কাপ্তাই হ্রদে খাঁচায় মাছ চাষে সফলতার হাতছানি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি রাঙ্গামাটি

নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে গোটা বিশ্ব যখন স্তব্ধ, জীবনজীবিকা নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে আশঙ্কা। ঠিক তখনই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন রাঙ্গামাটির বাপ্পী তনচংগ্যা। কাপ্তাই হ্রদে ভাসমান খাঁচায় শুরু করেন মাছ চাষ। কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছে বিএফআরআই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাঁচায় মাছ চাষের ফলে উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি বেকারত্বও কমে আসবে।

রাঙ্গামাটি জেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার মানিকছড়ি পাড়ামুখ এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের পানিতে খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের চাষ শুরু করেন বাপ্পী তনচংগ্যা। চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরুতে তিনি হ্রদে ভাসমান ৩২টি খাঁচায় ৫৩ হাজার মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের পোনা ছাড়েন। এতে তার এককালীন বিনিয়োগ করতে হয় সাড়ে লাখ টাকা। এছাড়া মৌসুমভিত্তিক বিনিয়োগ করতে হবে আরো লাখ টাকা। সব ঠিক থাকলে মৌসুমে তার উৎপাদিত মাছের মূল্য হবে ১৫ লাখ টাকা হবে। এতে যাবতীয় ব্যয় মিটিয়ে - লাখ টাকা লাভ থাকার আশা করছেন তিনি।

তরুণ উদ্যোক্তা মৎস্যচাষী বাপ্পী তনচংগ্যা বলেন, আমি সফলতা পেলে পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরিধি আরো বাড়াব, এতে স্থানীয় বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হবে। এখান থেকে শিখে তারা নিজেরাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। আমি চাই, আমাদের কাপ্তাই হ্রদকে ব্যবহার করে স্থানীয় বেকার যুবকরা চাকরির পেছনে না ছুটে আমার মতো উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন।

বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণত এখানে দুই ধরনের বিনিয়োগ করতে হয়। প্রথমত, বাঁশ, ড্রাম, খাঁচা, রশি জালসহ এককালীন বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া মৌসুম হিসেবে পোনা ছাড়া থেকে উৎপাদন পর্যন্ত আরেকটি বিনিয়োগ রয়েছে। আমি প্রথম ধাপে ৩২টি খাঁচায় ৫৩ হাজার মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের পোনা ছেড়েছি। পোনা ছাড়া থেকে খাদ্য সরবরাহসহ প্রতিটি মৌসুমে আমার লাখ টাকার মতো খরচ হবে। তবে বাজারে মাছের উপযোগী মূল্য পেলে আমি মাছ প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো বিক্রয় করতে পারব। সে হিসাবে আমার প্রতিটি মৌসুমে - লাখ টাকা মুনাফার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটিতে পোনা উৎপাদনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় জেলার বাইরে থেকে আমাদের পোনা সংগ্রহ করতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে এখানে যদি স্থানীয়ভাবে পোনা উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে আর্থিকভাবে খরচের পরিধি কিছুটা কমত।

মানিকছড়িপাড়ামুখ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, জুলাই থেকে আমরা এখানে খাঁচায় মাছ চাষ করতে দেখছি। উদ্যোক্তার সঙ্গে বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছি। যতটুকু মনে হলো, কিছু পুঁজি থাকলে যে কেউ এভাবে মাছ চাষ করতে পারবে। তাই আমরাও ভাবছি, পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করব।

বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) রাঙ্গামাটি নদী উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আজহার আলী বণিক বার্তাকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়াতে খাঁচায় মাছ চাষ অত্যন্ত জরুরি। এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বেকার যুবকরা সহজেই স্বাবলম্বী হতে পারবেন। এটি খুবই সহজ পদ্ধতি, কিছু মূলধন হলেই আমরা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারি। প্রথমেই চাষোপযোগী খাঁচা তৈরি করে নিতে হবে এবং ভালো মানের পোনা ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার পর পর্যাপ্ত খাবার পরিচর্যা করলে ১২০ দিনের মধ্যেই মাছ বিক্রির জন্য বাজারজাত করা যাবে। পার্বত্য এলাকায় ভালো পোনা উৎপাদনের সুযোগ নেই, যে কারণে ময়মনসিংহ কিংবা অন্যান্য জেলা থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হয়। তবে আমরা কাপ্তাই হ্রদে খাঁচা স্থাপনের লক্ষ্যে প্রতি বছর চাষীদের পদ্ধতিতে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ কারিগরি সহায়তা করি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ জানান, রাঙ্গামাটিতে কাপ্তাই হ্রদ ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় ছোট ছোট পুকুর রয়েছে। আমরা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের মাছের খাদ্য বিতরণসহ অন্যান্য সহায়তা করে থাকি। খাঁচায় মাছচাষীদের আমরা একইভাবে সহায়তার চেষ্টা করব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন