে রেখে সংস্কার চলমান রয়েছে। পূর্বের বিদ্যমান সড়ক বিভাজক (ডিভাইডার) রেখেই ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চালাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে সড়কটির একটি লেন বড় থাকলেও অন্য লেনটি তুলনামূলক ছোট থাকছে। তাছাড়া ফুটপাত নির্মাণকাজ শেষ হলেও অনেক অংশেই ভেঙে গেছে। ফুটপাতের ওপর টাইলস বসানো হলেও বিভিন্ন অংশে টাইলসগুলো ভেঙে যাচ্ছে। এছাড়া পূর্বের ন্যায় যত্রতত্র ওপেনার (উইটার্নের জন্য বিভাজকের খোলা অংশ) থাকায় সড়কটিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়াসার সংস্কারকাজের কারণে কার্যাদেশ পাওয়ার পরও ঠিকাদাররা কাজ শুরু করতে পারেনি। তাছাড়া সিঅ্যান্ডবি এলাকার একটি সেতুর উভয় পাশে ওয়াসার পাইপলাইন উন্মুক্ত থাকায় সেতুটি প্রকল্পের অধীনে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে না। ফলে সিঅ্যান্ডবি মোড় দিয়ে কালুরঘাট বিসিক, কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার যানবাহনের কারণে তীব্র যানজট লেগে থাকে ওই এলাকায়। প্রকল্পটি বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সম্প্রসারণের কথা থাকলেও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র্যাম্পের অংশটি সংস্কার না করেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে চসিক। কারণে বহদ্দারহাট মোড় থেকে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। ফ্লাইওভারের র্যাম্পসংলগ্ন অংশে একটি কালভার্ট ভেঙে গেলেও সেটি সংস্কার না করে প্রকল্পের কাজ চালু রাখায় প্রকল্পটির সুফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ চসিকের প্রকৌশলীরাও।

জানতে চাইলে চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু ছালেহ বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ছাড়াও নানা কারণে বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের কাজটি এখনো শেষ হয়নি। তবে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর অধীনে ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নয়নকাজ চালু থাকায় প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই প্রকল্পটির কাজ দৃশ্যমান হবে। তাছাড়া যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নিরসন করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আরাকান সড়ক দিয়ে কালুরঘাট বিসিক (পুরনো), সম্প্রসারিত কালুরঘাট বিসিক, মোহরা ভারী শিল্প এলাকা এবং কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার বিভিন্ন ভারী যানবাহন ২৪ ঘণ্টা চলাচল করে। কিন্তু বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নয়নকাজের কারণে এক কিলোমিটারের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ব্রিজটি আরাকান সড়কের একটি লেনের অর্ধেক অংশ দখল করে নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর কানেকটিং ব্রিজ উঠে আসায় সড়কটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ চসিক প্রকৌশলীদের।

নাম প্রকাশ না করে চসিকের সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছি। কয়েক মাস আগে প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়ে অভিযোগও দেয়া হয়েছে। ব্রিজটির কারণে বহদ্দারহাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের একটি বড় অংশ কয়েক ফুটের বেশি উঁচু করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

স্থানীয় একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ছয় লেনের সড়ক সংস্কার সম্প্রসারণকাজ চলমান থাকলেও নিম্নমানের কাজের কারণে এরই মধ্যে সড়কের অনেক অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এরই মধ্যে অভিযোগ দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্ণপাত করছে না। তাছাড়া সড়কটির ওপর কার্পেটিং করা হলেও ড্রেনেজ উন্নয়নকাজের কারণে প্রকল্পের চলমান কাজের অনেক অংশই নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে কাজ চলতে থাকলে আরাকান সড়কের উন্নয়ন সত্ত্বেও সুফল মিলবে না বলে অভিযোগ করেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প অনুমোদনের পর পাঁচ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার সম্প্রসারণে ১২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ১২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্প কাজের সংযোগস্থলের সমন্বয়হীনতা, ফাইনাল কার্পেটিংয়ের আগে ফুটপাত টাইলসের কাজ শেষ করায় এরই মধ্যে সংস্কারকাজের অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন