ভাইরাসের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বাঁচতে শিখছে ইউরোপ

বণিক বার্তা ডেস্ক

মহামারীর প্রথম দিনগুলোতে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ফরাসিদের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু এখন তার বার্তাটি হলো ভাইরাসের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বাঁচতে শেখা। ফ্রান্সসহ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ থেকে সরে এসে স্নায়ুযুদ্ধের মাধ্যমে সহাবস্থানের পথ বেছে নিয়েছে। কারণ মহাদেশজুড়ে সংক্রমণ হ্রাসের পরিবর্তে বরং বেড়েই চলেছে এবং দ্বিতীয় ঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভাইরাস নির্মূল বা ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা নেই, তাই ইউরোপীয়রা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজে ফিরে গেছে এবং শিক্ষার্থীরা আবার বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে ইউরোপে দুই লাখের বেশি মানুষকে হত্যা করা স্থায়ী মহামারীর মধ্যে তারা সাধারণ জীবনযাপন করছে।

এদিকে একই পদ্ধতি প্রয়োগ করেও যুক্তরাষ্ট্রে বিপরীত ফলাফল দেখা গেছে। কারণ সেখানে ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষার বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে চালিত হয়েছে। অনেক অঞ্চলে সাধারণ প্রটোকলগুলোও অনুসরণ না করে বিদ্যালয়, দোকান রেস্তোরাঁ পুনরায় খুলে দেয়া হয়েছে। এজন্য দেশটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংক্রমণ মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে।

অন্যদিকে মহামারীর প্রথম থেকেই ইউরোপ সুরক্ষা বিষয়গুলো কঠোরভাবে মেনে চলছে। মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব অনুশীলন, পরীক্ষা ট্রেসিং এবং স্থানীয় প্রতিক্রিয়ার মতো বিষয়গুলো এখনো দৃঢ়ভাবে মেনে চলা হচ্ছে। এগুলো দৃঢ়ভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে বছরের শুরুতে অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়া লকডাউনের মতো ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে দেশগুলো। বেলজিয়ামের শীর্ষস্থানীয় ভাইরোলজিস্ট এমানুয়েল আন্দ্রে বলেছেন, এখন আমাদের ভাবতে হবে ভাইরাসটির সঙ্গে কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। আর এটা করার জন্য আমাদের কয়েকটি উপায় রয়েছে। মানুষ এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তারা আর ভাইরাসটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায় না।

ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে লকডাউন চাপিয়ে দেয়া ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্তো স্পেরানজা বলেছেন, আমরা এখন ভাইরাসের সঙ্গে বসবাসের পর্যায়ে আছি। আমরা আর লকডাউনের পথে যাচ্ছি না।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিশেষত ফ্রান্স স্পেনে নতুন সংক্রমণ বেড়েছে। ফ্রান্সে গত সপ্তাহে এক দিনে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছিল। সংক্রমণের এমন বৃদ্ধি অবাক করার মতো নয়, কারণ সপ্তাহে দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, যা একসময়ের প্রতিদিন শতাধিক বা হাজারের বেশি মৃত্যুর চেয়ে অনেক কম। এর কারণ হিসেবে বর্তমানে সংক্রমিতরা কম বয়সী এবং চিকিৎসকরা কভিড-১৯-এর আরো ভালো চিকিৎসা শেখার বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন মহামারীবিদ ফ্রান্সের সাবেক জাতীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।

জার্মানিতেও ক্রমবর্ধমান সংক্রমিতদের মধ্যে তরুণরা বেশি। দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শুরুতে নিশ্চিত হওয়া আক্রান্তের মধ্যে মাত্র শতাংশ রোগীর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। আর এপ্রিলে তীব্র সংক্রমণ চলাকালীন আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ২২ শতাংশ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল।

প্যারিসে ঘুরতে আসা উত্তর ফ্রান্সের একজন পুলিশ অফিসার জেরুম ক্যারিয়ার বলেন, মহামারীর প্রথমদিকে আমরা হতবাক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। তবে এখন আমরা সবকিছু মানিয়ে নিয়ে সাধারণ জীবনে ফিরে এসেছি।

নিউইয়র্ক টাইমস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন