ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও জোয়ার

বাগেরহাটে ১৬০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত

আলী আকবর টুটুল বাগেরহাট

সুপার সাইক্লোন আম্পান জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট জেলার ১৬০ কিলোমিটার পাকা কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সড়কপথে যোগাযোগে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী যানবাহন চালকদের।

বাগেরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, সুপার সাইক্লোন আম্পানে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৯২ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আম্পানে ৫১ দশমিক ১২ কিলোমিটার এবং জোয়ারের পানিতে ৪১ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব সড়কের মধ্যে পাকা, ইটের সলিং কাঁচা রাস্তা রয়েছে। এতে প্রায় ৭০ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারের জন্য প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মুজিবর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে বাস্তবায়ন করা হবে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাগেরহাট সড়ক জনপথ বিভাগের ২০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় নিরূপণ করে সড়ক ভবনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, প্রস্তাবনা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো স্বল্প দীর্ঘমেয়াদি দুই ধাপে মেরামত করা হবে। স্বল্পমেয়াদি মেরামতের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে কোটি ৮৭ লাখ টাকা। দীর্ঘমেয়াদি মেরামতের জন্য ব্যয় হবে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এলজিইডি সড়ক বিভাগ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় আম্পান জোয়ারের পানিতে জেলার মোংলা, মোড়েলগঞ্জ বাগেরহাট পৌরসভার প্রায় ৪৭ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট পৌরসভার চার কিলোমিটার, মোংলা পোর্ট পৌরসভার তিন কিলোমিটার এবং মোড়েলগঞ্জ পৌরসভার ৪০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগেরহাট মোংলা পৌরসভার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কারকাজ শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। মোড়েলগঞ্জ পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এখনো কাজ শুরু হয়নি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মোড়েলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট এসএম মনিরুল হক তালুকদার।

এলজিইডি, সড়ক বিভাগ, পৌরসভা ছাড়াও বেশকিছু গ্রামীণ সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়কের জন্য প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের আকবর হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় গাছ উপড়ে পড়ে ফতেপুর থেকে ফুলতলা সড়কটির বিভিন্ন জায়গা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু আম্পানের পর কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও এখনো সংস্কার হয়নি। ভাঙা সড়কের কারণে আমাদের চলাচলে খুব অসুবিধা হয়।

মোড়েলগঞ্জ পৌরসভার মবিনুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমাদের পৌরসভার বেশকিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া সম্প্রতি জোয়ারের পানিতে আমাদের পৌরসভার ছোট-বড় অনেক সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আমাদের চলাচলে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দ্রুত পৌরসভার সড়কগুলো সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

মোড়েলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট এসএম মনিরুল হক তালুকদার বলেন, পানগুছি নদীর তীরে মোড়েলগঞ্জ পৌরসভার অবস্থান হওয়ায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আমরাই বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হই। ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং জোয়ারের পানিতে আমার পৌরসভার কাঁচা, সলিং, পাকা কংক্রিটের সড়ক মিলে প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করব।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান জোয়ারের পানিতে এলজিইডি, সড়ক বিভাগ, পৌরসভার বেশকিছু ?সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাগেরহাট জেলা পরিষদের কোনো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে দাবি করেছেন জেলা পরিষদের উপসহকারী প্রকৌশলী আওলাদ হোসেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মুজিবর রহমান বলেন, এলজিইডির বেশির ভাগ সড়কই উপজেলা পর্যায় গ্রামের। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এলজিইডির সড়কই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাগেরহাট জেলায় আমাদের হাজার ৭৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পান জোয়ারের পানিতে ৯২ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুতই এসব সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হবে।

সড়ক বিভাগ, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ মেরামতের সম্ভাব্য ব্যয় নিরূপণ করে একটি প্রস্তাবনা সড়ক ভবনে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুত আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কাজ শুরু করতে পারব। যেসব সড়ক দিয়ে একদমই যান চলাচল করতে পারছে না সেসব সড়ক দ্রুত মেরামত করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন