পেঁয়াজ আমদানিতে উদ্যোগী বড় করপোরেটরা

রাশেদ এইচ চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেশে অস্থিতিশীল পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে সমুদ্রপথে পণ্যটি আমদানিতে সক্রিয় হয়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এরই মধ্যে বড় পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। পাশাপাশি  মেঘনা, সিটি বিএসএম গ্রুপও ঋণপত্র (এলসি) খোলা শুরু করেছে।

ভারত হঠাৎ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় এবারের মতো গত বছরের সেপ্টেম্বরেও দেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছিল। অস্থিতিশীল বাজার স্বাভাবিক করতে সেবারও ভারতের বাইরে বিকল্প উৎস থেকে মসলাপণ্যটি আমদানি করেছিল এস আলমসহ কয়েকটি শিল্প গ্রুপ।

গত বছরের মতো এবারো ভারত হঠাৎ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর পরই ছোট পরিসরে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছিল। তবে গতকাল থেকে মূলত শিল্পোদ্যোক্তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ এস আলম প্রথম দফায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির পদক্ষেপ হিসেবে আজ এলসি খুলবে। এজন্য নেদারল্যান্ডসে বুকিং কার্যক্রমও সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী আকিজ উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, রোববার (আজ) প্রথম দফায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলব। এর পুরোটাই সমুদ্রপথে আনা হবে নেদারল্যান্ডস থেকে। গত বৃহস্পতিবারই এজন্য দেশটিতে বুকিং নিশ্চিত করেছি। এক মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে চালান পৌঁছবে বলে আশা করছি। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে সহযোগিতা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই এসব পেঁয়াজ এনে আমরা কোনো ব্যবসায়ীর হাতে কিংবা আলাদাভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বাজারে ছাড়ব না। একসঙ্গে বেশি না এনে বরং সরকারের যত প্রয়োজন হবে আমরা ততই আমদানির প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। গতবার আমরা একসঙ্গে অনেক বড় পরিসরে আনার চেষ্টা করেছিলাম। যেহেতু সাগরেই পচনশীল পণ্যটির মাসখানেক থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে রফতানিকারক দেশে বিশেষায়িত কনটেইনারের প্রাপ্যতাসহ বন্দরের ছাড়করণ কার্যক্রম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এদিকে দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্য বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপ প্রথম দফায় সাড়ে চার হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির পদক্ষেপ হিসেবে এরই মধ্যে এলসি খুলেছে। মিসর নেদারল্যান্ডস থেকে এসব পেঁয়াজের চালান পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার।

বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ে সাড়ে চার হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্দেশ্যে এলসি খুলেছি। নেদারল্যান্ডস মিসর থেকে সমুদ্রপথে আনা হবে পেঁয়াজের চালান। এক মাসের মধ্যেই এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছার কথা রয়েছে।

সরকারের অনুরোধে মেঘনা সিটি গ্রুপও পেঁয়াজ আমদানিতে সক্রিয় হচ্ছে আগের মতো। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের পেঁয়াজের চালান আগামী এক মাস বা তার চেয়ে কিছু বেশি সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছবে। জেটি খালি পেলে ছাড়করণ প্রক্রিয়ায় বিলম্ব না হলে পেঁয়াজ খুব দ্রুতই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছে যাবে।

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বণিক বার্তাকে বলেন, সংকট তৈরি হওয়ায় গতবার আমরা পেঁয়াজ আমদানি করে সরকারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছিলাম। তখন সংকটের সময়ে আমরা যেভাবে যতটুকু আমদানি করেছিলাম, এবারো সে রকমই করব। অনুযায়ী পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে। মূলত সরকারকে সহযোগিতা করাই হবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

গত বছর তাদের আমদানি করা পেঁয়াজ দেশের জলসীমায় পৌঁছলেও জাহাজ জট থাকায় জেটি খালি পেতে বন্দর থেকে ছাড়করণ কার্যক্রমের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তবে জাহাজ জট না থাকায় এবার সমুদ্রপথে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ দেশের জলসীমায় পৌঁছার পর খুব দ্রুতই ছাড় করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল জেটিতে মাত্র সাতটি কনটেইনার জাহাজ অবস্থান করেছে। অথচ গত বছরের একই সময়ে জেটিতে এর প্রায় দ্বিগুণ ১২টি কনটেইনার জাহাজ অবস্থান করেছিল। পণ্য খালাসের জন্য তখন জেটি খালি পেতে বহির্নোঙরে অবস্থান করেছে গড়ে ২০ থেকে ২২টি জাহাজ। সেক্ষেত্রে এবার আর জেটি খালি পেতে বহির্নোঙরে জাহাজকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, গত বছর জাহাজ পৌঁছার পর পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় যে পরিস্থিতি ছিল এবার সে রকম হবে না। তখন পেঁয়াজের জাহাজকে দ্রুত ভেড়ার সুযোগ দিতে অন্য জাহাজকে অপেক্ষায় রাখার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি এবং বন্দরের দক্ষতায় এখন বহির্নোঙরে জেটি খালি পাওয়ার অপেক্ষায় জাহাজ বসে থাকতে হচ্ছে না। এক মাস পরও পরিস্থিতি ভালো থাকবে। তাছাড়া এবার চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে কোনোভাবেই পেঁয়াজের চালান পড়ে থাকতে দিচ্ছি না, দেয়াও হবে না। ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও নির্দেশনা রয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৭০ ব্যবসায়ী। তারাও রফতানিকারকদের সঙ্গে চুক্তির পাশাপাশি ঋণপত্র খুলে চলেছেন প্রতিদিন। পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলার আগে বাধ্যবাধকতা থাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে আমদানির অনুমতি (আইপি) নিচ্ছেন এসব ব্যবসায়ী।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারত রফতানি বন্ধের পর চলতি মাসে গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে মোট ৭৯ হাজার ৩৯০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য আইপি ইস্যু হয়েছে মোট ২১৭টি।

চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, একজন আমদানিকারক একই সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিচ্ছেন। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিসর, তুরস্ক, নিউজিল্যান্ড নেদারল্যান্ডস। চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁয়াজের আমদানি চালান পৌঁছার পর যাতে কোনো প্রক্রিয়াগত জটিলতায় পড়ে খালাস কার্যক্রমে অযথা বিলম্ব না হয়, সে ব্যাপারেও প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন