সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপরে, আবারো বন্যার শঙ্কা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে চারদিন ধরে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপত্সীমা ছুঁই ছুঁই করছে। তবে কাজিপুর পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি বেড়েছে ৩৯ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে একই সময়ে যমুনা নদীর কাজিপুর পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৩৫ সেন্টিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পানি আরো বাড়বে।

এদিকে দফায় দফায় পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করায় সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা নদীতীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার মানুষের মাঝে আবারো নতুন করে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি ৩৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপত্সীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কাজিপুর পয়েন্ট যমুনা নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপত্সীমার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরো বাড়বে।

এদিকে আবারো যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর, ফুলজোড়, গুমানী ইছামতীসহ অভ্যন্তরীণ সব নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চল নিম্নাঞ্চলের রোপা আমন ধান, সবজি নতুন করে বোনা মাষকলাইয়ের জমিতে পানি প্রবেশ করছে এবং তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে আবারো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন জেলার কৃষক। জুনের প্রথম থেকে শুরু হওয়া তিন দফা দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় এরই মধ্যে কৃষি খাতে প্রায় সোয়া ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষক আবারো উঠে দাঁড়াতে রোপা আমন ধান চাষ, মাষকলাই, গম, ভুট্টা সবজিসহ নানা ফসল আবাদ করছেন। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারও কৃষিতে প্রণোদনাসহ নানা সুবিধা প্রদান করেছে। কিন্তু যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারো বন্যায় ক্ষতির আশঙ্কায় অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যার ক্ষতি কাটাতে জেলায় হাজার ২৮৫ কৃষককে ধানের চারা এবং পাঁচ হাজার কৃষককে এক বিঘা করে জমি আবাদের জন্য মাষকলাইয়ের বীজ সার বিনা মূল্যে দেয়া হয়। নতুন উদ্যমে কৃষক ধানের আবাদ শুরু করেন। চলতি মৌসুমে জেলায় রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬৯ হাজার ২৫০ হেক্টর ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ৭১ হাজার ৮১২ হেক্টর জমিতে। কিন্তু নতুন করে বন্যার আতঙ্কে ভাবনায় পড়েছেন কৃষক। ফসল হয়তো আর রক্ষা করা যাবে না।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়ার আবু সেখ বলেন, কৃষি অফিস থেকে এক বিঘা জমিতে আবাদের জন্য মাষকলাই বীজ সার দিয়েছিল, তা রোপণ করেছিলাম। কিন্তু পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই জমি তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

কাজিপুর উপজেলার নতুন মাইজবাড়ি চরের কৃষক শাহীনুর আলম জানান, দুই দফায় আমার চার বিঘা জমির রোপা ধান নষ্ট হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে আবারো চারা এনে জমিতে রোপণ করেছিলাম। সেটা তলিয়ে গেছে। এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোস্তম আলী জানান, তার উপজেলার চরাঞ্চলে এরই মধ্যে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এর আগে বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে, যার কারণে আবারো পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কিছুটা আতঙ্কে রয়েছেন কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হানিফ বলেন, গত বন্যায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি কাটাতে সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে। আগামীতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত থাকবে। পানি বৃদ্ধিতে বন্যার আশঙ্কা তো রয়েছেই।

তিনি বলেন, নতুন করে পানি বাড়লেও এখনো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে দেখভাল করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন