গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে ধীরগতি

সংস্থাগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক

বাসাবাড়িতে গ্যাসের অপচয় রোধের লক্ষ্যে সরকার প্রি-পেইড মিটার চালুর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু কিছু প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ধীর হয়ে পড়ে কার্যক্রম। কারণে গ্রাহককে বাড়তি বিল গুনতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্যও বিদ্যমান। একটি অঞ্চলের গ্রাহককে দুই চুলার জন্য ৯৭৫ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে, আবার অন্য অঞ্চলের গ্রাহকরা প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে ৫০০ টাকা দিচ্ছেন। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারে প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় রোধের পাশাপাশি বকেয়া বিল বিল পরিশোধের জটিলতা থাকবে না। এর মাধ্যমে ব্যবহার অনুযায়ীই মূল্য দিতে হবে। নির্দিষ্ট মাত্রার ভূমিকম্প হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। মিটারে রিচার্জকৃত ক্রেডিট শেষ হয়ে গেলেও তাত্ক্ষণিকভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হবে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জরুরি ব্যালান্স দেয়া হবে, যা পরবর্তী রিচার্জের সময় সমন্বয় করা হবে। ব্যবহার করা গ্যাস মিটারসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য মিটারের এলসিডি ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত হবে। কন্ট্যাক্টলেস স্মার্ট কার্ডভিত্তিক উন্নততর একটি প্রযুক্তি হলো প্রি-পেইড গ্যাস মিটার। মিটারটি ব্যাটারিচালিত। এর মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রক ভাল্ব রয়েছে, যা গ্যাস সরবরাহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু বা বন্ধ করতে পারে।

নাগরিক সেবা খাত বিশেষত পানি, বিদ্যুৎ গ্যাসসেবা নিয়ে গ্রাহকের অন্তহীন ভোগান্তি পুরনো। করোনাকালে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল সেখানে কেবল নতুন মাত্রাই যোগ করেনি, বরং নতুন আপদ হিসেবেও দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তির সময়ে অ্যানালগ সেবার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। আবেদন গ্রহণ, বিল অভিযোগ প্রদানের মতো কিছু বিষয়ে অনলাইন সেবা চালু হলেও গ্রাহকের অভিযোগ কমেনি। আমরা দেখেছি বিদ্যুৎ গ্রাহকের মাত্র সাড়ে শতাংশ এবং গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকের মাত্র শতাংশ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছেন। প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে গ্রাহক তার প্রয়োজন অনুসারে রিচার্জ করে বিদ্যুৎ গ্যাস ব্যবহার করতে পারেন বলে একদিকে অপচয় রোধ হয়, অন্যদিকে মিটার দেখার জন্য অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করারও দরকার হয় না। গ্যাস বিদ্যুতের গ্রাহকের কিছু অংশ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এলেও পানির ব্যবহারে এখনো লাগেনি প্রযুক্তির ছোঁয়া। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অনীহা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের অভাবেই সেবা খাতকে প্রযুক্তিবান্ধব করার উদ্যোগে গতি মিলছে না। -সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নেয়া হলেও যখন আমরা দেখি তা বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে, তখন অভিযোগের সত্যতা খণ্ডন করা কঠিন। দুই বছর আগে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের তোড়জোড় থেমে যাওয়ার রহস্য বোঝাও কঠিন নয়। ব্যাপারে সেবা সংস্থাগুলোকে জবাবদিহি করতেই হবে।

দফায় দফায় বিদ্যুৎ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিও আমাদের দেখতে হয়েছে। বিদ্যুৎ গ্যাস শতভাগ প্রি-পেইড মিটারে এলে অনিয়ম সিস্টেম লস কমবে। এতে যেমন সেবার মান বৃদ্ধি পাবে, জনভোগান্তি কমবে, তেমনি বছর বছর মূল্যবৃদ্ধির বোঝাও গ্রাহকের ওপর চাপবে না। দীর্ঘদিন ধরে সেবা খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলে আসছে সরকার। সরকার ডিজিটালাইজেশনের কথাও বলে আসছে। তাই সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো কোনো রকম গড়িমসি ছাড়াই দ্রুত বাস্তবায়ন হতে হবে। সরবরাহ বিতরণ ব্যবস্থায় যুক্ত স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি তথা স্ক্যাডা সিস্টেম চালু করা দরকার। সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়েরও যথেষ্ট অভাবের কথা কারো অজানা নয়। উৎপাদন, সরবরাহ বিতরণের দায়িত্ব ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হওয়ায় গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়ে। অর্থ ব্যয় করেও নাগরিকদের যথাযথ সেবা না পাওয়ার অভিযোগ দুঃখজনক। এসব নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। জনবান্ধব সরকার প্রয়োজনীয় জনসেবা নিশ্চিত করবে, এটাই কাম্য।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আদেশে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের আদেশ জারি করে। কোম্পানিগুলোর ঢিলেমির কারণে গ্রাহকরা যাতে নিজেরা মার্কেট থেকে মিটার কিনে স্থাপন করতে পারেন, সেই সুবিধা উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু এর অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। আমরা চাইব সরকার প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বাড়িয়ে তুলবে। এতে গ্রাহক ভোগান্তি বহুলাংশে লাঘব হবে। প্রি-পেইড মিটারের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে আরো উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। গ্রাহককে কার্ড রিচার্জের জন্য নির্দিষ্ট অফিসে যদি যেতেই হয় তাহলে ভোগান্তি দূর হবে না। ইন্টারনেট বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই মিটারে কীভাবে রিচার্জ করা যায়, সে প্রযুক্তি রপ্ত করা যেতে পারে। তাছাড়া প্রতি ঘণ্টায় কত ইউনিট গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি ব্যবহার করছি, সেটি গ্রাহক যাতে মোবাইলের মাধ্যমে মনিটর ব্যাংকের কার্ড, মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে চার্জ পরিশোধ করতে পারেন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া, তার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে অর্থ সংগ্রহ থেকে সরকারের আনুষঙ্গিক ব্যয়ও কমে আসবে। ভোক্তাও ঝামেলা ছাড়া সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিলের চেয়ে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতে বেশি দৃষ্টি দিতে পারবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন