শিশুতোষ বিজ্ঞাপন নিয়ে চাপে ফেসবুক ও গুগল

বণিক বার্তা ডেস্ক

শিশুদের টার্গেট করে তৈরি বিজ্ঞাপন নিয়ে চাপে রয়েছে সার্চ জায়ান্ট গুগল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধ করার জন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবার একাডেমিক শিশু-অধিকার নিয়ে কাজ করেন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্যদের এমন একটি অংশ খোলা চিঠি দিয়ে ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন। খবর বিবিসি।

গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপল, ফেসবুক মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের খোলা চিঠিতে শিশুতোষ এসব বিজ্ঞাপনের ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়ে বলা হয়েছে। শিশুদের টার্গেট করে তৈরি এমন ধরনের আচরণগত বিজ্ঞাপন কেবল তাদের গোপনীয়তার জন্যই ক্ষতির কারণ নয়। বরং এটি শিশুদের ওপর অন্যায্য একধরনের বিপণন চাপ প্রয়োগ করে। এটি তাদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তনে এক ধরনের প্রবণতা তৈরি করে।

অন্য পৃথক একটি ঘটনায় এরই মধ্যে গুগল মালিকানাধীন ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম ইউটিউব অভিযোগের মুখে রয়েছে। যুক্তরাজ্যে ১৩ বছরের কম বয়সী ৫০ লাখ শিশুর তথ্য বেআইনিভাবে সংগ্রহ করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। কারণ ইউরোপিয়ান ডাটা সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, শিশুদের তথ্য সংগ্রহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রযুক্তি বিজ্ঞাপনী এসব কোম্পানির এমন বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে ওই খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, টিনএজারদের টার্গেট করে ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন প্রচার করা কখনো আইনসিদ্ধ বিষয় হতে পারে না। যদিও এমন ধরনের বিজ্ঞাপনে ১২ বছর বয়সী শিশুদেরও টার্গেট করে তৈরি হয়। ইন্টারনেট জগতে যত বড় প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন প্রত্যেকের গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিতের বিষয়ে দায়িত্ব রয়েছে বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে শিশুতোষ বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে ইউটিউবের বিরুদ্ধে চলা আইনি লড়াইয়ে স্বাক্ষর করা ২৩ জনের মধ্যে রয়েছেন ক্যারোলিন লুকাস এবং ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী . এলি হ্যানসনের মতো পার্লামেন্ট সদস্যের নাম। এছাড়া বৈশ্বিক পরিবেশবাদী সংস্থা ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থেরও নাম রয়েছে ওই চিঠিতে।

আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা বিশেষ সংস্থা গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান ইউটিউবের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের সমন্বয়ের কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি ইউটিউবের শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়টিকে তাদের মধ্যে এক ধরনের ভোগবাদী চেতনাকে উসকে দেয়ার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা পিতা-মাতা সর্বোপরি সমাজের ওপর এক ধরনের অপ্রয়োজনীয় চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে শিশুদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে কাজ করা ডানকেন ম্যাকক্যান ৫০ লাখ শিশুদের পক্ষ হয়ে গুগলের বিরুদ্ধে করা মামলা লড়ছেন। যেখানে তিনি অভিযোগ করেন, গুগল অনলাইনের মাধ্যমে শিশুদের তথ্য ট্র্যাক করছে, যা যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ান তথ্য সুরক্ষা আইন ভঙ্গের শামিল। যদিও যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে গত জুলাইয়ে করা মামলার বিরুদ্ধে ইউটিউবও শক্তভাবে যুক্তি দাঁড় করে চলেছে। তারা বলছে, তাদের ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম মোটেই ১৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্য নয়।

অনলাইনে শিশু সুরক্ষার বিষয়টি এখন বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে এখন অনেক শিশু ঘরে বসে অনলাইনে খুব বেশি সময় ব্যয় করছে। অনলাইন সংযোগ থাকলে তা শিশু কিশোর-কিশোরীদের ওপর নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতির প্রভাব কমাতে সহায়তা করে এবং ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও জীবন চালিয়ে যেতে উৎসাহ প্রদান করে। একই সঙ্গে ইন্টারনেটে শিশুর অবাধ প্রবেশ প্রতিটি বাবা-মায়ের জন্য নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জও তৈরি করে। ইন্টারনেটের সম্ভাব্য ক্ষতির দিকটি এড়িয়ে কীভাবে সব ভালো দিকগুলোর সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করবেন? কভিড-১৯ মহামারীর সংকটপূর্ণ সময়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলার সময় ভারসাম্য বজায় রাখা খুব সহজ নয়। কারণ খোদ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোই অনেক সময় শিশুদের ব্যবসায় ফায়দা নেয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন