৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করবে এস আলম গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেশে বড় পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে অতীতের মতো এবারো বিশ্ববাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছে গ্রুপটি। প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আগামী এক মাসের মধ্যে এসব পেঁয়াজ আমদানি করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভর্তুকি মূল্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হবে।

এস আলম গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ ২০১৯ সালেও বাজার অস্থির হয়ে উঠলে এস আলম গ্রুপ ভারতবহির্ভূত বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে দেশের সংকট কমাতে সহায়তা করেছিল। এবারো প্রতিষ্ঠানটি করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ হিসেবে পেঁয়াজ আমদানি করে তা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করবে।

জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক কাজী সালাহউদ্দিন আহাম্মদ বণিক বার্তাকে বলেন, এস আলম গ্রুপ দেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনে সরকারকে সহায়তা করবে। প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টনের লক্ষ্য নিয়ে ঋণপত্র খোলা হয়েছে। হল্যান্ডের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পেঁয়াজ আমদানির বুকিংও দেয়া হয়েছে। এছাড়া মিসর, তুরস্ক থেকেও আমদানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিনে হল্যান্ড থেকে ২৫ হাজার টন আমদানির জন্য বুকিং নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত সোমবার ভারত পেঁয়াজ রফতানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলাপণ্যের দাম উপর্যুপরি বাড়তে থাকে। রফতানি বন্ধের আগে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হলেও কয়েকদিনের ব্যবধানে দাম বেড়ে ৭০-৮০ টাকায় উঠে যায়। একই সময়ের ব্যবধানে  বাজারে দেশী পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৪০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের বাজারে এমন অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেঁয়াজ আমদানির আহ্বান জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার বৃহস্পতিবার এস আলম গ্রুপ প্রায় ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছে। গ্রুপটি পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে নিজেরা ব্যবসা করার পরিবর্তে আমদানির পর সরকারকে ভর্তুকি মূল্যে পেঁয়াজ বুঝিয়ে দেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে চাইবে সেভাবে সাধারণ মানুষকে সহনীয় মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করবে বলে জানিয়েছেন তারা।

এস আলম গ্রুপের পণ্য আমদানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই প্রতি সপ্তাহে ১০-১২ হাজার টন করে পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে দেশের সংকট উত্তরণে ভূমিকা রাখবে এস আলম গ্রুপ। এক্ষেত্রে ৫০ হাজার টনের বেশি আমদানির প্রয়োজন হলেও এস আলম গ্রুপ সরকারকে সহযোগিতা করবে বলে দাবি করেছেন গ্রুপটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এর আগে দেশে চিনির বাজার অস্থিরতার সময়েও এস আলম গ্রুপ ন্যায্যমূল্যে চিনি বিক্রি করেছে। ২০১৯ সালে দেশে পেঁয়াজের বাজার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করলে সে সময়ও গ্রুপটি কার্গো বিমান এমনকি যাত্রীবাহী বিমানেও পেঁয়াজ আমদানি করেছিল। পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। এর আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে বুকিং মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকায় দেশের বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্প গ্রুপ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতিপত্র সংগ্রহ করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে ৭৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকদিনের মধ্যে এস আলম গ্রুপের আমদানিতব্য পেঁয়াজের অনুমতি সংগ্রহ এলসি খোলা হবে। এক মাসের মধ্যে এস আলম গ্রুপের পেঁয়াজ দেশের বাজারে চলে আসবে বলে জানিয়েছেন গ্রুপটির কর্মকর্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন