ভ্যাকসিন আসার পর জীবন কেমন হবে?

বণিক বার্তা ডেস্ক

আমরা সবাই জানি করোনাভাইরাস আমাদের জীবন ওলটপালট করে দিয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন পদ্ধতি থেকে সামাজিক সমাবেশ সবকিছু এখন বদলে গেছে। অবস্থায় গোটা দুনিয়ার মানুষ নিজেদের প্রিয়জনের সুরক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে কার্যকর একটি ভ্যাকসিনের। পাশাপাশি এটি আমাদের জীবনকেও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।

বাস্তবিকভাবে দুঃখজনকভাবে যা সত্যি তা হলো জীবন কিছু সময়ের জন্য আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না প্রকৃত ভ্যাকসিনকে ঘিরে তৈরি হওয়া কিছু প্রশ্নের কারণে এবং কীভাবে কখন এটি বিতরণ করা হবে, সে প্রশ্নও রয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন হিলারি গডউইন বলেন, একটা বিষয় মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাপারটা এমন হবে না ভ্যাকসিন এলে সবাই তা গ্রহণ করবে এবং আকস্মিকভাবে সব বদলে যাবে। এটা কিছু সময় নেবে। আমাদের সৌভাগ্য যে এখানে অনেক ভ্যাকসিন প্রার্থী আছে যারা কিনা বিকাশের পর্যায়ে আছে। তবে আমরা প্রক্রিয়াটিকে অনেক বেশি গতিসম্পন্ন করেছি। ফলে এর যেকোনোটির উচ্চমাত্রায় কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনাও দারুণ নয়।

আগামী কয়েক বছরে জীবন অনেক বদলে যাবে, কিন্তু এটি দিয়ে আসলে কী বোঝায়? ভ্যাকসিন আসার পরও জীবন আসলে কেমন হবে?

মাস্ক পরার সংস্কৃতি বদলে যাবে

এখন থেকে এক বছর পর এবং তারও পর গডউইন আশা করেন তখন মানুষকে জনপরিসরে মাস্ক পরতে দেখা যাবে। বিশেষ করে সেসব মানুষকে যারা কিনা কভিড-১৯ বিবেচনায় দুর্বল।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, ভবিষ্যতে বৃহৎ একটি অংশের মাঝে মাস্ক পরার প্রবণতা বাড়তে পারে। ক্লিনিকাল সেটিংস ব্যতীত সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতির অংশ নয়। মাস্ক পরা সামনে আরো সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠবে। যেভাবে সাম্প্রতিক অতীতে এশিয়ান দেশগুলোয় হয়েছে।

বিজ্ঞানী চিকিৎসকরা নিশ্চিত হবেন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে

যে গতিতে কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন তা দারুণ গতিসম্পন্ন। কিন্তু ফার্স্ট ট্র্যাক ভ্যাকসিনের বিকাশকে ঘিরে যে উত্তেজনা তা অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। নার্স-সায়েন্টিস্ট অপর্ণা কুমার বলেন, যে হারে ভ্যাকসিনের বিকাশ হচ্ছে তেমন কিছু আমরা আগে দেখিনি। এটা দারুণ ব্যাপার যে বিজ্ঞান খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে আমরা যা জানি তা  সীমাবদ্ধতারও সৃষ্টি করছে।

তিনি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সংজ্ঞায়িত করেছেন এলোমেলোভাবে নিয়ন্ত্রিত ট্রায়ালের মতো আদর্শ পরিবেশে একটি ভ্যাকসিন কতটা ভালোভাবে কাজ করে তা দিয়ে। কার্যকারিতা দেখায় যে কতটা দ্রুত ভ্যাকসিন অসুস্থতা কমাতে পারে জনসংখ্যার যে অংশ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেনি তার তুলনায়।

কুমার অবশ্য বলেছেন যে জনগণের মাঝে ভ্যাকসিন প্রদান করার আগে এর কার্যকারিতা আবিষ্কার করা কঠিন। অর্থাৎ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা অনুমান করতে পারবেন না, যতক্ষণ না তা সাধারণ মানুষের মাঝে প্রদান করা হবে।

ভ্যাকসিনের বিতরণ ঘিরে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরাও

দারুণ গতিতে আবিষ্কারের পথে এগিয়ে যাওয়া কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পর তার বিতরণ নিয়েও দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করেছে।

ফিজিশিয়ান সায়েন্টিস্ট ডনি মুডি বলেন, ভ্যাকসিন প্রদান করা নিয়ে প্রাথমিকভাবে আমরা চ্যালেঞ্জে পড়তে যাচ্ছি এর সরবরাহ চেইনের সমস্যার কারণে। কীভাবে আপনি যথেষ্ট পরিমাণ ডোজ প্রস্তুত করতে পারবেন এবং তা সময়মতো বিতরণ করতে পারবেন? আমরা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকরণের ক্ষমতা দিয়ে দারুণ কিছু করতে পারি। আমরা প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের লাখো ডোজ তৈরি করছি। কিন্তু নতুন পণ্যের ক্ষেত্রে তা করা এবং দ্রুত তা বিতরণ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হবে।

কম ব্যবসায়িক ভ্রমণ দূর থেকে কাজ করার সুযোগ

ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নতির ফলে অনেক কোম্পানি এখন বুঝতে পেরেছে যে তারা চাইলে খুব সহজেই তাদের কর্মীদের বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় না পাঠিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে পারে। গডউইন বলেন, অনেক শিল্পে তিনি আশা করেন ব্যবসায়িক ভ্রমণ কমে যাবে।

তিনি বলেন, আমার অনুমান হচ্ছে ব্যবসায়িক পরিস্থিতি খুব নিচে নেমে আসবে। অনেক কিছু করার জন্য আমাদের এখন একই ঘরে থাকার প্রয়োজনীয়তাও নেই। তিনি আরো বলেন যে জুমের মতো প্রযুক্তি গ্রহণ করার ফলে ঘর থেকেই নিয়মিত কাজগুলোকে দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা যাবে।

এখনই কোনো কনসার্ট বা স্পোর্টিং ইভেন্টে অংশ না নেয়া

দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেয়া এবং এর কার্যকারিতা নির্ধারণের আগে আমরা ভিড়সম্পন্ন স্পোর্টিং ইভেন্ট এবং জনবহুল কনসার্টে যাওয়াকে নিউ নরমালের অংশ করতে পারব না। মুডি বলেন, বড় আকারের ভিড়ে না যাওয়ার জন্য মানুষকে মানানো খুব কঠিন হবে যা কিনা কেবলই চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে।

তিনি পারফর্মিং আর্টের এবং স্পোর্টিং ভেন্যুর অভ্যন্তরে ভিড়ের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন কীভাবে নিরাপদভাবে বদ্ধ জায়গায় দলবদ্ধ লোকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে তা নিয়েও।

মানসিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রভাব

বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে বড় ধরনের ঘটনা মানুষের জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। গ্রেট ডিপ্রেশনের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যারা গিয়েছিলেন, অনেকটা আলাদা ছিলেন যারা এর ভেতর দিয়ে যায়নি তাদের চেয়ে। একইভাবে ভিয়েতনাম যুদ্ধ যারা দেখেছেন এবং যারা দেখেননি তারাও ভিন্ন প্রকৃতির ছিলেন। আধুনিক সমাজে কভিড-১৯-এর মহামারীর ক্ষেত্রেও তেমনটা দেখা প্রত্যাশিত।

হেলথ বিহেভিয়ারের প্রফেসর এডউইন ফিশার বলেন, কোনো ঘটনায় মানসিকভাবে ধাক্কা খাওয়ার ফলাফল ঘটনার ছয় মাস পর থেকে সামনে আসতে শুরু করে। তিনি ধারণা করেন যে মহামারীর একটা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক, স্বাস্থ্যগত সামাজিক প্রভাব সামনের দিনগুলোতে দেখা যাবে।

আরো উন্নত জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রত্যাশা

কুমার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন যে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরো বেশি প্রস্তুত হবে, মহামারীতে আমরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করলাম তার ওপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা তার কাঠামো বিষয়ে মহামারীকালে অনেক কিছু শিখেছি। আর এসব জায়গায় আরো অনেক উন্নতি করা যায়। আমরা সামনের দিনগুলোতে অপেক্ষমাণ প্রাদুর্ভাবগুলোর জন্যও আরো বেশি প্রস্তুত হতে পারব। 

এখন অনেক সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে যে মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য সামাজিক দূরত্ব মাস্ক পরার বিষয়গুলো মেনে চলা দরকার।

পাশাপাশি এটাও সত্য যে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন আসার পরও মাস্ক একেবারে অদৃশ্য হয়ে যাবে না। অনেক মানুষ এরই মধ্যে ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে। যে কারণে ভ্যাকসিন আসার পরও অনেক মানুষ তা গ্রহণ না করার কারণে সেটি হারিয়ে যাবে না।

হাফপোস্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন