মহামারীতে মানসিক স্বাস্থ্যের ইতি-নেতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

বর্তমান মহামারী থেকে শারীরিকভাবে সুরক্ষিত রাখার মতো কঠোর পদক্ষেপ আমাদের মানসিকভাবেও দৃঢ় রাখতে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কভিড-১৯-এর প্রভাব নিয়ে প্রথম একটি অনুদৈর্ঘ্য গবেষণায় দেখা গেছে, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো পদক্ষেপগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে (পিএসইউ) ইমোশনস অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে অধ্যয়নরত জেসিকা মাইরিক বলেন, কভিড-১৯ সম্পর্কিত বার্তাগুলো জোর দেয় যে ছোট ছোট কাজও ব্যাপক কার্যকরী হতে পারে। যেমন নিয়মিত সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া কভিড-১৯ থেকে রক্ষার পাশাপাশি কিছুটা মানসিক চাপও কমিয়ে দেয়।

ধারণাটি মহামারীর শুরুতে চীনের একটি গবেষণা দ্বারা সমর্থিত। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, যারা হাত ধোয়ার মতো সতর্কতা অবলম্বন করেছে, তারা সামগ্রিকভাবে চাপ, উদ্বেগ হতাশার কম অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

মার্চের শুরুর দিক থেকে কভিড-১৯ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং লকডাউন, মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব পালন কোয়ারেন্টিনের মতো ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়। একই সময়ে চাকরি হারানো, খাদ্য ঘাটতি, বিদ্যালয় বন্ধ, বন্ধুবান্ধব পরিবার থেকে শারীরিক বিচ্ছিন্নতা এবং চারপাশে ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর সংখ্যার সঙ্গে মানুষের মানসিক চাপও বাড়তে থাকে।

পিএসইউর সমাজবিজ্ঞানী ইরিনা ম্যাকজর্জ বলেছেন, মহামারীর প্রথম সপ্তাহগুলোতে জীবনযাপন নিয়ে আমরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলাম সে সম্পর্কে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে এবং সংবাদগুলো পড়ে আমি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম।

ম্যাকজর্জ তার দল অনলাইন সমীক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪২ জন প্রাপ্তবয়স্ককে তাদের মানসিক চাপ, উদ্বেগ হতাশার মাত্রা এবং পাশাপাশি মহামারী-সংক্রান্ত নিয়মগুলো, তাদের মোকাবেলার কৌশল এবং তাদের বর্তমান আর্থিক, সামাজিক মানসিক অবস্থার ওপর সিরিজ প্রশ্ন করেছিল। মহামারীর শুরুর দিকে একই প্রশ্নগুলো তাদের তিনটি পর্যায়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। প্রথমবার এপ্রিলের শেষ দিকে, মে মাসের শুরুতে দ্বিতীয়বার এবং মে মাসের শেষ দিকে তৃতীয়বারের মতো প্রশ্নগুলো পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল।

সাধারণভাবে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি হালকা নেতিবাচক প্রভাব পেয়েছিলেন, যদিও কিছু গোষ্ঠী অন্যদের তুলনায় বেশি নেতিবাচক প্রভাব ভোগ করেছে। মহামারীর শুরুর দিকে তরুণ প্রাক-বিদ্যমান নেতিবাচক প্রভাবের মানুষজন সম্পূর্ণরূপে খারাপ মানসিক স্বাস্থ্যের কথা জানিয়েছে। দ্রুত তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি হয়েছিল।

তবে তরুণরা কভিড-১৯-এর কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হলেও তাদের মানসিক অবস্থা এতটা খারাপ কেন? গবেষকরা তাদের সামাজিক বন্ধন হ্রাস, স্কুল-কলেজ বন্ধ, খণ্ডকালীন বা নৈমিত্তিক কাজে পরিবর্তন এবং বয়সের সঙ্গে আসা আবেগগত কারণগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

ম্যাকজর্জ সতর্ক করেছেন, আমাদের মে মাসের গবেষণার চেয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাবগুলো এখন আরো বেশি হবে। বিশেষত যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, চাকরিবিহীন অবস্থায় আছেন বা জাতিগত কুসংস্কার বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

সায়েন্স অ্যালার্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন