লালমনিরহাটের ৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

জনবল সংকটে বন্ধ অস্ত্রপোচার নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সরঞ্জাম

মোয়াজ্জেম হোসেন লালমনিরহাট

তীব্র জনবল সংকট নিয়ে চলছে লালমনিরহাট জেলার স্বাস্থ্য খাত। সার্জারির চিকিৎসকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে লোকবল না থাকায় কার্যত ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা খাত। কার্যকর চিকিৎসা না পেয়ে অধিকাংশ রোগীই রংপুর মেডিকেল কলেজমুখী হচ্ছেন। এতে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রমেক কর্তৃপক্ষকে। যদিও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হার্নিয়া, অ্যাপেনডিসাইটিস সিজারিয়ানসহ সাধারণ অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে ছয় থেকে নয় বছর ধরে এসব অপারেশন থিয়েটার (ওটি) বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘকাল বন্ধ থাকার কারণে অব্যবহূত থেকেই নষ্ট হয়ে গেছে ওটির গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রায় ১৩ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল লালমনিরহাট সদর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে ছয়-সাত বছর ধরে অপারেশন থিয়েটার পরিত্যক্ত থাকা হাসপাতালগুলো হচ্ছে লালমনিরহাটের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ১০ শয্যাবিশিষ্ট (বিশেষায়িত) হাসপাতাল, পাটগ্রাম ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, হাতীবান্ধা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, কালীগঞ্জ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আদিতমারী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে হারনিয়টোমি সিজারিয়ানসহ অন্যান্য অপারেশনের জন্য থিয়েটার রয়েছে। এসব অপারেশন থিয়েটারে অত্যাধুনিক মানসম্পন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা আছে। কিন্তু বছরের পর বছর অপারেশন থিয়েটারগুলো অব্যবহূত থাকায় সরকারের কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি সবই নষ্ট হতে চলেছে।

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কালী প্রসাদ সরকার ছয়-সাত বছর ধরে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে যে কোনো সরঞ্জামই নষ্ট হবে। হাসপাতালে সার্জারি অ্যানেস্থেসিস্ট না থাকায় সার্জারি সেবা সম্পূর্ণই বন্ধ। সার্জারি সংক্রান্ত চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের আমরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।

তিনি আরো বলেন, যদি সার্জারি, গাইনি চিকিৎসক অ্যানেস্থেসিস্টসহ প্রয়োজনীয় জনবল পদায়ন করা হয়। তাহলে উদ্যোগ নিয়ে আবারো অপারেশন থিয়েটার মেরামত করে সচল করা সম্ভব। আর যদি জনবল না থাকে তাহলে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকার কারণে দেখা যাবে যে, ভেতরের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমাদের কিছু করার থাকবে না।

জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে যোগদান করার পর থেকে দেখছি অপারেশন থিয়েটার জনবলের অভাবে বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য কমিটির সভায় সংসদ সদস্য মো. মোতাহার হোসেনকেও অবহিত করেছি। শুনেছি হাসপাতালে ছয়-সাত বছরেরও বেশি সময় অপারেশন থিয়েটার বন্ধ।

তিনি আরো বলেন, অপারেশন থিয়েটারটি চালু করতে হলে সার্জারি, গাইনি অ্যানেস্থেসিস্ট প্রয়োজন। জনবল না থাকলে এটি চালু করেও কোনো লাভ নেই। কারণ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অপারেশন থিয়েটার একে অন্যের পরিপূরক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা হাসপাতালের অন্তঃবিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে একটি অপারেশন থিয়েটারও উদ্বোধন করা হয়। তিনি চলে আসার পরদিন থেকে অন্তঃবিভাগ চালু থাকলেও অপারেশন থিয়েটারটি পরিত্যক্ত রয়েছে।

জানতে চাইলে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অরুপ পাল বলেন, জনবল না থাকায় দুই হাসপাতালেরই অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে।

অপারেশন থিয়েটার পরিত্যক্ত থাকায় ভেতরের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এর বাইরে আমার কিছু করার নেই।

এসব বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বণিক বার্তাকে বলেন, লালমনিরহাট সদর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ব্যতীত অন্য পাঁচ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় অপারেশন থিয়েটারগুলোর কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এসব অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম সচল করতে হলে সার্জারি, গাইনি অ্যানেস্থেসিস্ট থাকতে হয়। কিন্তু আদিতমারী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে একজন সার্জারি চিকিৎসক ব্যতীত কোথাও জনবল নেই। সার্জারি, গাইনি অ্যানেস্থেসিস্ট না থাকায় পাঁচ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জনগণের সাময়িক দুর্ভোগ বেড়েছে। সম্প্রতি জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জনবল পেলে অপারেশন থিয়েটারগুলো চালু করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন