উইচ্যাটে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সাময়িক স্থগিত হতে পারে

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনভিত্তিক ইন্টারনেট কোম্পানি টেনসেন্ট হোল্ডিংস নিয়ন্ত্রিত মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সাময়িকের জন্য স্থগিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক চীনের নাগরিক এবং স্থানীয় ব্যবহারকারীর অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে এক মার্কিন বিচারকের মন্তব্যে এমন ইঙ্গিত মিলেছে। খবর ব্লুমবার্গ।

গত বৃহস্পতিবার এক শুনানিতে মার্কিন বিচারক লরেল বিলার বলেন, উইচ্যাট ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য অত্যন্ত অস্পষ্ট এবং তিনি উইচ্যাটের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিতে প্রাথমিক আদেশ দিতে প্রস্তুত আছেন। যদিও বিষয়টি ঘিরে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত ইস্যু করা হয়নি।

গত আগস্ট উইচ্যাট নিষিদ্ধে এক নির্বাহী আদেশে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই দিন আরেক চীনভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি বাইটডান্স নিয়ন্ত্রিত শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধে পৃথক একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি উইচ্যাট টিকটক। যে কারণে সেবা দুটির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন উইচ্যাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পরই সেবাটির বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী এর বিরোধিতা করেন এবং সানফ্রান্সিসকোতে জেলা মার্কিন আদালতে একটি প্রস্তাব দায়ের করেছিলেন। যেখানে উইচ্যাটের স্বতন্ত্র ব্যবহারকারী, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন গ্রুপের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বলা হচ্ছে, আগামীকালের মধ্যে মার্কিন কমার্স সেক্রেটারি উইলবার রস উইচ্যাট বিষয়ে বিস্তারিত বিধিবিধান প্রকাশ করবেন। যেখানে স্পষ্ট করা হবে উইচ্যাটের মাধ্যমে লেনদেন কীভাবে নিষিদ্ধ হবে।

উইচ্যাট এবং টিকটক ইস্যুতে এরই মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। যেখানে হুঁশিয়ার করা হয়, চীন তাদের দুই সেবাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো পদক্ষেপ নাকচ করতে সক্ষম। বেইজিংয়ের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় উইচ্যাট টিকটকের স্থানীয় কার্যক্রম নানা অজুহাত অপকৌশলে বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন, যা কোনো পরিস্থিতিতেই মেনে নেয়া হবে না।

চীনের দাবি, বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে প্রতিযোগিতা নয়; একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকা ফার্স্ট নীতি অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত হেনস্তার শিকার হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতি থামাতে একের পর এক অন্যায় অভিযোগ করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেক্কা দিতে সক্ষম সব চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন তথ্য নিরাপত্তার অভিযোগ তুলছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসার দিক থেকে দাবিয়ে রাখতে পরিকল্পিত ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

বেইজিংয়ের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অপকৌশলের জবাব দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ পন্থা চীনের হাতে রয়েছে। চীন প্রশাসন তাদের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু করলে তা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুব একটা ইতিবাচক হবে না।

টিকটকের ওপর শুধু নিষেধাজ্ঞাই নয়; একই সঙ্গে সেবাটির মার্কিন কার্যক্রম স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। কার্যক্রম সচল রাখতে এরই মধ্যে মার্কিন ক্লাউড কম্পিউটিং কোম্পানি ওরাকলের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে টিকটকের প্যারেন্ট কোম্পানি বাইটডান্স।

যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে মনে হলে চীনভিত্তিক সফটওয়্যার জায়ান্টগুলোর বিষয়ে আগামীতে ব্যবস্থা নেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তার ভাষ্যে উইচ্যাট টিকটক সরাসরি চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে তথ্য দিচ্ছে। যদিও চীন সরকারের সঙ্গে তথ্য শেয়ার বা চীন সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে উইচ্যাট টিকটক কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে মাইক পম্পেও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন চীনভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি বা তাদের সেবার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। ধরনের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করছে, যারা চীন সরকারের কাছে তথ্য পাচার করছে বলে আমরা মনে করছি। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মধ্যে রয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্যাটার্ন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের ঠিকানা, ফোন নম্বর কনট্যাক্ট।

টিকটক নিজেদের মার্কিন কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখতে ওরাকল করপোরেশনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে। বহুল আলোচিত চুক্তি পর্যালোচনা করা হবে বলে গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের উপদেষ্টা জারেদ কুশনার। টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম কিনতে একগুচ্ছ মার্কিন কোম্পানি রীতিমতো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল। শুরুতে বৈশ্বিক সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট অ্যাপটির যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম কিনতে আলোচনা শুরু করলেও পরে প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার। টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ওরাকল করপোরেশন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন