গ্রাহকের কাছে তিতাসের বকেয়া বিল সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে তিতাস গ্যাসের বকেয়া বিল জমে গেছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিদ্যুৎখাত, সার কারখানা, ক্যাপটিভ পাওয়ার, শিল্পখাত, বাণিজ্যিক, আবাসিক ও মৌসুমী গ্রাহকদের কাছে এই অনাদায়ী বিল রয়েছে বলে সংসদীয় কমিটিতে জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। 

গত ১৫ মার্চ জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে জ্বালানি বিভাগের দেয়া এক প্রতিবেদনে এই বকেয়ার তথ্য উঠে আসে। 

আজ রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে গত বৈঠকের কার্যবিবরণীটি অনুমোদিত হয়। সেই কার্যবিবরণীতে এসব তথ্য উল্লেখ রয়েছে। 

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এসব বকেয়া বিল আদায়ে তৎপর হওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। 

বৈঠকে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার পরও গ্রাহকদের সংযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। বন্ধ থাকার পরও সংযোগ পাওয়ার নেপথ্যে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত উল্লেখ করে এসব অসাধু ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির সুপারিশ করেছে কমিটি।

কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও কমিটি সদস্য নসরুল হামিদ, মো. আবু জাহির, মো. আলী আজগর, মো. নূরুল ইসলাম তালুকদার, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর এবং বেগম নার্গিস রহমান। 

বৈঠকে কমিটির সদস্য ছাড়াও অংশ নেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তা এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কার্যবিবরণী পর্যালোনায় দেখা গেছে, আট শ্রেণির গ্রাহকের কাছে তিতাস সংযোগ লাইনের সহায়তায় গ্যাস সরবরাহ করে। এসব গ্রাহক শ্রেণির কাছে মাসিক গড় গ্যাস বিক্রির পরিমাণ ১ হাজার ৪৮৭ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৯৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি সরবরাহকারী এই সংস্থার গ্রাহক পর্যায়ে বিল বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। 

বকেয়ার মধ্যে সরকারি গ্রাহকের ৭৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং বেসরকারি গ্রাহকের কাছে ৩ হাজার ৮৮২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বকেয়া আদায়ের জন্য প্রচার, লিফলেট বিতরণ, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার, নোর্টিশ প্রদান এবং বিশেষ ক্ষেত্রে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশ করা হয়। 

বকেয়া আদায়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যবসায়িক সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমই ও সরকারি দফতরগুলোর সঙ্গে পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে। 

বৈঠকে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, বিল যে পরিমাণ বকেয়া তা তিন থেকে চার মাসের সমপরিমান। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। জবাবে টিজিটিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিল করার পরে শিল্পের ক্ষেত্রে ৪৫ দিন, আবাসিকের ক্ষেত্রে ২১ দিন ও সিএনজির ক্ষেত্রে ২০ দিনের সময় দেয়া হয়। কিন্তু এ সময়ে অনেকে বিল পরিশোধ না করার কারণে বকেয়া বাড়ছে। তিনি কমিটির সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলেন, চলতি বছরের মধ্যে বকেয়া সমতা পর্যায়ে নিয়ে আসবেন।

কমিটির সদস্য মো. আবু জাহির বলেন, এই সংসদসহ বিগত একাধিক সংসদেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের সিন্ধান্তসহ নির্দেশ ছিল। তারপরেও কার্যপত্রে দেখা যায়, ২০টি সিএনজি পাম্পে অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এতে প্রমাণিত জড়িত কেউ না কেউ রয়েছে।

জবাবে টিজিটিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অবৈধ সংযোগ দিতে যারা সহায়তা করেন তাদের বিরুদ্ধে যথানিয়মে ব্যবস্থা নেয়া হয়। একই সঙ্গে যারা এক জায়গায় দীর্ঘদিন কাজ করেন তাদের বদলি করা হচ্ছে, যাতে সিন্ডিকেট করে কিছু করতে না পারেন। এরই মধ্যে ৮২১ জন কর্মকর্তা এবং ৬৫৬ জন কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন