বিমানবহরের উড়োজাহাজের পুনর্বীমা

পূর্বাভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বহরের বীমা পলিসির মেয়াদ শেষ হবে অক্টোবরের মাঝামাঝি। বহরের উড়োজাহাজগুলোর বীমা নবায়নে এরই মধ্যে বীমা ব্রোকারদের র্যাংকিং অনুযায়ী ২১টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে ব্রোকার নির্বাচন কমিটি। পাশাপাশি গত পাঁচ বছর বিমানের উড়োজাহাজ বীমা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল এমন পাঁচটি ব্রোকার প্রতিষ্ঠানকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে সাধারণ বীমা করপোরেশন। তবে বীমা পুনর্বীমাসংক্রান্ত আগের কার্যক্রম ইতিবাচক নয় উল্লেখ করে দুটি ব্রোকার প্রতিষ্ঠানকে সুপারিশ করেনি ব্রোকার নির্বাচন কমিটি।

বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ অক্টোবর ২০২০ থেকে ১৫ অক্টোবর ২০২১ মেয়াদে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বহরের বীমা/পুনর্বীমা নবায়নের জন্য ব্রোকার নির্বাচনে সাধারণ বীমা করপোরেশন ছয় সদস্যের একটি ব্রোকার নির্বাচন কমিটি করে। কমিটি বীমা ব্রোকারদের র্যাংকিং লিস্ট পর্যালোচনা করে ২১টি ব্রোকার প্রতিষ্ঠানকে বীমা নবায়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের যোগ্য হিসেবে সুপারিশ করে। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকার পরও কেএম দস্তুর টাইসর অ্যান্ড কোং নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সুপারিশ করেনি কমিটি। কারণ হিসেবে কমিটি জানিয়েছে, এর আগে কেএম দস্তুরের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বীমা/পুনর্বীমাসংক্রান্ত কার্যক্রম সুখকর ছিল না। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সমস্যার কথা উল্লেখ করেনি কমিটি।

উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছরে বিমানের উড়োজাহাজ বহরের পুনর্বীমা প্লেসমেন্ট কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে পাঁচটি ব্রোকার প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে চার বছরই কাজ করেছে কেএম দস্তুর। কখনো আংশিক, কখনো শতভাগ বীমার কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজগুলোর বীমা করার বিষয়টি উল্লেখ করে গত আগস্টে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেয় বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ব্রোকার নির্বাচন কমিটির সদস্য সাবেরা আক্তার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, সাধারণ বীমা করপোরেশন ১৬ অক্টোবর ২০২০ থেকে ১৫ অক্টোবর ২০২১ মেয়াদে বিমানের উড়োজাহাজ বহরের পুনর্বীমাসংক্রান্ত কার্যক্রম অস্বচ্ছভাবে শুরু করেছে মর্মে প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবস্থায় বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ মেয়াদে বিমানের উড়োজাহাজ বহরের বীমার শতভাগ করা হয়েছিল ব্রোকার প্রতিষ্ঠান ইউআইবির সঙ্গে। এর আগে ২০১৮-১৯ মেয়াদে কেএম দস্তুর (শতভাগ); ২০১৭-১৮ মেয়াদে মার্স (৫৫ শতাংশ), কেএম দস্তুর (২৫ শতাংশ), এজে গ্যালেঞ্জার (১০ শতাংশ) টাইসর অ্যান্ড কোং (১০ শতাংশ); ২০১৬-১৭ মেয়াদে মার্স (৫৫ শতাংশ) কেএম দস্তুর (৪৫ শতাংশ); ২০১৫-১৬ মেয়াদে মার্স (৭০ শতাংশ), কেএম দস্তুর (৩০ শতাংশ) বীমা প্লেসমেন্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছিল।

এর আগে মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে বিমানের উড়োজাহাজ বীমার বিষয়ে অনুশাসন দেয়া হয়। এতে বলা হয়, বর্তমান বৈশ্বিক অনিশ্চিত প্রেক্ষাপটে দেশের পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর নিরবচ্ছিন্ন সেবা অব্যাহত রাখার স্বার্থে কেবল ২০২০-২১ সালের জন্য উড়োজাহাজ বহরের বীমা/পুনর্বীমা নবায়ন, গত ১৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দৃঢ়ীকৃত আন্তর্জাতিক ক্রয়ে কোটেশন প্রদানের অনুরোধ জ্ঞাপন পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক পূর্বের বছরগুলোর ন্যায় কার্যধারা গ্রহণ করত সম্পাদন করার জন্য কতিপয় সুপারিশ করা হয়।’’

উল্লেখ্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বীমা/পুনর্বীমা কার্যক্রমটিকে ব্যতিক্রম বিষয় বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক ক্রয়ে কোটেশন প্রদানের অনুরোধ জ্ঞাপন পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। 

বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে উড়োজাহাজ রয়েছে মোট ১৮টি। এর মধ্যে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে সরাসরি কেনা হয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ৪১৯ আসনের লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ রয়েছে চারটি। ২০১১-১৪ তিন বছরের মধ্যে উড়োজাহাজগুলো বিমানবহরে যুক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে যুক্ত হয় ১৬২ আসনের দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ২৭১ আসনের ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। বাকি ছয়টি উড়োজাহাজের মধ্যে চারটি ৭৩৭-৮০০ ৭৪ আসনের দুটি ড্যাশ- লিজে আনা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন