করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক গতি ধরে রাখার চেষ্টা করছি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সরকার অর্থনৈতিক গতি ধরে রাখার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় সূচনা বক্তব্যে কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, নভেল করোনাভাইরাস আসার পর থেকেই একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বব্যাপী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তার পরও করোনাকে মোকাবেলা করে কীভাবে দেশের অর্থনৈতিক গতিটা অব্যাহত রাখতে পারি সে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষমতাসীন দলটির সংসদীয় বোর্ডের সভার পর এই প্রথম দলের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হলো গতকাল। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত সভায় দলটির সভাপতিমণ্ডলীর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য মোহাম্মদ নাসিম  সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে সভার শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দীর্ঘদিন পর আমাদের সভা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। ভাইরাস মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা অন্য যে দলগুলো দেখি তারা শুধু লিপ সার্ভিস দিয়েছে অর্থাৎ ওই মুখে মুখে কথা বলেছে। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, এনজিও-টেনজিও অনেকেই আছে। তাদের কিন্তু আমরা ওভাবে দেখিনি।

করোনার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগও মোকাবেলা করতে হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এমনই একটা অবস্থা, আমাদের শুধু যে করোনার জন্য সর্বনাশ হচ্ছে তা না, প্রাকৃতিক দুর্যোগও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা সেগুলো মোকাবেলা করতে পেরেছি। আশঙ্কা ছিল, বিশাল একটা বন্যা বা দীর্ঘস্থায়ী একটা বন্যা দেখা দিতে পারে। এখনো পানি আছে কিছু নদীতে, কিছু ভাঙনও হচ্ছে। এবার নদীভাঙনটা ব্যাপক হয়েছে। নদীভাঙনে কিছু এলাকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ একেবারে ঘরবাড়ি হারা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা একটা মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছি। বাজেট ঘাটতি এবার শতাংশ ধরেছিলাম। যদিও আমার সিদ্ধান্ত ছিল দরকার হলে ১০ শতাংশ ধরব। কিন্তু সেটা করতে হয়নি। কাজেই শতাংশের মধ্যে রেখেই আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকাটাকে সচল রাখতে পেরেছি। কারণ রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একমাত্র দল যার একটা ইকোনমিক পলিসি আছে, সেটাকে মাথায় রেখেই আমরা কিন্তু কাজ করে যাই। আমরা যেকোনো পদক্ষেপ নিচ্ছি খুব হিসাব করে। আমাদের পার্টির যে পলিসি সেটাকে মেনেই কিন্তু আমরা সব পদক্ষেপ নিচ্ছি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে দলটির সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে ২০১০ সালে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছিলাম ২০১০ থেকে ২০২০। এখন আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করে সেটাও গ্রহণ করেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে একটা বদ্বীপ। বদ্বীপের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আপনারা জানেন, আমরা নদী ড্রেজিংয়ের কথা সব সময় বলে আসছি। একটা সময় ছিল যখন বোধ হয় আমি আর মতিয়া আপা (মতিয়া চৌধুরী) ছাড়া আর কেউ ড্রেজিংয়ের কথা বলতই না। অনেক বিশেষজ্ঞরাও এটা নিয়ে তখন প্রশ্ন তুলত। আমরা কিন্তু সেই আগের দিনের ভাঙা রেকর্ডের মতো ড্রেজিং ড্রেজিং বলেই যেতাম। এখন প্রত্যেকে আমাদের পথে আসছে। এখন সেই বিশেষজ্ঞরাও বলে যে ড্রেজিংটা একমাত্র উপায়।

করোনাকালে কৃষিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই করোনা দেখা দিয়েছে, তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিআর কিছু না হোক আমাদের ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারণ আমি জানি, কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা দেখা দিতে পারে, দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ যেন খাদ্যে কষ্ট না পায়, সেজন্য ফসল উৎপাদন বাড়াতে সঙ্গে সঙ্গে সারের দাম আরো কমানো হলো। যেটা বিএনপির আমলে ৯০ টাকা ছিল, সেটা কমিয়ে এখন ১২-১৩ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন