ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) সভাপতি ক্রিস্টিন লাগার্দে বলেছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় পদে বিশ্বে এখনো নারীদের সংখ্যা খুবই কম। এর মধ্যে বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস এ সংকট আরো ঘনীভূত করেছে। শুক্রবার এক সাক্ষাত্কারে লাগার্দে বলেন, বিশ্বব্যাপী ম্যানেজমেন্টে এখনো খুব কমসংখ্যক নারী রয়েছেন। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অর্থনৈতিক খাতের শীর্ষ পদে নারীদের সংখ্যা হতাশাজনক। খবর এএফপি।
লাগার্দে হলেন ইসিবির ইতিহাসে প্রথম নারী, যিনি ব্যাংকটির শীর্ষ পদে রয়েছেন। তিনি বলেন, ইউরো অঞ্চলের ১৯টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবই পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত। অন্যদিকে ইসিবির পরিচালনা পর্ষদের ২৫ সদস্যের মধ্যে তিনিসহ নারী রয়েছেন মাত্র দুজন। অন্যজন হলেন তার জার্মান সহকর্মী ইসাবেল শ্নাবেল। তার মতে, সংখ্যার দিক দিয়ে নারী ও পুরুষের মধ্যে এত বেশি পার্থক্য হওয়ার কথা ছিল না।
এ অবস্থায় কম ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার জন্য তিনি পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটি নেয়ার জন্য উৎসাহ দেয়ার কথা জানান। এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের জন্য এ ছুটির মেয়াদ বর্তমানের চেয়ে বেশি হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। ওইসিডি দেশগুলোয় এখনো পুরুষ ও নারীদের মধ্যে বেতনবৈষম্য প্রকট। লিঙ্গভেদে বেতনপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ পার্থক্য এখনো ১৩ শতাংশ। তাছাড়া চাকরির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রেও নারীদের লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। আর সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস এ বৈষম্য আরো তীব্র করে তুলছে।
তিনি বলেন, লকডাউনের সময় নারীরা প্রায় সব খাতেই সামনের সারিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তাদের শিশুদের লালনপালনের সময়েও তাদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের মানিয়ে নিতে হয়েছে গৃহসহিংসতার সঙ্গেও। দেখা গেছে, প্রতিবার অর্থনৈতিক সংকটের সময়ই নারীদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি বেশি থাকে। সমভাবে তারা শিকার হন বেতন কর্তনেরও।
তবে লাগার্দের মতে, বর্তমানে পুরুষদের মধ্যে এ বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি নারীদের উচ্চতর পদে মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু মানসিকতায় সত্যিকার পরিবর্তন তখনই আসবে যখন নারী কিংবা পুরুষ কেউই আর শীর্ষ পদে নারীর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না।
এদিকে লাগার্দের এ বক্তব্যের প্রশংসা করেছেন শ্নাবেল। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় বলেন, নারীবিদ্বেষী ও ভয়ংকর মন্তব্যকে উপেক্ষা করে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে দৃঢ়চিত্তে মুক্তভাবে কথা বলতে পারা ক্রিস্টিন লাগার্দের মতো নেতা পাওয়া খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। তার মতো নারী নেতৃত্বের গুরুত্ব অনেক।
মূলত ৬৪ বছর বয়সী লাগার্দে গত বছর ইসিবিপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে কথা বলে আসছেন। এর আগে জুলাইয়ে তিনি বলেছিলেন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আরডেন নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ভালো করছেন।
সাবেক এ ফরাসি অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মতে, আমি দেখেছি যে নারীদের মধ্যে ভালো কাজ করার আগ্রহ রয়েছে।’
এ সময় তিনি নারীদের সৎ যোগাযোগ এবং যত্নের প্রশংসা করেন। লাগার্দে এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধানেরও দায়িত্ব পালন করেছেন।
