করোনাকালে বিশ্বসেরা নেতা অ্যাঙ্গেলা মেরকেল

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বনেতাদের মধ্যে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। বৃহস্পতিবার ইয়াহু ফিন্যান্স অল মার্কেটস সামিটে এভাবেই মেরকেলের স্বীকৃতি দিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইনডিপেনডেন্ট প্যানেল ফর প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্সের কো-চেয়ার হেলেন ক্লার্ক।

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের নেতৃত্বের প্রশংসা করতে গিয়ে ক্লার্ক বলেন, তিনি হলেন বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা সেরা নেতা।

মেরকেল কী এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার কারণে তার নেতৃত্বগুণের এমন ভূয়সী প্রশংসা করেছেন হেলেন ক্লার্ক? আসলে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ বিশেষজ্ঞদের উপদেশ শোনার মানসিকতাই মেরকেলকে মহামারী মোকাবেলায় সাফল্য এনে দিয়েছে বলে মনে করছেন ক্লার্ক। তার ভাষায়, পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে ধরনের বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নেয়া উচিত, মেরকেল ঠিক তা- করেছেন। আমি মনে করি তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

ব্যাপক আকারে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা মহামারী মোকাবেলায় ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে ইউরোপীয় অন্য শীর্ষ দেশগুলোর তুলনায় জার্মানিতে করোনার প্রকোপ কিছুটা কম রয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে লাখ ৭১ হাজার কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে হাজার ৪৬৪ জন।

কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রিতে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী মেরকেল বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নেবেনএটাই স্বাভাবিক। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তিনি তার পশ্চিম জার্মান ব্যাকগ্রাউন্ডও কাজে লাগিয়েছেন। চলাচলে স্বাধীনতা হরণের বিষয় নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন ছিলেন, তাদের কথা শুনেছেন তিনি। তাদের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। কারণে করোনাকালে জনসমর্থন বেড়েছে তার, যেখানে অন্য নেতাদের তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। যদিও আর ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা নেই মেরকেলের। দীর্ঘ দেড় দশক জার্মান চ্যান্সেলর পদে দায়িত্ব পালনের পর আগামী বছর অবসরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

করোনাকালীন শ্রেষ্ঠ নেতৃত্বে হেলেন ক্লার্কের বাছাইয়ের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুডও। সামিটে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় মেরকেল তার অস্ত্রভাণ্ডারের সব তূণই ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি যেসব জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন, সেগুলো বিজ্ঞানসম্মতভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছেন।

মেরকেলের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনেরও প্রশংসা করেছেন কেভিন রুড। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আরডার্নের নেতৃত্ব শক্তিশালী জননীতির পরিচয় দিয়েছে। এছাড়া কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার নেতা হিসেবে সাই ইং-ওয়েন যেভাবে করোনার সংক্রমণ সীমিত রেখেছেন, তাও যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার বলে মনে করেন তিনি। রুড বলেন, চীনের মূল ভূখণ্ড তাইওয়ানের মধ্যে মানুষের চলাচল অনেক বেশি। অবস্থায় তিনি যেভাবে পরিস্থিতির সামাল দিয়েছে, তা আসলেই অসাধারণ। কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত ৫০৩ জন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে সাতজন।

রুড আরো বলেন, আমি জানি না এটা কোনো লৈঙ্গিক পক্ষপাতিত্বমূলক বক্তব্য হবে কিনা। তবে আমি কেবল তথ্য-উপাত্তের দিকে দৃষ্টি দিতে বলছি। এসব তথ্য বলছে, নারী নেতৃত্বের অধীনে থাকা দেশগুলো করোনার সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।

১৯৪টি দেশকে নিয়ে গবেষণা চালিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সেন্টার ফর ইকোনমিক পলিসি রিসার্চ। এতে দেখা গেছে, পরিসংখ্যানগত দিক থেকে নারী নেতৃত্বাধীন দেশগুলো জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় বেশি কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

ইয়াহু ফিন্যান্স অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন