টানা চার মাস ধরে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রিতে ঊর্ধ্বগতি

মহামারী পরিস্থিতির মধ্যেও বাড়ছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রি। আগস্ট পর্যন্ত টানা চার মাসে দেশটিতে খুচরা বিক্রিতে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। দি অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) জানিয়েছে, জুলাই আগস্টের মধ্যে ব্রিটেনে খুচরা বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে শূন্য দশমিক শতাংশ। এক্ষেত্রে মহামারী ঘোষণার আগে ফেব্রুয়ারি থেকে বিক্রি বেড়েছে শতাংশ।

ওএনএসের উপাত্ত বলছে, আশার কথা হলো, খুচরা বিক্রি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এমনকি বিক্রি মহামারীপূর্ব অবস্থাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নতুন করে ঘর সাজানোর চাহিদার প্রেক্ষাপটে চাহিদা বেড়েছে গৃহস্থালি পণ্যের। পাশাপাশি চলতি মাসে কিছুটা পতন হলেও অনলাইনে পণ্য বিক্রি এখনো বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। ওএনএসের সহকারী জাতীয় পরিসংখ্যানবিদ জনাথন অ্যাথো বলেছেন, আগস্টে বিশেষ করে গৃহস্থালি ব্যয় বেশ শক্তিশালী ছিল। মহামারীপূর্ব ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় গৃহস্থালি পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে দশমিক শতাংশ। তবে লকডাউন-পরবর্তী পর্যায়ে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জুলাইয়ে খুচরা বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল দশমিক শতাংশ।

এদিকে আগের মাসের তুলনায় আগস্টে যুক্তরাজ্যে অনলাইনে বিক্রির পতন হয়েছে দশমিক শতাংশ। কিন্তু তার পরও মহামারীকালে দেশটিতে অনলাইনে কেনাকাটায় গ্রাহকসংখ্যা বাড়ছে। ফলে সব মিলিয়ে মাসটিতে ফেব্রুয়ারির তুলনায় অনলাইনে বিক্রি বেশি হয়েছে ৪৬ দশমিক শতাংশ। তবে গ্রাহকদের আগ্রহের কারণে অনলাইন বিক্রেতারা ভালো অবস্থানে থাকলেও সংকট পিছু ছাড়ছে না হাই স্ট্রিট বিক্রেতাদের। বহু হাই স্ট্রিট বিক্রয়কেন্দ্র দেশব্যাপী লকডাউন ভাইরাসসংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধ শিথিল করার পরও ঠিক আগের মতো ক্রেতা আকর্ষণ করতে পারছে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আগস্টে পোশাকের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোয় মহামারীপূর্ব ফেব্রুয়ারির তুলনায় বিক্রীত পণ্যের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক শতাংশ।

বিষয়ে অ্যাথো বলেন, লকডাউন শিথিল করা হলেও পোশাকের দোকানগুলো এখনো সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ তাদের বিক্রীত পণ্যের পরিমাণ এখনো ফেব্রুয়ারির তুলনায় নিচে রয়েছে। মূলত কেনাকাটায় ক্রেতাদের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে অনলাইনে বিক্রি বৃদ্ধি পেলেও হাই স্ট্রিট বিক্রয়কেন্দ্রগুলো তুলনামূলকভাবে চাপে রয়েছে।

দ্য ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের প্রধান নির্বাহী হেলেন ডিকিনসন বলেন, বিক্রির ক্ষেত্রে বর্তমানে মিশ্র অবস্থা চলছে। একদিকে যেমন অনলাইন বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, অন্যদিকে বিক্রিতে হতাশাজনক ফল দেখা গেছে সিটি সেন্টারের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোয়। এদিকে নতুন করে ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি কিংবা দ্বিতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা দেখা যাচ্ছে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে পুনরায় লকডাউনের শঙ্কা। অবস্থায় নতুন করে লকডাউন জারি করা হলে বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে সরকারকে স্পষ্ট নির্দেশনা প্রকাশ করতে হবে। তার মতে, বর্তমানে প্রকৃতপক্ষে বিক্রয়কেন্দ্রের মালিকরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ তারা মহামারীর সময় কেনাকাটা নিরাপদ করতে এবং ক্রেতাদের আকর্ষণে কোটি কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করেছেন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধিসংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পার্সপেক্স স্ক্রিন স্থাপনে তারা অর্থ ব্যয় করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা এমনকি লকডাউনের মধ্যেও কেনাকাটা নিরাপদ করেছেন।

আগস্টে সরকারের ইট আউট টু হেল্প আউট প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে সিটি সেন্টারগুলোয় কিছু ক্রেতা ফিরে এসেছেন। কিন্তু খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এক্ষেত্রে মাহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

তবে উদ্যোক্তা টেলিভিশন প্রোগ্রাম এক্স-ড্রাগনস ডেন তারকা থিও পাফিটিস বলেন, ক্রেতাদের মাঝে ঘরের বাইরে বেরোনোর ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। এক্ষেত্রে মেট্রোপলিটনের ভেতরের চেয়ে বাইরের এলাকার আমাদের ব্যবসা পরিস্থিতি এখন তুলনামূলক শক্তিশালী। বিষয়টি বেশ কৌতূহল উদ্রেককারী। বাস্তবে লোকজন তাদের পরিচিত এলাকার বাইরে খুব বেশি দূরে যেতে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে না। ফলে সবকিছু ঠিক আগের মতো আর হচ্ছে না। সত্যিকার অর্থেই মেট্রোপলিটন এলাকায় আমাদের দোকানগুলোর বিক্রি পরিস্থিতি আগের অবস্থায় পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।

অবস্থায় বেশকিছু হাই স্ট্রিট চেইন রিটেইলার আগস্টে তাদের কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। ব্যয়সংকোচন অর্থনৈতিক ক্ষতি সামাল দিতে মাসটিতে সাত হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয় এমঅ্যান্ড এস। একইভাবে স্যান্ডউইচ চেইন প্রেট ম্যানজার তিন হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়, যা প্রতিষ্ঠানটির মোট কর্মী সং্যখার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। তাছাড়া ডিপার্টমেন্ট স্টোর চেইন ডেবেনহ্যামস জানিয়েছে, তারা আড়াই হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে।

পিডব্লিউসির লিসা হুকার বলেন, আগামী ক্রিসমাস ব্রিটেনের খুচরা বিক্রেতাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিক্রেতারা আশা করছেন ফের লকডাউনের কারণে যেন এরই মধ্যে নাজুক অর্থনীতি আরো দুর্বল না হয়ে পড়ে। এমন হলে আরো বেকারত্বের পাশাপাশি সম্মুখীন হতে হবে ক্রেতাদের অবনমিত আত্মবিশ্বাসের।

বিবিসি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন