করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক সমালোচনা করে। কিন্তু আমি মনে করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং সেই সময় তাত্ক্ষণিকভাবে যে কাজগুলো করার দরকার ছিল, সেটা যথাযথভাবে করা হয়েছে বলেই কভিড-১৯ আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।

গতকাল গণভবন থেকে মন্ত্রণালয় বিভাগগুলোর ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) সই এবং এপিএ শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিকিৎসকদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমাদের সবসময় মাথায় রাখতে হবে প্রত্যেকেই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। অনেক ডাক্তার মারা গেছেন, নার্স মারা গেছেন, স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছেন। তারা কিন্তু সবাই কাজ করেছেন। আমাদের দেশে একশ্রেণীর লোক থাকে, তাদের সমালোচনাটা করাই অভ্যাস। পান থেকে চুন খসলে পরে অনেক কথা বলবে, কিন্তু নিজেরা কিছু করবে না।

তিনি বলেন, আমি তো বেসরকারি টেলিভিশন অনেকগুলো দিয়ে দিয়েছি। তারপর আছে বিদ্যুৎ। আর এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। তারাই একসময় সমালোচনা করেছিল। এখন সেই ডিজিটাল বাংলাদেশে বসে আমাদের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার তারা চালাতে থাকবে। সেটা বলুক।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমি মনে করি আমরা সঠিক পথে আছি কিনা এটা নিজের আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে। সবাই যখন কাজ করবেন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে করবেন। কে কী বলল, কে কী লিখলওর দিকে কান দিলে কোনো কাজ করতে পারবেন না। আপনার নিজের বিশ্বাস থাকতে হবে, নিজের ওপর আস্থা থাকতে হবে যে আপনি সঠিক কাজটি করছেন কিনা। যদি সেই আস্থাটা থাকে, তবে সেই কাজের ফল দেশবাসী পাবে। সেটাই আমি বলতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ আসবে, দুর্যোগের জায়গাই বাংলাদেশ। কিন্তু সেই দুর্যোগ মোকাবেলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের অর্থনীতি যেন বাধাগ্রস্ত না হয় বা গতিশীল থাকে, সেটা দেখতে হবে। আমরা যে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো দেয়া শুরু করলাম, এটা কিন্তু পৃথিবীর কোনো দেশ আমাদের আগে দিতে পারেনি। আমরাই প্রথম কিন্তু দিলাম। সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সবাই কাজ করেছে। প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় সাধারণত কিছু দিতে গেলে হাত টেনে রাখে। কিপটামি করে। কিন্তু এবারে কিন্তু কিপটামি করেনি। সবাইকে হাত খুলে যেখানে যেটা দরকার, আমরা দিয়েছি। সেভাবে দেয়া হয়েছে বলেই প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থেকেছে। আমাদের ডিজিপির প্রায় দশমিক শূন্য ভাগ আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ হিসেবে দিয়েছি। নগদ টাকা দিয়েছি। সরকারি টাকার বাইরে আমি নিজে অর্থ সংগ্রহ করে সহায়তা দিয়েছি। সময় করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে বিভিন্ন সহায়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ আমরা পালন করব কর্মসূচি নিয়েছিলাম কিন্তু আমরা যেভাবে করতে চেয়েছিলাম সেভাবে পারলাম না। সেই সঙ্গে সীমিত আকারে করলেও আমাদের লক্ষ্যটা হলো, আমরা আমাদের পার্টি থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা এক কোটি বৃক্ষরোপণ করব। আবার সরকারিভাবেও সিদ্ধান্ত দিয়েছি বৃক্ষরোপণের। পাশাপাশি প্রত্যেকটা গৃহহারা ভূমিহীন মানুষদের গৃহ নির্মাণ করে দেব। বিষয়ে অনুরোধ করব, যারা একেবারে ভূমিহীন, গৃহহীন তাদের আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। সবাইকে আমরা অন্তত একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেব। সে ব্যবস্থাটা আমাদের করতে হবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আল্লাহর রহমতে সেটা তো আমরা বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে পারব, বিশ্বাস আমার আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বহুদিন পর সবাইকে একসঙ্গে পেলাম। সে কারণে অনেক লম্বা ভাষণ দিয়ে ফেললাম। আমাদের কাজগুলোর জন্য, বিশেষ করে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি এবং তার সঙ্গে তার যে ফলাফল, এটা সাধারণ মানুষের কাছেই যাবে। মানুষই শুভ ফলটা পাবে। আর আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের পাশে থাকা। আমরা জনগণের ভোট নিয়ে এসেছি, আমরা মানুষের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আর আপনারা যারা চাকরি করেন, আপনারাও জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আপনাদের কিন্তু আমাদের চেয়েও অনেক বেশি সময় কাজ করে যেতে হবে। আপনাদের জনসেবা করতে হবে। জনসেবা করাটাই আপনাদের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমরা পেছনে ফিরব না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব এবং বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে তুলব। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

যারা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে আপনাদের শুদ্ধাচার বিষয়ে নিজস্ব একটা পরিকল্পনা নিতে হবে যে কীভাবে আপনারা কাজগুলো সম্পন্ন করবেন। আপনাদের সঙ্গে সঙ্গে তার নিচের স্তর পর্যন্ত পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং তা যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। যারা এটা কার্যকর করতে পারবেন, তারাই পুরস্কৃত হবেন।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন