যুক্তরাজ্যের হসপিটালিটি ব্যবসা

ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে আরেকটি লকডাউন

নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে মাত্রই ব্যবসায় ফিরতে শুরু করেছেন যুক্তরাজ্যের হোটেল, রেস্তোরাঁ, পাব বারের মালিকরা। কিন্তু ভাইরাসের পুনরুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন করে তাদের কপালে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে নতুন বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। অবস্থায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা ফের আরো একটি লকডাউনের জন্য মোটেই প্রস্তুত নন। তাদের মতে, আরেকটি লকডাউন দেশের হসপিটালিটি ব্যবসায় ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।

লিডস, ম্যানচেস্টার নিউ ক্যাসলে ১৭ বার রেস্তোরাঁ পরিচালনা করে আর্ক ইনস্পায়রেশন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মার্টিন ওলস্টেনক্রফট বলেন, সত্যি বলতে আরো একবার লকডাউনের মুখোমুখি হতে হলে আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না। এর আগের জাতীয় লকডাউনের ক্ষতি কাটিয়ে আমরা বেশ এগিয়ে যাচ্ছিলাম। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি সরকারের নির্দেশনা মেনে গত জুলাই থেকে আমরা নতুন করে ব্যবসা শুরু করি। আর এখন আবারো লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধ খুবই হতাশাজনক। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নিউ ক্যাসলে নতুন বিধিনিষেধ জারি করা হয়। এর আওতায় পড়েছে ওলস্টেনক্রফটের রেস্তোরাঁ। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখানকার সব বার   রেস্তোরাঁ রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। তাছাড়া ছয়জনের বেশি মানুষ একত্রে জড়ো না হওয়ার বিধিনিষেধেরও প্রভাব পড়েছে ওলস্টেনক্রফটের ব্যবসায়। ফলে গত এক সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত আর্ক ইন্সপায়রেশনের ম্যানচেস্টারের ভেনুতে তিন হাজার বুকিং বাতিল করা হয়েছে।

ওলস্টেনক্রফট বতর্মানে ক্রিসমাস মৌসুম নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন। সাধারণত বছরের এই সময়ে যুক্তরাজ্যের হসপিটালিটি ব্যবসা সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা থাকে। এক্ষেত্রে যদি নতুন করে লকডাউন জারি না- করা হয়, তার পরও ক্রিসমাসে অন্য বছরের চেয়ে ব্যবসায় পতন হবে ২০ শতাংশ। কিন্তু যদি ওই সময় লকডাউনের মতো পদক্ষেপ জারি করা হয়, তবে ব্যবসার পতন হবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। অথচ পুরো বছরে তারা এই ক্রিসমাসের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কারণ সময় যে ব্যবসা হয়, তা সম্মিলিতভাবে সারা বছরের মুনাফার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ওলস্টেনক্রফট বলেন, গ্রাহকদের মধ্যে নতুন বিধিনিষেধ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। তারা এসব বিধিনিষেধ ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। তাছাড়া সার্বিক অনিশ্চয়তা হসপিটালিটি ব্যবসার জন্য পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। কারণ ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে যদি আপনার কোনো ধারণা না থাকে তাহলে ব্যবসা পরিচালনায় গিয়ে আপনাকে হতাশাগ্রস্ত হতেই হবে।

যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যগোষ্ঠী ইউকে হসপিটালিটি জানিয়েছে, ব্রিটিশ হসপিটালিটি খাত বর্তমানে ছুরির ফলার ওপর দিয়ে হাঁটছে এবং খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ১০ লাখ মানুষের চাকরি বর্তমানে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ইউকে হসপিটালিটির প্রধান নির্বাহী কেট নিকোলস বলেন, ইট আউট টু হেল্প আউট প্রকল্পের মধ্য দিয়ে খাতটিতে বেশ গতি এসেছিল। কিন্তু গ্রাহকদের আত্মবিশ্বাস এখানো বেশ নিম্নপর্যায়ে রয়েছে। এখন যদি আবারো লকডাউন ঘোষণা করা হয়, তবে পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। কিন্তু ভাইরাসের কারণে লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপ করতেই হলে সেক্ষেত্রে সরকারকে বেশ সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে ব্যবস্থা করতে হবে সরকারি সহায়তার। তার মতে, হসপিটালিটি ব্যবসার ধরনই এমন যে নির্দিষ্ট সময়ের ঘণ্টা আগেও ভেনু বন্ধ করতে হলে তাদের বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

২৫টি পাব হোটেলের চেইন ওকম্যান ইনসের চেয়ারম্যান পিটার বরগ-নিল বলেন, সরকারের করোনা বিধিনিষেধের কারণে হসপিটালিটি শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তার মতে, রেস্তোরাঁ কিংবা পাবে মানুষের সমাগম কিংবা মেলামেশা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ নয়।

এদিকে রিয়েল এস্টেট অ্যাডভাইজার অ্যাটলাস গ্রুপের উপাত্ত অনুযায়ী, সরাসরি রেস্তোরাঁর টেবিলে খাবার কিংবা পানীয় বিক্রিতে নতুন কারফিউ বিধিনিষেধ ইংল্যান্ডের প্রতি ১০টি পাবের মধ্যে একটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে এক্ষেত্রে সরকারকে খুব সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢালাওভাবে বিধিনিষেধ আরোপের চেয়ে বরং যেসব রেস্তোরাঁ নিয়ম মানছে না, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। সরকারের কোনোভাবেই এমন মানুষ বা ব্যবসার ওপর চড়াও হওয়া উচিত নয়, যারা সত্যিকার অর্থেই অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের কর্মী গ্রাহকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে।

লন্ডনের চিসউইকে দি স্টিম প্যাকেট পাবের ম্যানেজার জনাথন গিলেসপি বলেন, যা- ঘটুক না কেন, আমরা আমাদের গ্রাহকদের সেবা দেয়ার জন্য কোনো না কোনো পথ খুঁজে বের করব। আমরা এরই মধ্যে বেশ ক্ষতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি। তবে গ্রাহকরা ফিরে আসায় আমরা এখন নিরাপদ মনে করছি। মানুষজন যাতে পাবে বা রেস্তোরাঁয় আসতে নিরাপদ বোধ করে, সেজন্য সরকারের নির্দেশ মেনে যা করা প্রয়োজন তা আমরা করব।

 

বিবিসি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন