হিলি, ভোমরা ও বেনাপোল স্থলবন্দর

ভারতীয় অংশে আটকা ৮৫০টি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক

বণিক বার্তা ডেস্ক

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন হিলি, ভোমরা বেনাপোলের আমদানিকারকরা। তিন স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের এলসি করা প্রায় ৮৫০টি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ভারতীয় অংশে আটক পড়ে আছে। এর মধ্যে ভোমরা স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশে ৫০০, হিলিতে ২৫০ বেনাপোলে ১০০ ট্রাক আটকা পড়েছে।

ভোমরা স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এলসি অনুযায়ী প্রায় ৫০০ ট্রাক পেঁয়াজ আটকা পড়েছে ভারতে। এরমধ্যে ২০০ ট্রাক ভারতের ঘোজাডাঙ্গা এলাকায় ৩০০ ট্রাক আটকে আছে নাসিক মহারাষ্ট্রে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী আমদানিকারকরা।

ভোমরা বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম মেসার্স গনি অ্যান্ড সন্সের ব্যবস্থাপক অশোক কুমার জানান, গত সোমবার পর্যন্ত পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করেছেন কেজিপ্রতি ৪৩-৪৪ টাকা দরে। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৫৮-৬০ টাকা কেজি দরে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১৪-১৫ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয় তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু গত সোমবার থেকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলে তার ছয়-সাত ট্রাক পেঁয়াজ আটকা পড়েছে ভারতে।

তিনি আরো বলেন, তার মতো অন্য আমদানিকারকদের অন্তত ২০০ ট্রাক পেঁয়াজ আটকে আছে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা এলাকায়।

ভোমরা কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, কোনো ঘোষণা ছাড়াই ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ভোমরা বন্দর ব্যবহারকারী অনেক ব্যবসায়ী চরম বিপাকে পড়েছেন পেঁয়াজের এলসি খুলে। এসব এলসির বিপরীতে পেঁয়াজের অন্তত ৫০০ ট্রাক আটকা পড়েছে ভারতের বিভিন্ন স্থানে।

এদিকে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক বাবলুর রহমান বলেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি দেখে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমরা বেশি পরিমাণে পেঁয়াজের এলসি খুলেছিলাম। যার বিপরীতে পেঁয়াজ লোডিং হয়েছে। আমার নিজের ৩০-৩৫ ট্রাক পেঁয়াজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে দেশে প্রবেশের অপেক্ষায়। অন্যান্য আমদানিকারকেরও একই অবস্থা। পেঁয়াজগুলো লোডিং কমপ্লিট হওয়ার পর আসতেই ছয়-সাতদিন সময় লাগে, পাঁচ-ছয়দিন ধরে পেঁয়াজগুলো ট্রাকে রয়েছে আবার তিনদিন ধরে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে নয়দিন হয়ে গেল। বর্ষার কারণে ট্রাকে ত্রিপল বাঁধা রয়েছে। কোনো হাওয়া-বাতাস ঢুকছে না। ফলে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, গত সোমবার অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। তবে ভারতীয় রফতানিকারকরা জানিয়েছিলেন, গত রোববার পর্যন্ত যেসব পেঁয়াজ রফতানির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা আছে সেগুলো তারা আজ (গতকাল) রফতানি করবেন। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় সেটাও সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, বর্তমানে হিলির স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশে ২৫০টি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আটকা রয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার টন পেঁয়াজের এলসি দেয়া রয়েছে। তার বিপরীতেও পেঁয়াজগুলো দেয়ার জন্য আমরা তাদের অনুরোধ জানিয়েছি। বিষয়ে তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে অচিরেই রফতানির ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

অন্যদিকে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আটকে পড়েছে শতাধিক পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক। এতে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট থাকায় দাম বেড়ে গেছে। অবস্থায় ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। ঘোষণার আগে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের আমদানি করা পেঁয়াজের চালান নিয়ে আসার সময় পেট্রাপোল বন্দরে আটকা পড়ে শতাধিক ট্রাক।

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারক খুলনার হামিদ এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি সরোয়ার জনি জানান, ওপারে শতাধিক পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে। যেগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু করতে পারছে না। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, নিষেধাজ্ঞার আগে পেট্রাপোল বন্দরে যেসব পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকের গেট পাস হয়ে আছে, সেগুলো বাংলাদেশে ঢুকবে। তবে যেগুলোর গেট পাস হয়নি, সেগুলো আমদানি করতে হলে নতুন যে মূল্য নির্ধারণ করা হবে, সে মূল্যে পেঁয়াজ নিতে হবে। রকম তথ্য আমাদের কাছে এসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন