কমে আসছে বৈশ্বিক উত্তোলন

দীর্ঘমেয়াদে চাঙ্গা থাকতে পারে স্বর্ণের বাজার

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে স্বর্ণের বাজার রীতিমতো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বাড়তি চাহিদার জের ধরে এরই মধ্যে মূল্যবান ধাতুটির দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে। তবে চাহিদা দামের ক্ষেত্রে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকলেও করোনাকালে স্বর্ণের উত্তোলন খাত মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক কনসালটেন্সি কোম্পানি গ্লোবালডাটার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর কারণে চলতি বছর স্বর্ণের বৈশ্বিক উত্তোলন দশমিক শতাংশ কমে আসতে পারে। বাড়তি চাহিদার বিপরীতে উত্তোলন খাতের সম্ভাব্য মন্দা ভাব আগামী দিনগুলোয় স্বর্ণের দামে বিদ্যমান চাঙ্গাবস্থাকে আরো ত্বরান্বিত করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে চাঙ্গা থাকতে পারে মূল্যবান ধাতুটির দাম। খবর রয়টার্স মাইনিংডটকম।

গ্লোবালডাটার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের বিস্তার দেশে দেশে লকডাউনের জের ধরে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) স্বর্ণের বৈশ্বিক উত্তোলন খাত চরম সংকটে পড়েছিল। ওই সময় মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক উত্তোলন দাঁড়ায় সাকল্যে ১৪ লাখ আউন্সে। ২০১৯ সালের একই প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে ২৯ লাখ আউন্স স্বর্ণ উত্তোলন হয়েছিল। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বজুড়ে মূল্যবান ধাতুটির উত্তোলন কমেছে ১৫ লাখ আউন্স।

বছরজুড়ে পরিস্থিতির জের রয়ে যাবে বলে মনে করছে গ্লোবালডাটা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে উত্তোলনের রেকর্ড পতন ২০২০ সালজুড়ে বয়ে বেড়াবে স্বর্ণ শিল্প। বছর শেষে মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক উত্তোলন ২০১৯ সালের তুলনায় দশমিক শতাংশ কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্ভাব্য মন্দা ভাবের পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে করোনা মহামারীর ধাক্কা। লকডাউনের কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের খনিগুলোয় উত্তোলন কার্যক্রম সীমিত করতে বাধ্য হয় শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। নিউমন্ট, ব্যারিক গোল্ড, অ্যাংলোগোল্ডের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান খনিতে ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে স্বর্ণ উত্তোলন কমিয়ে আনে। ছুটিতে পাঠানো হয় শ্রমিকদের। সীমিত করা হয় কার্যক্রম। কর্মকর্তারা বাসা থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

করোনার কারণে ব্যারিক গোল্ড আর্জেন্টিনার ভেলাদেরো পাপুয়া নিউগিনির পোরগেরা খনি, নিউমন্ট নিকারাগুয়ার সেরো নেগ্রোসহ কয়েকটি খনির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রেখেছিল। করোনার সংক্রমণ লকডাউনের কারণে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার খনিগুলো থেকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) অ্যাংলোগোল্ডের স্বর্ণ উত্তোলন কমেছে ৬৩ হাজার আউন্স। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির আওতায় থাকা খনিগুলো থেকে মূল্যবান ধাতুটির সম্মিলিত উত্তোলন কমেছে ৮৫ হাজার আউন্স। পরিস্থিতি মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক উত্তোলন খাতে মন্দা ভাবের জন্ম দিয়েছে। যা বছর শেষে স্বর্ণের সামগ্রিক বৈশ্বিক উত্তোলন কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

২০২০ সালের শুরু থেকে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। মুদ্রা শেয়ারবাজারের দুর্বল অবস্থান বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। তুলনামূলক নিরাপদ বিবেচনা করে তারা স্বর্ণের বাজারে বাড়তি বিনিয়োগ করেছেন। এর জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে টানা বাড়তির দিকে ছিল স্বর্ণের দাম। আগস্টে এসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম হাজার ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়। ইতিহাসে আগে কখনই এত বেশি দামে স্বর্ণ বিক্রি হয়নি।

খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মূল্যবান ধাতুটির বাজারে বিদ্যমান ঊর্ধ্বগতি আরো চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাসের খবরে। বিষয়ে গ্লোবালডাটার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ভিনেথ বাজাজ বলেন, করোনা মহামারীর সময় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সংকট থেকে স্বর্ণের বাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তির পথে রয়েছে। যা মূল্যবান ধাতুটির দাম বাড়িয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চে উন্নীত করেছে। এখন চাহিদা বাড়তির দিকে থাকলেও বৈশ্বিক উত্তোলন সীমিত হয়ে এলে আগামী দিনগুলোয় আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বর্তমানের তুলনায় আরো বাড়তে পারে। ফলে বিশ্বজুড়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের আরো নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠতে পারে স্বর্ণ শিল্প।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন