মার্কিন কর্মকর্তার সফরকালেই তাইওয়ান প্রণালির কাছে চীনের মহড়া

বণিক বার্তা ডেস্ক

তাইওয়ানে এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তার সফরের সময়েই তাইওয়ান প্রণালির কাছে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন। বেইজিংয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যই মহড়া শুরু করেছে। সম্প্রতি তাইওয়ানের প্রতি নিজেদের সমর্থন বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা চীনের জন্য মোটেই স্বস্তিকর নয়। কারণ চীনের দাবি, তাইওয়ান হলো তাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রদেশ। খবর বিবিসি।

বর্তমানে মার্কিন-চীন সম্পর্কের তিক্ততা দিন দিন বাড়ছে বৈ কমছে না। অবস্থার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা কিথ ক্রাচ তাইওয়ান সফরে এসেছেন। গত ১০ বছরের মধ্যে কিথের মতো এত উচ্চপদস্থ কোনো মার্কিন কর্মকর্তা থাইল্যান্ড সফরে আসেননি। পরিস্থিতিতে শুক্রবার চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রেন গুকিয়াং যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে নিজেদের মধ্যে আঁতাত বৃদ্ধির পাশাপাশি নিয়মিতভাবে ঝামেলা সৃষ্টির বিষয়ে অভিযুক্ত করেন। তবে সময় তিনি মার্কিন কর্মকর্তার সফর নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

তার মতে, তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করা কিংবা নিজেকে গঠনের জন্য বিদেশীদের ওপর নির্ভরশীলতা মোটেই বাস্তবসম্মত চিন্তা নয়। যারা আগুন নিয়ে খেলা করে তারা শেষ পর্যন্ত নিজেরাই পুড়ে যায়।

রেন তাইওয়ান প্রণালির কাছে সামরিক মহড়া নিয়ে তেমন বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে মহড়ায় চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড নেতৃত্ব দেয়। রেনের দাবি, চীনের সার্বভৌমত্ব অখণ্ডতা ধরে রাখার জন্য মহড়া যেমন জরুরি তেমনি প্রয়োজনীয়। এর আগে তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে দুই দিন বেশ বড় পরিসরে সামরিক মহড়া পরিচালনা করে চীনা সেনাবাহিনী।

তাইপেইয়ে বিবিসির প্রতিনিধি সিনডি সুই বলেন, মূলত মহড়ার মধ্য দিয়ে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে তাইওয়ানের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিতে চাইছে। চীন চাইছে, এক্ষেত্রে মার্কিন কর্তৃপক্ষ দেশটির আগের প্রশাসনের মতোই ভারসাম্য বজায় রেখে চলুক। মূলত তাইওয়ানের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের দিকে ঝুঁকছে। অন্যদিকে দূরত্ব বাড়ছে চীনের সঙ্গে। তাইওয়ান মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে চাইছে।

এদিকে ওয়াশিংটন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি কিথ ক্রাচ শনিবার থাইল্যান্ডের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট লি তেং-হুইর স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় যোগ দেবেন। এর আগে শুক্রবার তাইওয়ানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে তার বাসভবনে নৈশভোজে যোগদানের কথা রয়েছে।

চীন মার্কিন সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় ২০১৮ সালের দিকে বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। সময় উভয় দেশ পরস্পরের পণ্যে শুল্কারোপ শুরু করে। এরপর বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের তোপের মুখে পড়ে চীন। এছাড়া চীনের বিরুদ্ধে গুপ্তচর বৃত্তিরও অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে বেইজিং তাইওয়ানকে নিজের অঞ্চল মনে করে। বেইজিং কোনো না কোনো দিন তাইওয়ানকে নিজের করে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অন্যদিকে তাইওয়ান যে কোনোভাবে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইছে। অধিকাংশ দেশের মতোই যুক্তরাষ্ট্রেরও তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিত কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে সম্প্রতি তাইওয়ানের বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ সম্ভবত চীনের শক্তি খর্ব করা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন