নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ক্রমে বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ পর্যায়ে এসে আক্রান্তের হার বাড়লেও কমছে মৃত্যুর হার। পরিস্থিতিটা একটা ধাঁধার মতো। বেশির ভাগ মানুষ এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিল যে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ যতই বাড়বে মৃত্যুর হারও সে অনুপাতে বাড়তে থাকবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা তেমনটা হতে দেখিনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন? ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সরকারি ডাটা থেকে আমরা সে সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেতে পারি।
গ্রীষ্মের শেষ ভাগে করোনাভাইরাসের পজিটিভ কেসের গঠন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত, সংগতিপূর্ণ সংজ্ঞা তৈরি হয়েছে। এটি একটি ল্যাব দ্বারা কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম একবার পজিটিভ কভিড-১৯ টেস্ট রেজাল্ট হিসেবে সংজ্ঞায়িত। কোনো ব্যক্তি যদি একবারের বেশি পজিটিভ আসে, সেক্ষেত্রেও একবারই হিসাবে ধরা হবে। এক্ষেত্রে নেয়া হবে প্রথমবার পজিটিভ আসা টেস্টটি।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সরকারি ডাটায় দেখা যায়, ৫ এপ্রিল সংক্রমণ শিখর স্পর্শ করে, যখন সংক্রমণের সংখ্যা হয় ৫ হাজার ৪৫১। সংক্রমণ তলে গিয়ে পৌঁছে ১০ জুন। তখন এটি গিয়ে দাঁড়ায় ১০১-এ। খুব সাম্প্রতিক সময়ে এসে সংক্রমণ আবারো বাড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি কেসের সংখ্যা বেড়েছে দিনপ্রতি ২ হাজার ৬০০-এর বেশি, যা অবশ্য বেশ উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে। অন্যদিকে মৃত্যুর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে এ হার বেশ নিচের দিকে এবং সংখ্যার দিক থেকে তা প্রতিনিয়ত নিচের দিকে নামছে। এটা মনে রাখা জরুরি যে কেসের সংখ্যা বাড়ছে এজন্য না যে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি বাড়ছে মূলত টেস্টের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে। বিশেষ করে সেসব অঞ্চলে যেখানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।
সংক্রমণ বাড়লেও মৃতের সংখ্যা যে বাড়ছে না তার মূল কারণটি হলো পরীক্ষা বৃদ্ধির কারণে শনাক্তের সংখ্যা বাড়লেও প্রকৃত সংক্রমণ একই রকম আছে। আমরা এটা জানি জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের করা পর্যবেক্ষণ প্রোগ্রামের কারণে। যেখানে হিসাব করে জানানো হয়েছে যে আগস্টের ২৫ তারিখ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে প্রতি দুই হাজার জনে কেবল একজন মানুষ আক্রান্ত এবং সপ্তাহে প্রতি ২৭ হাজারে কেবল একজন মানুষ কভিড আক্রান্ত হয়েছে। এ অনুপাতটি বেশ কয়েক মাস ধরেই স্থির রয়েছে। এ অনুপাত আবার ওয়েলশে আরো কম। যেখানে প্রতি ২২০০-এ একজন আক্রান্ত। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের নজরদারি প্রোগ্রামের পরিসরও বিস্তৃত করেছে।
জনমিতি-সংক্রান্ত প্রশ্ন
এটা খুবই সম্ভব যে জুন থেকে যেসব মানুষ করোনায় পজিটিভ হচ্ছে তাদের মাঝে তরুণদের সংখ্যা বেশি এবং বিপরীতে আক্রান্তের তালিকায় হ্রাস পাচ্ছে বয়স্কদের সংখ্যা। যা কিনা নাটকীয়ভাবে আক্রান্তদের জন্য অপেক্ষাকৃত কম মারণঘাতী হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
মার্চ ও এপ্রিলে (জুনে ন্যূনতম হার স্পর্শ করার আগে) অ্যান্টিবডি টেস্টে ১৮ থেকে ৩৪ বছরের তরুণদের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ছিল। তাই এখানে আমাদের আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে কঠোর লকডাউনের বাইরে তরুণদের মাঝেই সংক্রমণের হার বেশি ছিল।
প্রাথমিকভাবে কভিড-১৯-এ আপনার মৃত্যুর আশঙ্কা নির্ভর করছে বয়সের ওপর। সে আশঙ্কা বৃহৎ অংশে হ্রাস পাবে যদি আপনি তরুণ হয়ে থাকেন। পরিসংখ্যান আমাদের তেমন তথ্যই দিচ্ছে।
এ ডাটা অনুসারে আগস্টের শেষ পর্যন্ত ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মাঝে এক লাখের মধ্যে মাত্র একজনের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। এ ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে ৫০ হাজারে একজনে পরিণত হয় যদি বয়সের সীমা ৩০ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে থাকে। তাছাড়া এটি ১ হাজারে একজন হয় যদি বয়সসীমা ৬৫ বছর গিয়ে দাঁড়ায় এবং নারীদের জন্য সেটি ৭৫ বছর।
আরেকটি উপায়ে এ বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা যায়। যেখানে ৯০ বছরের ওপরের কোনো দাদির মৃত্যুর আশঙ্কা ১২০ গুণ বেশি, তার ৫২ বছর বয়সী মেয়ের তুলনায়। যিনি আবার তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ের তুলনায় ২৫৯ গুণ বেশি মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন। দিনপ্রতি মৃত্যুর হার কমার সঙ্গে বর্তমানে সব বয়সীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার একেবারে শূন্যের কাছাকাছি।
তরুণদের মাঝে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে এবং বয়স্কদের মাঝে সেটি কমছে, যার ফলে মৃত্যুর হারও ক্রমেই নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। এমনকি জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের দ্বারা নির্ণয় করা কেসের সংখ্যা একই থাকলে কিংবা কিছুটা বেড়ে যাওয়ার পরও সেখানে তরুণদের সঙ্গে তুলনা করলে বৃদ্ধদের সংক্রমিত হওয়ার হার নিচের দিকেই থাকছে।
এখানে তরুণদের কাছ থেকে বয়স্কদের মাঝে রোগ ছড়িয়ে দেয়ার উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু যদি রোগটিতে আক্রান্ত হয় তবে ভবিষ্যতে তার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। সে সঙ্গে বয়স্কদের মাঝে রোগটি ছড়িয়ে দেয়ার আশঙ্কাও অনেকটা কমে যাবে। এটি আরেকটি কারণ কেন সংক্রমণের সংখ্যা বাড়লেও উদ্বেগের মাত্রা নিচের দিকে বজায় থাকছে।
প্রকৃত মৃত্যুহার বের করা
মহামারীতে শেষ পর্যন্ত কভিড-১৯-এ মৃত্যুর হার কমবে, এমনকি যখন রোগটিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এ পরিসংখ্যানের শেষ চিত্রটি এটি বুঝতে সহায়তা করে যে আমরা সে অবস্থান থেকে এখনো কতটা দূরে আছি। কিন্তু এটা অনেকটা নিশ্চিত যে গত দুই মাসে আমরা সে পথে এগিয়ে গিয়েছি।
এ চিত্রটি প্রতিদিন রেকর্ড করা প্রতি এক হাজার কেসের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার তুলে ধরে।
মৃত্যুর হার পজিটিভ কেসের পেছনে পরে যাওয়ার বিষয়টি এখনো একটি অপরিশোধিত হিসাব। কিন্তু এটি এখনো কার্যকর নির্দেশনা। জুনের ২৪ তারিখ আমরা দেখেছি কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বেশ নিচের দিকে নেমে এসেছে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত কমতে কমতে নিচের দিকেই গড়িয়ে যাচ্ছে। এ পতন এতটাই দ্রুতগতিতে হচ্ছে যে এগুলোকে একটি গ্রাফে আবদ্ধ করার জন্য লগ স্কেলের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে।
এ হারে এমন পতন অব্যাহত থাকবে না এবং শেষ পর্যন্ত এ হার এক জায়গায় গিয়ে স্থির হবে, সে হারটি কত তা আমরা এখনো জানি না।
স্ক্রলডটইন থেকে সংক্ষেপে অনূদিত